একটি ফ্লাইটে গুরুতর টার্বুলেন্সের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি
লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইটে গুরুতর টার্বুলেন্সের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। এতে একজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিমানটি চলাচলের সময় আকস্মিকভাবে গতিবিধিতে ছন্দপতন হয়। এতে তীব্র ঝাঁকুনিতে ছিটকে কেবিনে থাকা যাত্রী ও অন্যান্য জিনিসপত্র। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিমানটিকে জরুরি অবতরণ করা হয় ব্যাংককে।
আলোচনায় এখন ফ্লাইট টার্বুলেন্স। কি এই টার্বুলেন্স?
বিমানে যারা যাতায়াত করেন তাদের কাছে হঠাৎ ঝাঁকুনির মতো পরিস্থিতি অনেকটাই পরিচিত। কোনো বিমান টার্বুলেন্সের মুখোমুখি হলেই এমনটা হয়ে থাকে। এটি বিমানের গতিবিধি ও উচ্চতায় আকস্মিক পরিবর্তন আনে।
রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সাবেক অফিসার ও বিবিসি ওয়েদারের সাইমন কিংয়ের মতে, বেশিরভাগ টার্বুলেন্স ঘটে থাকে মেঘযুক্ত এলাকায়। কারণ এমন এলাকায় ওপর ও নিচ থেকে বাতাসের চাপ থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাসের এই চাপ মোটামুটি হালকা থাকলেও বড় মেঘের ক্ষেত্রে বাতাসের প্রবল গতিবিধি মাঝারি বা গুরুতর টার্বুলেন্স সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও ‘ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স’ নামে পরিচিত আরেকটি ভিন্ন ধরনের টার্বুলেন্স রয়েছে। যেটি মেঘের উপস্থিতি ছাড়াই তৈরি হতে পারে। শনাক্ত করা কঠিন বলে এটি বেশ বিপজ্জনক।
এভিয়েশন অ্যাকাডেমিক ও কমার্শিয়াল পাইলট গাই গ্র্যাটন বলেন, ‘এই ধরনের টার্বুলেন্স জেট স্ট্রিমিংয়ের আশেপাশে ঘটে। দ্রুতগতিতে প্রবাহিত বাতাসের এই স্রোত সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ হাজার ফুট উচ্চতায় পাওয়া যায়।’
গাই গ্র্যাটন আরও বলেন, ‘আপনি সহজেই জেট স্ট্রিমের বাতাস ও আশপাশের বাতাসের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মিটারের গতির পার্থক্য পাবেন। ধীর ও দ্রুত প্রবাহিত বাতাসের মধ্যে জেট স্ট্রিমের চারপাশে ঘর্ষণ টার্বুলেন্স সৃষ্টি করে। এটি একেক দিকে চলে যায়, যা এড়ানো কঠিন।’
গ্র্যাটন জানান, আপনি যদি ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় বিমানে যান, তবে এমনটা সম্পূর্ণরূপে এড়ানো কঠিন। এর ফলে তীব্র টার্বুলেন্সের সৃষ্টি হতে পারে।
টার্বুলেন্স কতটা বিপজ্জনক?
ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটির অ্যাভিয়েশন এন্ড দ্য এনভাইরনমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক গ্র্যাটন বলেছেন, ‘টার্বুলেন্স যতটুকু খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে সেটি সহ্য করার মতো করেই বিমানগুলোকে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই এর কারণে বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
তবে টার্বুলেন্স একটি বিমানের জন্য বেশ অস্বস্তির কারণ। তাই পাইলটরা এটি এড়িয়ে যাওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চরম পরিস্থিতিতে টার্বুলেন্স একটি বিমানের কাঠামোগত ক্ষতি করতে পারে। এটি নির্ভর করবে বাতাস কতটা শক্তিশালী হতে পারে তার ওপর।
তীব্র টার্বুলেন্স বিমানের যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ এর আকস্মিক গতি পরিবর্তনে কেউ সিটবেল্ট না পরলে কেবিনে আছড়ে পরতে পারেন। তবে এভিয়েশন সেইফটি এক্সপার্টদের মতে, টার্বুলেন্স ফলে মৃত্যু কিংবা আহত হওয়ার ঘটনা বিরল।
এদিকে জন স্ট্রিকল্যান্ড নামের এক অ্যাভিয়েশন এক্সপার্ট জানান, লাখ লাখ ফ্লাইটের বিপরীতে গুরুতর টার্বুলেন্স থেকে মৃত্যুর ঘটনা ‘তুলনামূলকভাবে বিরল’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইউএসভিত্তিক এয়ারলাইনগুলিতে ১৬৩টি ‘গুরুতর টার্বুলেন্স’ আঘাত হেনেছে। যা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১২টি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন