‘মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের এজেন্ট’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাদের দলের সবাই আওয়ামী লীগের এজেন্ট।’
সোমবারের হরতাল চলাকালে নোয়াখালীতে ইটের আঘাতে স্কুলশিক্ষিকার মৃত্যুর জন্য ‘সরকারি এজেন্টদের’ দায়ী করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ফখরুল প্রত্যেক দিনই মিথ্যাচার করেন। তিনি বলেছেন, এটা আওয়ামী লীগের এজেন্টদের কাজ। তাই যদি হয় তাহলে আমি বলবো, ফখরুলসহ বিএনপির সবাই আওয়ামী লীগের এজেন্ট। সোমবারের হরতালে মানুষ মারার কাজ ওই এজেন্টরাই করেছেন। ওই এজেন্টদের দিয়ে বিএনপির আন্দোলনে সফলতা আসবে না।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ।তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মসূচি মোকাবেলা করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। ছাত্রলীগের ওই কর্মসূচির কারণে খালেদা জিয়া গাজীপুরে যাওয়ারই সাহস পাননি। তিনি যদি সত্যিকারের নেতা হতেন তাহলে সেখানে যেতেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে বাধা দিত সেখানেই সমাবেশ করতেন। তা না করে হরতাল দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আমরা বারবার বিএনপিকে সংলাপের আহবান জানিয়েছি। কিন্তু তারা সংলাপে না এসে দিয়েছি আলটিমেটাম। গণভবনে যখন আসতে বলেছি, তারা দিয়েছে হরতাল-অবরোধ। কিন্তু এখন তারা সংলাপের জন্যে এতিমের মতো ঘুরছে। এখনতো আর কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নেই। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি এ সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে কোনো এক সময়ে নির্বাচন হবে।’
তোফায়েল বলেন, ‘এক মেজর চট্টগ্রামে বসে কি বললেন তাতেই দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। খালেদা বলেন, আমরা নাকি গঙ্গার পাড়ে বসে আনন্দ করেছি। আর তিনি যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে অফিসার মেসে। খালেদার পত্র তারেক পালিয়ে বিদেশ আছে। আমরা কিন্তু পালিয়ে থাকিনি। দেশে এসেছি। পুলিশ বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। দেশের রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বেড়েছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের চাহিদা পূরণ করে চাল এখন বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মাথাপিছু আয় এখন ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে ১২,০০ ডলারে পৌঁছেছে।’
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে এম এমদাদুল বারির সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন— আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেদ্রীয় সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, সুজিত রায় নন্দী, ফয়জুর রহমান বাদল এমপি, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি এমপি, আল মামুন সরকার প্রমুখ।
এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছেন। আর খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি মাসে রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। আমরা সকল অপরাধের বিচার করছি। ২০১৩ সালের শেষের দিকে তারা (বিএনপি-জামায়াত) যে পরিস্থিতি করেছিল সে অবস্থা আবারও করতে চাইছে। কিন্তু তা আর করতে দেওয়া হবে না। কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, তারেক বিদেশ থেকে আর খালেদা-ফখরুল দেশে বসে একই ভাষায় কথা বলছেন। দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করছেন। দেশে সুস্থ রাজনীতির চর্চার কারণে আজ তাদের বিদায় করতে হবে।
কামরুল বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আন্দোলনের নামে তারা সন্ত্রাস করে। আসলে বিএনপি ‘কাগুজে বাঘে’ পরিণত হয়েছে। আর সাংবাদিকরাই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কথা বলা অবৈধ-অসাংবিধানিক।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের হুমকির কাছে মাথা নত করে খালেদা জিয়া গাজীপুরে যাননি।উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১০ বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
শেয়ার করুন