আপডেট :

        সিকৃবিতে পাঠ্যক্রম অভিযোজন প্রশিক্ষণ

        জাতির পিতার আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে: গণপূর্তমন্ত্রী

        ভারতের গ্যাংস্টার রাজনীতিবিদ মুখতারের মৃত্যু

        প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আলোচনা ও ইফতার

        ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

        রাফাহ অভিযানের প্রস্তুতি ইসরায়েলিদের

        চারুপাঠের চিত্রাঙ্কন কর্মশালা অনুষ্ঠিত

        চীনা উদ্যোক্তাদের বস্ত্র-পাট খাতে বিনিয়োগের আহ্বান পাটমন্ত্রীর

        এফটিএক্স প্রতিষ্ঠাতার ২৫ বছরের কারাদণ্ড

        পুলিশের পক্ষ থেকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ

        বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চান ওবায়দুল কাদের

        ওসমানীনগরে বদর দিবস পালিত

        বাংলাদেশের কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান

        ট্রেনের টিকেটসহ কালোবাজারি গ্রেপ্তার

        ৪ বিভাগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা

        প্রকাশ পেল তুফান সিনেমার ফার্স্টলুক

        নিউইয়র্কে রাস্তায় আচমকা নারীদের ঘুষি মারছে অজ্ঞাতরা

        যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

        পাপারাজ্জিকে ঘুষি: টেলর সুইফটের বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

        দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, সাগরেই ৩৬ হাজার

গল্প: আত্মত্যাগীনী

গল্প: আত্মত্যাগীনী

ওর নাম ঋতু আগরওয়াল। মা বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বাবা মিনিষ্ট্রি অফ টেক্সটাইল- এর উচ্চ পদস্থ কর্মী। ঋতু একমাত্র সন্তান। দিল্লীতে ওরা একটি বিরাট বাড়িতে থাকে। ও এম. কম. ও সি. এ. পাশ করে ওর বাবার অফিসে চাকরি পেল। এর এক বছর পর ওর বিয়ে হল। পাত্র বিরাট ব্যবসাদার। পোশাকের এক্সপোর্টার। অফিসে আসা যাওয়া ছিল। সে সূত্রেই পরিচয়। প্রেম ও বিয়ে। এখানেও বিরাট বাড়ী আছে এদের বেশ কয়েকটি। দেশী - বিদেশী গাড়ীও আছে অনেকগুলো। একটি দেওর - সেও ব্যবসায় বসে। বিধবা মা। সে রিটায়ার্ড করেছে। প্রাইভেট স্কুলের টীচার ছিল। বরের বাবা অর্থাৎ এর পতিও ওই স্কুলেরই টীচার ছিল। সে দু ছেলের জন্মের পাঁচ বছর পর ক্যান্সারে মারা যায়। মা ছেলেদের বড় করে ও বিজনেস করায়। বড় বউ ঘরে এলো। শ্বাশুড়ি তার হাতে সংসারের চাবির গোছা তুলে দিয়ে সৎ সঙ্গের আশ্রমে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায়। ছেলেরা, বউ ও সে সবাই বাড়িতে তালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। চাবি আমার কাছে দিয়ে যেত। আমি ওদের পড়শী। বৃদ্ধার বালিকাবেলা পাকিস্তানের গ্রামে কেটেছে। তার বাবা পরে পুরো পরিবারকে নিয়ে এসে দিল্লীতে ভাড়া বাড়িতে থাকত। আর বাজারে নিজে পোশাকের দোকান খুলে বসে। পাকিস্তানের গ্রামে যখন ওরা থাকত তখন কাছের এক শহরে ওদের পোশাকের দোকান ছিল। বাবা রোজ বাইকে করে ওই দোকানে গ্রাম থেকে যাতায়াত করত। এখনও তাই সেই ব্যবসাই খুলল। এই বৃদ্ধা পাকিস্তান স্কুল ছেড়ে দিল্লীতে স্কুলে ও কলেজে পড়ে। ওরা আর কখনোই পাকিস্তান যায় নি। পরে ওর বাবা দিল্লীতে বাড়ি বানিয়ে সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস করত। আমাকে ও সেই সে পুরোনো দিনের পাকিস্তানের গল্প শোনায়। প্রায়ই নিজের বাড়ির রেখে যাওয়া চাবিকাঠি নিতে এসে আমার বাড়ির সোফায় বসে চা খায় ও এসব গল্প করে। বড় ছেলের বিয়ের পাঁচ বছর পর এক নাতী জন্ম নিল। তখন দাদীমা আর বাইরে সৎ সঙ্গে যেত না। তাকেই লালনপালন করে। নিজের ছেলের পাঁচ বছর বয়স হতে বড় দাদা ছোট ভাইয়ের বিয়ে দিল। ছোট ভাইয়ের বিয়ের এক বছর পর তার স্ত্রীকে ভাসুর বাজারে একটি বুটিক খুলে দিল। বিয়ের দুবছর পরে ভাদ্র বউয়ের একটি ছেলে হল। এর এক বছর পর বড় জায়ের আবার একটি ছেলে হল। তো ঠাকুমা এখন তিন নাতিকে বড় করতে থাকে। কয়েক বছর পর, হঠাৎ একদিন বড় বউ দেখে ফেলল যে তার বিছানায় তার বর ও ছোট জা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে শুয়ে আছে। দেওর সে সময় শ্বাশুড়ীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেছে। বাচ্চাদের সামনের পার্কে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও তো সেদিন হঠাৎই অফিস থেকে বাড়ি আসে, শরীরটা আচানক খারাপ হয়, খুব পাতলা পায়খানা শুরু হয়, অফিসে, তাই অসময়ে সে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আসে এবং এসে হাতেনাতে ধরে স্বামীর কুকীর্তি। পত্নী কিছুই বলল না। দু ছেলের সঙ্গে নিজের মায়ের বাড়ি চলে গেল। এখানে আর আসলো না। নিজের বিবির ও বড় দাদার এই ব্যভিচার সহ্য করতে না পেরে ছোট ভাই বেদম নেশা করতে থাকল। কয়েক বছর পর সে মুখের ক্যান্সারে মারা গেল। বিধবা ভাদ্র বৌ ও জা পরিত্যক্ত ভাসুর দুজনে মিলে বেশ মজার সঙ্গেই সংসার করল। মা তো অর্ধ পাগলিনী। বড় ছেলের এই দুর্মতী দেখে। ছোট ছেলের মৃত্যও বড় কষ্ট দিয়েছে। বড় বউয়ের সংসার ত্যাগও খুবই যন্ত্রণা দিয়েছে। এরপর কয়েক বছর কাটল, এক্সপোর্ট ব্যবসা শেষ হয়ে গেল। এক এক করে সব বাড়িও বিক্রী করে দিল, বড় ছেলে; সব গাড়ীও। এখন এক ভাড়া বাড়িতে সবাই থাকে। আর ছোট বউয়ের বুটিকের আয়ে সংসার চলে। বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি মারা গেল। এখন এক ছেলেকে নিয়ে ভাসুর ও ভাদ্র বৌ বেশ সুখে আছে। ওদিকে বড় জা, দু ছেলেকে নিয়ে মায়ের ঘর ছেড়ে অনেক দূরে  চলে গেল। সেখানে একটি বাড়ি কিনে তিনজন রইল। আমার সঙ্গে তার ফোনে কথা হত। আমি অবাক হতাম যখন ও ওর পতির কুশল সংবাদ আমার কাছে জানতে চাইত। আমি ওকে সেকেন্ড ম্যারেজ করতে বলি। কিন্ত ও বলে যে ও বেশ ভালোই আছে পতির দেওয়া দুছেলেকে নিয়ে। আর এক স্বামীর দরকার নেই ওর। স্ত্রী না হয়ে ও মা হয়েই খুব সুখী। আমি ঋতুকে মনে মনে নমস্কার জানাই।


শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত