কবিতা
শাশ্বত আলাপন
সৌমেন দাস
স্বাতী: উফ! ছাড়ো না কি করো!
এখনও কি মানায় এসব!
পুচুটা কেমন ড্যাব্ ড্যাব্ করে দেখছে!
দশ বছরের প্রেমেও কি মন ভরেনি?
প্রভাস: প্রেমের কি বয়স আছে প্রিয়ে?
তুমি পাশে থাকলেই কেমন বসন্ত আসে ধেয়ে!
ঐ পিপল গাছটায় চেয়ে দেখো,
বুড়ো পাতাগুলো-
কেমন কিশলয়ের সাথে গা দোলাচ্ছে।
হয়তো কাল ঝ'রে যাবে!
তবুও সমীরণের নব হিল্লোলে গা ভাসিয়েছে!
স্বাতী: এই শুরু করলে তো দর্শনের বুলি?
তোমায় নিয়ে পারি না বাপু!
এতো প্রেম এতো পাগলামি আসে কোথা হতে?
এখনও আমায় এতো ভালোবেসে যেত হবে?
প্রভাস: ভালোবাসা! সে তো দৈব!
তাঁর নেইকো কোনও শেষ।
"হৃদয়ে যদি তব পরশ না পাই,
মানিয়া লইবো!
দরশন নাহি মেলে তাহাও চলিব!
শুধু মন মাঝে উথলিও!"
স্বাতী: ভালো হচ্ছে না কিন্তু!
যেদিন তোমায় প্রথম দেখি-
সেদিন তো, একদম হাঁদা গঙ্গারাম ছিলে।
আচ্ছা প্রভাস,
তুমি কি সেই আগের মতোই ভালোবাসো?
বিরক্তি আসে না?
মনে আছে সেই লালবাঁধে-
দুটো পানকৌড়ি খেলা করছিলো?
একে অপরকে,
ডানার ঝাপটায় জলে ভিজিয়ে দিচ্ছিল!
বলেছিলাম, "পরের জনমে আমরা পানকৌড়ি হবো!
শালুক লতায় সাজাবো ঘর,
গড়বো নতুন প্রেমের উপকথা!"
প্রভাস: হমম্.....
ডুবকি দিয়ে আমি চুনো মাছ ধরে দেবো,
আর শ্যাওলা দিয়ে তুমি বাঁধবে চুলের খোঁপা!
ভীষণ ভয় ভয় হ'তো তখন?
কী জানি তোমায় পাবো কিনা!
মুঠোয় বন্ধ রক্তকরবীটা সেদিন,
ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম।
স্বাতী: তুমি ক্লাসে অমন চেয়ে থাকতে কেন?
বান্ধবীরা কত হাসাহাসি করতো!
আর আমার দিকে চকের টুকরো কে ছুঁড়তো?
জানতাম তুমি, আমারও ভালো লাগতো।
শুধু মুখ ফুটে কিছু বলিনি!
পরখ করতাম সত্যিই আমাকে ভালোবাসো কিনা!
প্রভাস: জানিনা!
তোমাকে দেখলেই কেমন শান্তি পেতাম।
একটা সারল্য খুঁজে পেয়েছিলাম তোমায় ঘিরে!
আমার মতো এমন বাউণ্ডুলের মনের ঘরে-
এমনি এক সঙ্গিনীর দরকার ছিল।
তুমি না থাকলে,
এমন সাজানো সংসার কেউ দিতো বুঝি?
তুমি সব দিকেই সুন্দর, পবিত্র তোমার মন।
সকলের কত্তো খেয়াল রাখো।
আর আমি সেই ভবঘুরে বাউণ্ডুলে!
স্বাতী: এতো গুণগান... থাক থাক!
এই মালাটা চিনতে পারছো!
তোমার দেওয়া প্রথম উপহার।
বিষ্ণুপুর মেলায় কিনে দিয়েছিলে।
এখনো এই টেরাকোটা-
প্রথম চুম্বনের শিহরণ জাগায়!
প্রভাস: সেই শ্যামরাইয়ের পাশে-
ফুটে ওঠা মাধবী ফুল,
আড়াল করেছিল আমাদের!
লাজেরাঙা তুমি শিমূল ফুলের মতো,
ছুটে গিয়েছিলে মন্দিরের নাটমঞ্চে।
কিন্তু মনেসংশয় ছিল! আর পাঁচটা-
প্রেমের মতোই নিস্ফল হয়ে যাবে না তো!
হয়তো দেবদাস হ'তে পারতাম না,
জীবনের অচেনা ছন্দে,
মানিয়ে নিতে হ'তো নিজেকে।
কিন্তু, আস্থা ছিল তোমার উপর,
তোমার ভালোবাসার উপর।
তাই হয়তো ভালোবাসাকে,
আজ নিজের আঙিনায় পেয়েছি।
স্বাতী: তোমার দেওয়া সোহাগ যেদিন মাথায় নিলাম!
সমস্ত মাথার ভার যেন-
এক নিমিষে হারিয়ে গেলো!
দু'চোখ ভ'রে শুধু আনন্দের জল বইতে লাগলো!
জীবনে সাধনার ব্রত যেন সম্পূর্ণ হলো।
আচ্ছা প্রভাস,
জীবনের সায়ংকালে এভাবেই পাশে থাকবে তো!
প্রথম যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলে....
সেভাবেই বুকে আগলে রাখবে তো!
প্রভাস: এভাবেই দু'জনে আবার,
শ্যামরাইয়ের মাধবীলতা হয়ে ফুটবো।
নতুন প্রেম সেদিনেও আসবে আবার!
কোনও ভালোবাসার চুম্বন হয়তো-
ছুঁয়ে যাবে তোমায় আমায়!
জেগে উঠবে আবার দৈবিক প্রেম।
তোমার মধ্যেই আমি প্রভাসিত হবো...
আর প্রভাসেই পরিচিত থাকবে স্বাতী।
জেগে উঠবে আবার নতুন প্রেমের বাতি।
শেয়ার করুন