আপডেট :

        ধর্ষকের শাস্তি সবার সামনে হোক: সোহম

        বায়ার্নের দাপটে বিদায় ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গো, পিএসজির মুখোমুখি কোয়ার্টারে

        ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনা: কে দায়ী?

        ইরানের কঠোর হুঁশিয়ারি: ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি

        এশিয়া কাপের সম্ভাব্য সূচি জুলাইয়ে প্রকাশিত হবে

        সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ: জুলাই সনদ প্রকাশ করবে এনসিপি - নাহিদ ইসলাম

        রথযাত্রার উৎসবে বিপর্যয়: উড়িষ্যায় ভিড়ে পিষ্ট হয়ে ৩ মৃত, ১০ জন আহত

        মনু মিয়ার শেষ বিদায়ে অভিনেতা খায়রুল বাসারের মানবিকতার জয়

        মেসি-রোনালদো: সময় পেরিয়েও অপ্রতিরোধ্য ফুটবলের দুই কিংবদন্তি

        মুরাদনগরের অশান্তির জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতারা দায়ী: আসিফ মাহমুদ

        ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে পাকিস্তানে দুইবার কাঁপল ধরিত্রী

        হিরো আলমের যত্নে রিয়া মনি, প্রকাশ করলেন তার শারীরিক অবস্থা

        হাছিনা নয় শেখ হাসিনা নয়, তবুও বারবার বদলাচ্ছে স্কুলের নাম

        জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি টাকা

        কোকেন উৎপাদনে ঐতিহাসিক উচ্চতা, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উদ্বেগ

        ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক জোরদারে প্রস্তুত পুতিন, নতুন যোগাযোগের আভাস

        স্বর্ণের বাজারে ধস: এক মাসে সর্বনিম্ন দামে পৌঁছাল হলুদ ধাতু

        সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, ৩০০ গাড়ি অপেক্ষায়

        ট্রাম্পের দাবি: খামেনির প্রাণ বাঁচিয়েছি, ধন্যবাদ পাইনি

        এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা: কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে নতুন নিয়ম

২০২৩-এর আলোচিত ১০ ঘটনা

২০২৩-এর আলোচিত ১০ ঘটনা

ভূমিকম্পের ঘনঘটা

চলতি বছর অনেকগুলো ব্যাপক মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। প্রথমেই আসে তুরস্কে ৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া ৭.৮ মাত্রার প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের কথা। এতে ৫০ হাজারের ওপর মানুষ প্রাণ হারায়। তুরস্কের বিশাল এলাকা জুড়ে ভূকম্পন টের পাওয়া যায়। কয়েক মাস পর্যন্ত এর আফটার শক অনুভূত হয়।

তুরস্ক ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশে আঘাত হানে ভূমিকম্প। ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোর আল হুজে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ। আফগানিস্তানের হেরাতে ৭ অক্টোবর ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় দেড় হাজার মানুষ। এছাড়া চীন ও ফিলিপাইন ছাড়াও এশিয়ার কয়েকটি দেশে বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, যাতে প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

চীনকে টপকে শীর্ষ জনবহুল ভারত

যুগ যুগ ধরে চীন বিশ্বের এক নম্বর জনবহুল দেশ ছিল। কিন্তু সেই জায়গাটিতে এবার উঠে এসেছে ভারত। ইউএনএফপিএর দেওয়া তথ্যমতে এ বছর মাঝামাঝি সময়ে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১.৪২৮ বিলিয়ন আর চীনের ১.৪১৮ বিলিয়ন। চীনের থেকে ভারতের লোকসংখ্যা ২৯ লাখ বেশি ছিল। জনসংখ্যা তত্ত্ববিদদের মতে, ভারতের এই অবস্থা কয়েক দশক অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে চীনের সংখ্যা চলতি শতাব্দির মধ্যভাগে ১ বিলিয়নে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৯৫০-এর দশকে চীনের জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল। ১৯৯০ এর দশকে এর গতি কমে আসে।

চীন-মার্কিন সম্পর্ক

বছরের শুরু থেকে মনে হচ্ছিল চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথেই এগোবে। বেলুন নিয়ে বছরের গোড়ার দিকে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হলেও এ নিয়ে উত্তেজনা আর বাড়েনি। তবে তাইওয়ান ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট উষ্ণ হতে পারেনি। তাইওয়ান ও ফিলিপাইনকে হয়রানির অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন জুনে চীন সফর করেন। আসছে ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার দেশটিতে যাবেন। ১৫ নভেম্বর সানফ্রান্সিসকোতে বাইডেন ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক হয়। তবে বাণিজ্য ইস্যুতে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে বরফ গলেনি বলেই জানা গেছে।

পুনর্নির্বাচিত এরদোয়ান

তুরস্কে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প সত্ত্বেও সময় মতোই নির্বাচন হয়। ভূমিকম্পের ঠিক তিন মাসের মাথায় নির্বাচন সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পশ্চিমা গণমাধ্যম সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধীদের সহায়তা করে। তারা দেখানোর চেষ্টা করেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ উভয় পক্ষের জন্য সমান নয়। তবে মে মাসের নির্বাচনে নানা দুর্বলতা সত্ত্বেও এরদোয়ান পুনর্নির্বাচিত হন। ২৮ মে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে তিনি ৫০ শতাংশের ওপর ভোট পান। বিরোধীরা জোট বেঁধেও তার এই জয় ঠেকিয়ে দিতে পারেনি।

