দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট
করোনাভাইরাস: সত্যিই কি বায়োলজিক্যাল শীতল যুদ্ধ চালাচ্ছে তারা!
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে ব্যাপক তর্ক–বিতর্ক। এটি কি চীনের বায়োলজিক্যাল অস্ত্র নাকি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আর এতে যোগ দিচ্ছে অভিযুক্ত রাষ্ট্রগুলোই। পরস্পরের প্রতি এ অভিযোগ শীতল যুদ্ধের দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে পৃথিবীতে বায়োলজিক্যাল শীতল যুদ্ধ চালাচ্ছে তারা! কেউ একে ‘জীবাণু অস্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা’ বলে আখ্যায়িত করছে।
কারও অভিযোগ, করোনাভাইরাস চীন তৈরি করে ছেড়ে দিয়েছে। এতে চীনের দুটি লাভ। এক, হংকংয়ে বিক্ষোভ দমন করা। দুই, সারা দুনিয়ার অর্থনীতি ধ্বংস করে চীনা পণ্য দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া। একই সঙ্গে সারা বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কিছুদিন পর পাল্টা প্রচার দেখা যায়। এবার অভিযোগ আনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, চীনকে বিপাকে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা হলো চীনকে অর্থনৈতি ও সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল করা। এই প্রচার চীনের মানুষজন বিশ্বাস করছে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক এক কর্মকর্তা সর্বপ্রথম বলেন, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সামরিক গবেষণাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে ভুল করে ভাইরাসটি বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। চীন এই জৈবাস্ত্র তৈরি করেছে বিশ্ববাণিজ্য দখলে নিতে ও দুনিয়াজুড়ে নিজের কর্তৃত্ব বাড়াতে। তার সেই অভিযোগে একমত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি তো এটিকে ‘চীনা ভাইরাস’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।
আবার আরেক গ্রুপ বলছে, এই ভাইরাস বানিয়েছে যুক্তরাজ্য। তারা ব্রেক্সিটের পর চীনা বাজার যাতে উন্মুক্ত হয় তাই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
ইসরায়েলের সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ড্যানি শোহাম ‘কোভিড ১৯’ বা করোনাভাইরাসকে চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেন। চীনের জীবাণু যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, চীনের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই ইনস্টিটিউটের কিছু ল্যাবরেটরিতে চীনের নতুন নতুন জীবাণু অস্ত্র তৈরি এবং এসব অস্ত্র নিয়ে গোপনে গবেষণা করা হয়। সামরিক-বেসামরিক গবেষণার অংশ হিসেবে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে জীবাণু অস্ত্রের ওপর সেখানে কাজ পরিচালিত হয়।
খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এমনটা বিশ্বাস করেন। ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, করোনাভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী। এরপরই ট্রাম্পের সমর্থকেরা সরাসরি চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্র তৈরি করার অভিযোগ আনেন।
বাংলাদেশেও ব্যাপক চর্চা হচ্ছে এই বিষয় নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে অনেকে বলছেন, চীনারা খুব মেধাবী ও খারাপ। দুনিয়া দখল করার জন্য এই ভাইরাস তারা তাদের ল্যাবরেটরিতে তৈরি করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে দুষছে চীন ও ইরান। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে বাণিজ্যিক ও সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল করতে এই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। একজন চীনা কূটনীতিক এক টুইটে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। চীনের একাধিক বিজ্ঞানীও দাবি করছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি চীনে শুরু হলেও এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হয়নি।
শুধু চীন নয়, ইরানের সরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশটির সাধারণ মানুষ পর্যন্ত দাবি করছেন, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। ৫ মার্চ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চীনে এবং পরে ইরানের বিরুদ্ধে ‘জীবাণু অস্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা’ চালিয়েছে। এর পরদিন ৬ মার্চ ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে বলেন, ‘ট্রাম্প ও পম্পেও করোনা নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন...। এটা কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটা ইরান ও চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্রের হামলা।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা চীন ও ইরানের অভিযোগ রাশিয়ার গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। রাশিয়ার গণমাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দায়ী করা হচ্ছে। তাদের স্পুতনিক রেডিওতে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বাধ্য করতে ব্রিটেন এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। দ্য বিগ গেম নামে রাশিয়ার একটি জনপ্রিয় টিভি টকশোতে ইগর নিকুলিন নামের রুশের একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য করোনা “অস্ত্র” তৈরি করেছ।’ তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের পোর্টান ডাউনে একটি গবেষণাগারে বহু দিন ধরেই নানা জীবাণু এবং রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে।
আসলেই কি কেউ বনিয়েছে এই ভাইরাস? যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত তিনজন বিখ্যাত গবেষকের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, এই ভাইরাস চীনের উহানের স্থানীয় পশুর মার্কেট থেকে ছড়িয়ে পড়েছে, এখন পর্যন্ত এটাই প্রমাণিত।
পরষ্পরে দুষারোপের এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের যে জিন রহস্য (জীবন রহস্য), তা পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, এটি গবেষণাগারে তৈরি কোনো ভাইরাস নয়। আর এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার অনির্ভরশীল সূত্র থেকে তথ্য নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
শেয়ার করুন