শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী যখন খুনের আসামি!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরের সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা গেছে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে।
তিনি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। এফবিসিসিআইর পরিচালক ইমরান কুমিল্লা চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য।
ইমরান কুমিল্লা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি এবং এই জেলায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আফজাল খানের ছেলে।
গত বছরের এপ্রিল মাসে ছাত্রলীগের কুমিল্লা শহর শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম খুন হওয়ার পর যে মামলাটি হয়, তাতে ইমরান ও তার ভাই নসরুল্লাহ আরমান খানও আসামি।
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মামলাটিতে ইমরান এক নম্বর আসামি।
ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
দেড় বছরেও আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষুব্ধ সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির কুমিল্লার নেতারা।
কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে আসামিরা ঘোরাফেরা করছে, অথচ তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের সফরে থাকা ইমরানকে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে।
তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধি কার্ড নিয়ে দর্শক সারিতে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। অধিবেশন কক্ষে সেলফিতেও দেখা গেছে ইমরানকে।
ইমরানের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে দেখা গেছে সাইফুল হত্যাকাণ্ডের আরেক আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান পিন্টুকেও।
কুমিল্লা আওয়ামী লীগে আফজাল খান ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্বে সাইফুল সংসদ সদস্য বাহারের সমর্থক ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
ইমরানের তৎপরতা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নে সংসদ সদস্য বাহার বলেন, “নেত্রী কিংবা সজীব ওয়াজেদ জয় তো আর তার (ইমরান) রেকর্ড জানেন না, জানে তো কুমিল্লার লোকজন। নেত্রী তো আর এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়েন না, সে (ইমরান) হয়ত ওই বিমানে উঠে পড়েছে।”
খুনের মামলার প্রধান আসামি ইমরানের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার তদন্তকারী সিআইডির কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
গত বছরের গত ১১ এপ্রিল কুমিল্লা ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠান ছিল, সেদিন ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ ওই অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা করলে তার বিপক্ষে সাইফুল অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছিল।
এরপর কান্দিরপাড়ে পূবালী চত্বরে চা খাওয়ার সময় সাইফুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরদিন হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে।
এ ঘটনায় ১৩ এপ্রিল কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম রিন্টু মামলা করেন। এতে ইমরানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
ইমরানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। একটি অস্ত্র মামলায় সাজা হলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন তিনি। একটি অপহরণ মামলায় তার জামিন রয়েছে।
তবে সাইফুল হত্যামামলায় তার জামিনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইমরান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল খান কুমিল্লায় নানা ঘটনায় বিতর্কিত।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হেরে যান আফজাল।
কুমিল্লা আওয়ামী লীগে বাহারের সঙ্গে আফজালের দ্বন্দ্ব বহু দিনের। আফজাল দশম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পাওয়ার পর বাহারের বিরুদ্ধে ইমরান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
শেয়ার করুন