প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিকদারোগ্লু নিজেকে যেভাবে পশ্চিমাপন্থি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সেটি ভোটের মাঠে তার বিপক্ষে য়ায়। কারণ সাধারণ ভোটারদের অনেকে চায়নি তুরস্ক কোনো একটি পক্ষে ঢুকে পড়ুক। দেশটি দীর্ঘ সময় পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। এরদোয়ান সেখান থেকে তার দেশকে বের করে এনে একটি নতুন পরিচয়ে দাঁড় করিয়েছেন। নতুন সরকার গঠনের সময় তিনি যেভাবে মন্ত্রিসভা ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করেন সেখানেও অনেক চমক ছিল বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

যুদ্ধে বড় সফলতা পায়নি ইউক্রেন

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তা এবছরও অব্যাহত থাকে। এ বছর বড় কোনো সাফল্য জোটেনি ইউক্রেনের। ছোট ছোট যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে তার জন্য অনেক বড় মাশুল দিতে হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রধান নভেম্বরে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এ কথা স্বীকারও করেছেন। মে ও জুন মাসে ইউক্রেন জোরেশোরে আক্রমণ চালিয়ে রুশ বাহিনীকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিল। এছাড়া সারা বছর বলতে গেলে ইউক্রেনের অর্জন তেমন কিছু নাই। অন্যদিকে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কিও কূটনৈতিকভাবে ক্রমেই একা হয়ে পড়েছেন। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। কিয়েভকে বিশাল অঙ্কের এক আর্থিক সহায়তা বিল মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের আপত্তির মুখে আটকে যায়।পাকিস্তানের অর্থনৈতিক

সংকট

পাকিস্তান আরো একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটময় সময় পার করে এ বছর। চলতি বছর মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দর ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। জানুয়ারিতে বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। অক্টোবরে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ২৭ শতাংশে পৌঁছে। অন্যদিকে মে মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তি পাননি। আগস্টে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সেই তারিখে নির্বাচন হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ অক্টোবরে চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন শেষে দেশে ফেরেন।

গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ

ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত গাজা ভূখণ্ড ইসরায়েলের বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত ও রক্তস্নাত হয়েছে এ বছর। ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সহস্রাধিক লোককে হত্যা ও শতাধিক ব্যক্তিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এরপর আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে বেসামরিক অবস্থানের ওপর হামলা শুরু করে। সেখানে পানি, বিদ্যুত্, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ। ইসরায়েল বলেছে, বন্দিদের ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত এগুলো চালু করা হবে না। গাজা পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে।

১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ৫০ বছরে এত ব্যাপক লড়াই আর হয়নি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে ছিলেন সেটা কেটে যায়। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে গাজায় বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রাখেন বছরের প্রায় শেষ পর্যন্ত। কাতারের মধ্যস্থতায় মাঝে এক সপ্তাহের মতো অস্ত্রবিরতি হলেও সেটা স্থায়ী হয়নি।

আফ্রিকায় সামরিক অভ্যুত্থান

মধ্য ও সাব-সাহারান পাঁচটি দেশে এ বছর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। দেশগুলো হলো নাইজার, সিয়েরা লিয়ন, গ্যাবন, বুরকিনা ফাসো ও গিনি বিসাও। এছাড়া সুদানে নতুন করে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। সবকিছু মিলে মহাদেশটিতে গণতন্ত্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রুশ মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের মৃত্যুর পর জানা গেছে, সাব-সাহারান দেশগুলোতে তারা কতটা প্রভাবশালী ছিল। লক্ষণীয় যে, সামরিক অভ্যুত্থানগুলোকে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। কারণ সাবেক ফরাসি ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে নির্বাচিত নেতাদের বেশির ভাগ জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে সাবেক ঔপনিবেশিক শাসকদের স্বার্থ প্রাধান্য দিতেন।

আজারবাইজানের নগর্নো কারাবাখ দখল

সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের তিন দশক পরও এর আফটার শক মিলিয়ে যায়নি। আর্মেনীয় অধ্যুষিত আজারি ছিটমহল নগর্নো কারাবাখ এখন পুরো আজারবাইজানের অংশ। জাতিগত আর্মেনীয়রা এর বাসিন্দাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এটি আজারবাইজানের সঙ্গে যোগ দিতে গররাজি ছিল। ১৯৯১ সালে নগর্নো কারাবাখ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৯৯৪ সালে ঐ যুদ্ধ শেষ হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এ বছর সেপ্টেম্বরে আজারবাইজান ফের হামলা চালিয়ে ছিটমহলটি অধিগ্রহণ করে নেয়। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইউক্রেন যুদ্ধ আজারবাইজানকে এই সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে থাকতে পারে।

বেলুনের চমক

ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের একটি বেলুন ভূপাতিত করার পর বিষয়টি সবার মনোযোগ আকৃষ্ট করে। কয়েক স্থানে বেলুন সদৃশ বস্তু ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কর্তৃপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত রাখে এই বেলুন। চীন অবশ্য আকাশে বেলুন পাঠানোর কথা স্বীকার করে বলেছে, এগুলো ওয়েদার বেলুন, আবহাওয়া সম্পর্কিত উপাত্ত জোগাড় করাই উদ্দেশ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৬ ফেব্রুয়ারি বলেন, ‘বেসরকারি কোম্পানির তৈরি করা বেলুনগুলো সম্ভবত বিনোদন অথবা গবেষণামূলক কাজের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে’। এগুলো চীনের গোয়েন্দা কর্মসূচির অংশ নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তিনি একথাও বলেন যে, ‘বেলুনগুলো আমেরিকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হলে আমরা তা ফেলে দিব’। যাই হোক, এ নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো টানাপোড়েন তৈরি হয়নি। ২০০ ফুট দীর্ঘাকায় বেলুনগুলো ৬০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৫ হাজার মাইল পরিভ্রমণ করতে পারে।

 এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত