আপডেট :

        প্রকাশ পেল তুফান সিনেমার ফার্স্টলুক

        নিউইয়র্কে রাস্তায় আচমকা নারীদের ঘুষি মারছে অজ্ঞাতরা

        যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

        পাপারাজ্জিকে ঘুষি: টেলর সুইফটের বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

        দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, সাগরেই ৩৬ হাজার

        বাল্টিমোরে সেতুধসে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের সব ক্রু ভারতীয়

        কে হচ্ছেন নতুন বন্ড

        জাহাজের ধাক্কায় বাল্টিমোরে সেতু ধসের সর্বশেষ

        শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের ভালো করা উচিত: সাকিব

        রিকশাওয়ালাদের গেম শো

        আর্জেন্টিনায় ৭০ হাজার সরকারি কর্মীকে বরখাস্ত

        সর্বজনীন পেনশন স্কীম কার্যক্রমের উদ্বোধন

        ভুটানের রাজাকে গার্ড অব অনার ও বিদায়ী সংবর্ধনা

        গাজায় মানবিক বিপর্যয় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে পরিণত: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

        ভুয়া পিতৃপরিচয় দিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা

        বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভূয়সী প্রশংসায় ডোনাল্ড লু

        মস্কোতে আইএসের হামলা চালানো, বিশ্বাস হচ্ছে না মারিয়া জাখারোভার

        নগরীর অচল ১১০টি সিসি ক্যামেরা হল সচল

        একনেকে ১১ প্রকল্পের অনুমোদন

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

দ্যুতিময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’

দ্যুতিময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’

গ্রীষ্মের দুপুর। কণ্ঠ শুকিয়ে কাঠ। তৃষ্ণায় প্রাণ যায় যায় করছে। মরুর পথিক। ধরেই নিয়েছে এবার বুঝি আর রক্ষা নেই। তব্ওু বাঁচার আকুতি। কাতর কণ্ঠে করুণ মিনতি। প্রভু ওগো, পানি দাও, জীবন বাঁচাও! এদিক ওদিক করতে করতে সহসা চোখ যায় দূর পাহাড়ের গায়। কী যেন চিকচিক করছে। পথিকের মনে আশার সূর্যোদয় হলো। সামনে বাড়তেই ছানাবড়া চোখ। পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে স্বচ্ছ জলধারা। আহা! কী আনন্দ তার মনে। অঞ্জলি ভরে ঢোক ঢোক করে পান করে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নেয়ারও বুঝি সময় নেই। অবশেষে তৃপ্ত। দেহ-মন প্রফুল্ল। লম্বা একটা নিঃশ^াস টেনে উচ্ছ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর)।

বান্দা যদি এ অবস্থায় মারা যেত তৃষ্ণার্ত আত্মাকে হয়তো দয়াময় সিক্ত কবতেন অথবা বিনিময় দিয়ে তৃপ্ত করতেন। কিন্তু আবেগঘন হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্তিম প্রশংসা বাক্যটি হয়তো তাঁর শোনা হতো না। তিনি তো বান্দা থেকে এতটুকুই চান। সৃষ্টির কোনো কিছুই তাঁর উপকার বা অপকারের ক্ষমতা রাখে না। কোনো বস্তুর তিনি মুখাপেক্ষী নন। একক, অদ্বিতীয় সব ক্ষমতা-বলে। তবুও থরে-বিথরে মনোরম করে সাজিয়েছেন বিশ^জগৎকে। মানবকে করেছেন সবকিছুর মূল উপলক্ষ। তার জন্যই সব আয়োজন।

পৃথিবীর তাবৎ সৃষ্টিকে করা হয়েছে তার আজ্ঞাবহ। ঘোষণা করেছেন, ‘সাখখারা লাকুম মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদি জামিয়াম্মিনহু।’ (সূরা জাসিয়া-১৩)। মানুষ সবকিছু খাবে, পান করবে, ভোগ করবে- যত লাগে। বিধিনিষেধ শুধু সমতার লক্ষ্যে অথবা সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে। কিন্তু বিনিময় কী- এত সুন্দর দেহ-সৌষ্ঠব, উন্নত আবাসন, পানাহারের মনোহারি আয়োজন, শোভন-সুদৃশ্যের নয়নাভিরাম পাকৃতিক গাঁথন- এসবের মূল্য কী? কখনো ভেবেছি? ভাবলেও হয়তো গভীরে যাইনি। দয়াময় আমায় মানুষ বানিয়েছেন; অন্য কিছুও তো বানাতে পারতেন! তখন হয়তো জীবন হতো বন্যপ্রাণী সদৃশ! ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আমি মানুষ। উন্নত আমার জীবন-জীবিকা। পোশাক-আশাকে আমি অনন্য। আমার নির্মাণ কাঠামোতে নেই কোনো অসঙ্গতি। যদি উল্টাপাল্টা হতো- চোখের জায়গায় কান আর কানের জায়গায় চোখ! অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভিন্ন কোনো অসামাঞ্জস্যতা! তখন আমায় কেমন দেখাত; কিম্ভূতকিমাকার! ছুম্মা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এত সব তিনি না চাইতেই আমাদের দিয়েছেন। দিন-রাত তাঁর নিয়ামতে আকণ্ঠ ডুবে আছি। যার হিসাব কেউ রাখি না, রাখাও সম্ভব নয়।

রব নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা করো, শেষ করতে পারবে না।’ (সূরা নাহল-১৮) এসব নিয়ামত ভোগ করে বান্দার করণীয় কী- অবাধ্যতা নাকি আনুগত্য? অবশ্যই আনুগত্য। আর সেই আনুগত্য প্রকাশের প্রধান এবং প্রথম মাধ্যম হলো শুকর করা। রবের উচ্চকিত গুণগান করা। দয়াময়কে অভিবাদন জানানো। উচ্চৈকণ্ঠে ঘোষণা করা ‘আলহামদুল্লিাহ’ প্রশ্ন হয়, ধন্যবাদ জ্ঞাপনের বহু শব্দ থাকতে এর ওপর এত জোর কেন? কারণ এ বাক্যটির মাহাত্ম্য-মহিমা অন্যান্যের তুলনায় অনেক বেশি। হাদিসে এসেছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ তামলাউল মিজান;। (বুখারি-৩৩৮৩)। বাক্যটির সওয়াব মিজানের পাল্লা ভরে দেবে। অন্যত্র এসেছে, ‘আফজালুদ দোয়া আলহামদুলিল্লাহ’ বা এটি সর্বোত্তম দোয়া।’ (মুসলিম-২২৩)। তা ছাড়া বাক্যটির মর্মার্থ এত ব্যাপক, যা অন্য কোনো বাক্যে পাওয়া যায় না।

‘আলহামদু’-অর্থ সমুদয় প্রশংসা, সাধুবাদ, গুণকীর্তন, শুভেচ্ছা, অভিবাদন ইত্যাদি। চাই তা ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, জেনে হোক কিংবা না জেনে, বুঝে হোক কিংবা না বুঝে, কোনো কিছুর বিনিময়ে হোক কিংবা বিনিময় ছাড়া সব প্রকার স্তুতি-বন্দনা তাতে জড়িয়ে থাকে। সেই প্রশংসা ব্যক্তির হোক কিংবা বস্তুর, গুণের হোক কিংবা সত্তার, আকাশে হোক কিংবা জমিনে সর্বত্র তাঁর জন্যই নির্ধারিত। অপর দিকে গুণ প্রকাশক শব্দ- ‘সানা’ কিংবা ‘শোকর’ এত ব্যাপকতা রাখে না। বাক্যটির গভীরতা এভাবেও অনুমান করা যায়, আল কুরআন পূর্বেকার সব আসমানি কিতাবের সমর্থক, সংরক্ষক এবং সার নির্যাস। (সূরা মায়িদা-৫)। আর সূরা ফাতিহা আল কুরআনের সার নির্যাস বা মূল (উম্মুল কুরআন)। এবার আপনার কাছেই প্রশ্নটি রেখে দিলাম, বলুন তো সূরা ফাতিহার প্রথম শব্দ বা বাক্যটি কী? অবশ্যই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বাক্যটির মধুরতা কী পরিমাণ সেটাও হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কত কোটি মুমিনের মুখে পঠিত হয় তার হিসাব করা ভার। পরিশেষে বলব সর্বাবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা করুন। বেশি বেশি করুন। তিনি আপনার প্রতি সদয় হবেন, দয়া দেবেন, আপনার প্রতি বেজায় খুশি হবেন। কারণ প্রশংসাই তাঁর নিয়ামতের বিনিময়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত