রাষ্ট্রপতিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস
তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি ভারত যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে হায়দরাবাদ হাউসে বৈঠকের সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে এই আশ্বাস দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রত্যুত্তরে আবদুল হামিদও বলেন, তাঁরাও বিশ্বাস করেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এই দুই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশ তাদের পারস্পরিক বন্ধন ও ভরসাকে আরও মজবুত করে তুলবে।
ছয় দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত বৃহস্পতিবার ভারতে এসেছেন। শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও তিনি দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে। রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আবদুল হামিদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবদুল হামিদকে মমতা বলেন, সীমান্ত চুক্তিতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি চান, দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক। আজ শনিবার আবদুল হামিদ যাবেন আগ্রায়। রোববার জয়পুর ও আজমির শরিফ হয়ে সোমবার যাবেন কলকাতায়; সেখান থেকে শান্তিনিকেতন হয়ে তিনি ফিরে যাবেন ঢাকায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডিসেম্বরের মাসের গুরুত্ব উল্লেখ করে আবদুল হামিদকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বিজয়ের মাসে এমন দুজনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হলো, মুক্তিযুদ্ধে যাঁদের অবদান রয়েছে—জেনারেল জ্যাকব ও আবদুল হামিদ। আবদুল হামিদ মুক্তিযোদ্ধা। নরেন্দ্র মোদির কথার রেশ টেনে আবদুল হামিদ বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গোটা দেশেই গুজরাট মডেল ছড়িয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, মোদি ভারতের যুব সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
নরেন্দ্র মোদি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। আবদুল হামিদ বলেন, ভারত থেকে তাঁরা আরও বেশি বিদ্যুৎ পেতে আগ্রহী। নেপাল ও ভুটান থেকেও বাংলাদেশ যাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পেতে পারে, সে জন্য তিনি ভারতের সহযোগিতা চান। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই বৈঠকেই দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যটন উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী এ কথাও বলেন, সার্ক ও জাতিসংঘের আসরে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুবার অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। মাদকের হাত থেকে দেশের যুব সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য নরেন্দ্র মোদি যে আহ্বান জানিয়েছেন, আবদুল হামিদ তা সমর্থন করেছেন। সুষমা স্বরাজ আবদুল হামিদকে বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু ভারতের প্রতিবেশীই নয়, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। গত ছয় মাসে দুই দেশের মধ্যে যে কয়টি বৈঠক ও যোগাযোগ হয়েছে, তা খুবই সন্তোষজনক হয়েছে জানিয়ে সুষমা স্বরাজ বলেন, দুই দেশের মধ্যে আরও আদান-প্রদান বাড়ানো প্রয়োজন।
হায়দরাবাদ হাউসে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী, সাংসদ রেজওয়ান তৌফিক ও রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ আলতাফ আলী। ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন।
শেয়ার করুন