দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে, এই সরবরাহের জন্য ইউক্রেনকে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার সমাধান এখনো বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
একটি অস্ত্র প্যাকেজের অংশ হিসেবে জয়েন্ট এয়ার-টু-সার্ফেস স্ট্যান্ড অব মিসাইলস (জেএএসএসএম) অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও গৃহীত হয়নি। এই বিষয়ে কথা বলার অনুমতি না থাকায় সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের নাম প্রকাশ করা হয়নি। জেএএসএসএম ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের কাছে সরবরাহ করা হলে তা সংঘাতের কৌশলগত অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ এটি রাশিয়ার অধিকাংশ এলাকাকে শক্তিশালী ও নির্ভুল-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের আওতায় নিয়ে আসবে। বাইডেন প্রশাসনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেএএসএসএম গোপনভাবে কাজ করতে পারে এবং ইউক্রেনের বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে অনেক দূরে আঘাত হানতে সক্ষম। এতে রাশিয়ার আক্রমণাত্মক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে এবং ইউক্রেনের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি হবে।
ইউক্রেনের উত্তর সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হলে রাশিয়ার ভোরোনেঝ ও ব্রায়ানস্কের মতো শহরগুলোতে সামরিক স্থাপনা আঘাত হানতে সক্ষম হবে। দক্ষিণাঞ্চলে এটি যুদ্ধের সামনের সারি থেকে ক্রিমিয়ায় বিমানঘাঁটি বা নৌবাহিনীর স্থাপনাগুলোতেও আঘাত হানতে পারে। জেএএসএসএম এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ডিজাইন করা বিমানগুলোতেই একীভূত হয়েছে। ইউক্রেন ভবিষ্যতে বেশ কয়েকটি এফ-১৬ চালাবে, যার প্রতিটিতে দুটি করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করার ক্ষমতা থাকবে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনের মজুদে থাকা সোভিয়েত আমলের মিগ-২৯, এসইউ-২৪ এবং এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে কার্যক্ষম করার চেষ্টা চলছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। গত মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছিল, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে জেএএসএসএম দেওয়ার বিষয়ে উন্মুক্ত ছিল।
ইউক্রেনের আরও অস্ত্র এবং আরও শক্তিশালী অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ তারা পূর্ব ফ্রন্টে রুশ বাহিনীর তীব্র চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। লকহিড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি পুরানো মডেলের জেএএসএসএমগুলোর প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৩ মাইল) পর্যন্ত আঘাতের কার্যক্ষমতা রয়েছে। জেএএসএসএম-এর একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে, যা ৮০০ কিলোমিটার (প্রায় ৫০০ মাইল) দূরত্ব পর্যন্ত উড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র কোন মডেলটি ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে যাচ্ছে তা এখনও পরিষ্কার নয়, তবে স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে মার্কিন অস্ত্র মজুদের ওপর চাপ কম পড়বে।
জেএএসএসএম ইউক্রেনকে দেওয়া হলে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার চাপও বাড়তে পারে। কারণ এটি শুধু রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে অনুমতি পেলেই কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কংগ্রেসের কর্মী জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন এ নিয়ে আলোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র সরবরাহ করতে এখন পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, কারণ এতে সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিটি জেএএসএসএম ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন প্রায় ৪৫৩ কিলোগ্রাম (১,০০০ পাউন্ড) এবং এটি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং একটি অভ্যন্তরীণ নেভিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যেসব স্থান থেকে আগের মডেলগুলোর কার্যক্ষমতা কিছুটা কম ছিল, সেখানে জেএএসএসএম-এর ইনফ্রারেড ইমেজিং সিকার যেকোনো অবস্থানে আঘাত হানতে সক্ষম হবে।
এদিকে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মধ্যাঞ্চলীয় শহর পোলতাভায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত এবং ১৮০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের এই হামলাটি যুদ্ধের সবচেয়ে প্রাণঘাতী আক্রমণগুলোর একটি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, রুশ বাহিনী দুটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এর ফলে সামরিক যোগাযোগ ইন্সটিটিউটের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার পরপরই একটি পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে জেলেনস্কি বলেন, এই হামলার জন্য রুশ বর্বরদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করতে পশ্চিমাদের আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন