আপডেট :

        বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু

        সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেল এজেন্ট মোতায়েন, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিউসমের

        ক্যালিফোর্নিয়ায় পানির নিচ থেকে নিখোঁজ মা ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার

        ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাচ্ছে তিন রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্য

        হারিকেন এরিন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দিকে ধেয়ে আসছে, আকারে বড় হচ্ছে ঝড়

        আনাহাইমে কার ওয়াশ ও হোম ডিপোতে অভিবাসন অভিযান, আটক একাধিক ব্যক্তি

        সান বার্নার্ডিনোতে অভিবাসন অভিযানে ফেডারেল এজেন্টের গুলি

        এয়ার কানাডার ফ্লাইট রবিবার থেকে চালু

        দেশে ফেরার সম্ভাবনা শেষ! সাকিবের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

        ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট ঘোষণা

        প্রথম দিনেই ‘ধূমকেতু’ ২ কোটি আয় করল

        ওয়েব সিরিজে ‘ছোট বাদশা’ আরিয়ান খান, বাবার ভঙ্গিতেই ডেবিউ

        ইয়েমেনের রাজধানীতে বিস্ফোরণ: ইসরায়েলের হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন

        বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানীর কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে

        সর্বশেষ অবস্থান কী মহাশক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এরিনের?

        ভারতীয়রা ‘বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী’ এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারবেন

        নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে, প্রধান উপদেষ্টা নিজে ক্লিয়ার করেছেন: রিজওয়ানা

        বাংলাদেশের মেয়েদের নজর ভুটানের শিরোপাতে

        শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখে টাকা-ফ্ল্যাট দেওয়ার ঘটনা তদন্তে লিগ্যাল নোটিশ দুদককে

        অরেঞ্জ কাউন্টিতে ১ লাখ ডলারের চুরি করা মালামালসহ নারী গ্রেপ্তার

মেলবোর্নের বদলা নিল বাংলাদেশ : ভারত কে হারালো বাংলাদেশ

মেলবোর্নের বদলা নিল বাংলাদেশ : ভারত কে হারালো বাংলাদেশ

মিরপুরে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সফরকারী ভারতকে ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে

হারিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে

ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে মাশরাফি-সৌম্য-মোস্তাফিজদের। ওই পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক রাজর্ষি

গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘ধোনির ভুল আর অজানা আতঙ্কে মেলবোর্নের বদলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি

পাঠকদের হুবহু জন্য তুলে ধরা হলো-
ঠোঁটে চেপে ধরা ভুভুজেলা, ঠোঁটে চেপে ধরে পঁচিশ হাজার। অদ্ভুত নেশা ধরানো এক ছন্দে, চেনা

একটা আওয়াজকে নকল করে বেজে চলেছে ক্রমাগত। চেনা যায়, ছন্দটা বড় চেনা যায়।
‘ম..ও..কা..ম..ও..কা’! চার মাস আগে ক্রিকেট বিশ্বকাপ এমনই কিছু রোজ শুনত না?
পাগলের মতো কাঁদতে-কাঁদতে গ্যালারি ধরে ছুটে চলেছে যে যুবক, তাঁর হাতটা কত জন খেয়াল

করলেন কে জানে। চোখ দিয়ে জল ঝরছে অঝোরে, হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে একটা সাদা কাগজ।

কাগজে কিছু একটা লেখা।
বুকে সজোরে ধাক্কা দেওয়ার মতো একটা লাইন লেখা ‘বাঙালি, বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নাও!’
আরে, মীরপুর মাঠে মাঝরাতে কারা চেস্ট বাম্প করছেন? ভুল ভাবলেন। মোটেও ওঁরা লি-হেশ নন,

ওঁরা দু’জন বাঙালি! চার মাস আগের ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে যাঁরা আজ তৃপ্ত। সন্তুষ্ট। যাঁরা হয়তো আজ

রাতে আর ঘুমোবেন না। তাসকিন আহমেদের বুকের ধাক্কায় দেখা গেল, পড়তে-পড়তে বেঁচে গেলেন

মাশরফি মর্তুজা।
কিন্তু তাতে আজ কিছু এসে যায়?
দুই প্রতিবেশীর এক যুদ্ধকে কী ভাবে ক্রিকেটের বাইশ গজ থেকে তুলে এনে জীবনের বাইশ গজে

আছড়ে ফেলা যায়, দেখে নিল বৃহস্পতিবারের মীরপুর মাঠ। কোনও সন্দেহ নেই চার মাস ধরে পুড়ে

চলা এক অপমানের বৃত্ত এ দিন মীরপুর মাঠে শেষ করে ফেললেন এগারো বাঙালি। কাপ কোয়ার্টার

ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিয়ে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ‘মহাভারত’-কে ধুলোয় মিশিয়ে। কিন্তু ম্যাচের

সেটা একমাত্র আঙ্গিক ভাবলে চরমতম অন্যায় হবে। বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার

ফাইনাল ফ্লুক ছিল না। দেখিয়ে দিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ জয়কে আশ্চর্যের দৃষ্টিভঙ্গি

থেকে দেখার কোনও দরকার ছিল না। এশীয় ক্রিকেটে তো বটেই, গোটা ওয়ান ডে পৃথিবীতেই তারা

এখন দুর্নিবার শক্তি। যারা ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে। পাকিস্তানকে পারে। ভারতকেও পারে।
পারে এক অজানা আতঙ্ককে লেলিয়ে দিয়ে।
রাত বারোটার মীরপুর প্রেসবক্সেও লিখতে বসে আবহে মহানাটকীয়তা দেখে হাত কাঁপবে।

প্রতিশোধের ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে কাঁপিয়ে গেলেন কে? না, উনিশ বছরের এক তরুণ

বাঁ হাতি পেসার। যাঁকে এক বছর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট চিনত না। অথচ ওই ছেলেই আজ

রায়নাকে নিলেন। রোহিত শর্মাকে নিলেন। পাটা উইকেটে তাঁর স্লোয়ার আর কাটারে বশ্যতা স্বীকার

করে নিল দুঁদে ভারতীয় ব্যাটিং। এ বার বাংলাদেশ সাংবাদিকদের দেখুন। আবেগে থরথরিয়ে

প্রেসবক্সেই কাঁপছেন। দর্শকদের সঙ্গে চেঁচাচ্ছেন। ওঁদের অনেকে ছিলেন মার্চের মেলবোর্নে। দেখেছেন,

মাশরফিদের কান্না। প্রেসবক্স থেকে বেরিয়ে বাইরের গ্যালারিতে দৃষ্টি নিয়ে যান। উদোম গায়ে, ঘামতে

ঘামতে ওখানে এখনও উৎসব করে চলেছে উন্মত্ত দর্শক। জামা ওড়াচ্ছে, তাসা বাজাচ্ছে, চেয়ার

চাপড়াচ্ছে। সত্যি বলতে, আবেগের এই ছবিকে সাদা পাতার কালো দাগে তুলে ধরা কঠিন নয়।

অসম্ভব।
মাঝরাতের মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? তাঁর অভিব্যক্তি ব্যাখ্যাও সম্ভব তো? পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে যে ভারত

অধিনায়ককে দেখা গেল, মুখ তাঁর যন্ত্রণায় বেঁকেচুরে গিয়েছে। বিশ্বকাপের পর ওয়ান ডে-তে এটা

তাঁর কামব্যাক ম্যাচ ছিল। এমএসডি রান পেলেন না। প্রয়োজনের দিনে দেশকে আবারও বাঁচাতে

পারলেন না। অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠল। তবু সে সব নয়। ভারত অধিনায়ক এ দিন যা করলেন,

তা তাঁকে সাধারণত করতে দেখা যায় না।
মুস্তাফিজুরকে ভারত অধিনায়ক ধাক্কা মেরে বসলেন।
ভারত ব্যাট করার সময় থেকেই লাগছিল। ইনিংসের প্রথম বল থেকে রোহিত শর্মার বিরুদ্ধে

আউটের পরপর আবেদন, আর আবেদনের সমর্থনে পঁচিশ হাজার বাংলাদেশ দর্শকের কানফাটানো

আওয়াজ ক্রিকেট স্পিরিটের বারোটা বাজানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। যা পরবর্তী সময়ে আর আটকানো

গেল না। রোহিতের সঙ্গে একবার তামিমের লেগে গেল। আম্পায়ার আবার কিছুক্ষণ পর তামিম আর

মাশরফিকে ডেকে সতর্ক করে দিলেন আচরণ নিয়ে। বিরাটকে আউট করে তাসকিন আহমেদ যে

চিৎকার করলেন, তাতে বোঝা যায় ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট-সম্পর্ক এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে।

এমএসডি তিনিও যা থেকে প্রভাবমুক্ত থাকতে পারলেন না। রান নিতে যাওয়ার সময় ধোনির কাঁধ

মুস্তাফিজুরকে এমন গুঁতিয়ে দিল যে, উনিশের পেসারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হল সঙ্গে সঙ্গে।
প্রত্যুত্তরটাও পেলেন ভারত অধিনায়ক। মুস্তাফিজুর ফিরে এসে ভারতকেই ম্যাচ থেকে ধাক্কা মেরে

বার করে দিলেন। মোহিত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমাররা শিখতে পারেন তরুণ বাংলাদেশ পেসারের থেকে।

ভারত যে আজ হেরে গেল, তার কারণ প্রধানত দু’টো। পেসারদের জঘন্য বোলিং সর্বাগ্রে থাকবে।

ভারতের তিন পেসার মিলে কুড়ি ওভারেরও কমে দেড়শো দিলেন। ভুবনেশ্বর কুমার যে কোন যুক্তিতে

ঘণ্টায় একশো পঁচিশ কিলোমিটার গতি নিয়ে শর্ট করতে থাকলেন, উত্তরটা একমাত্র তাঁরই জানা।

কারণ টি-টোয়েন্টি প্রভাবিত বর্তমান ওয়ান ডে দুনিয়ায় একশো পঁচিশে শর্ট করে ব্যাটসম্যানকে

বিপদে ফেলার স্বপ্ন দেখা যা, পাঁচ হাজার টাকার মাইনের চাকরি করে বিএমডব্লিউ চড়ার স্বপ্ন দেখাও

তাই। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকাররা সবচেয়ে বেশি নির্দয় ছিলেন মোহিত শর্মার উপর। পাঁচ

ওভারও পুরো করতে পারেননি মোহিত মারের চোটে। তার মধ্যেই ৫৩ দিয়ে চলে গিয়েছেন। উমেশ

যাদব একটা ওভারে আবার আঠারো দিলেন।
এমএস ধোনির ভাগ্য ভাল, বাংলাদেশ সাড়ে তিনশোয় যায়নি। অথচ যাওয়ার যাবতীয় সম্ভাবনা ছিল।

এই পিচে তিন পেসার নামানো ভুল হয়ে গিয়েছে বুঝে দ্রুত রায়নাকে দশ ওভার দিলেন। বিরাটকে

দিয়ে স্লো মিডিয়াম পেস করালেন। ও দিকে স্টুর্য়াট বিনি ডাগআউটে বসে। যাঁর কি না গত সফরে এ

মাঠেই ৪ রানে ৬ উইকেট আছে। অক্ষর পটেলও বসে। ক্যাপ্টেন ধোনির এখানে ভুল হয়ে গেল।

ব্যাটসম্যান ধোনি তিনিও তো পারতেন আতঙ্কের দিনে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনতে।

ছক বাঁধা জীবনের বাইরে গিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল এসেছিল। তিনিই দিয়েছিলেন। প্রয়োজনের দিনে

আরও একটু সাহসী কি হওয়া যেত না?
কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশও চার পেসার খেলিয়েছে। ধোনি আর ভুল তা হলে কোথায়

করলেন? কিন্তু যে চার বাংলাদেশ পেসার খেললেন, তাঁরা কেউ একশো পঁচিশ কিলোমিটারে শর্ট

করেন না। রুবেলের পেস একশো চল্লিশের কাছে। তাসকিনও তাই। মুস্তাফিজুর একমাত্র যাঁর পেস

অতটা নেই। কিন্তু তাঁর পাঁচ উইকেট নিয়ে যাওয়ার পিছনে আছে পাটা উইকেটে বলকে কাট

করানোর ক্ষমতা। স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা। এক বছর আগেও বাংলাদেশের

কেউ তাঁকে চিনত না। নির্বাচক প্রধান টিমে বৈচিত্র বাড়ানোর জন্য এক জন বাঁ হাতি পেসার

চেয়েছিলেন। তখনই বাকি নির্বাচকদের কেউ একজন এগিয়ে দেন মুস্তাফিজুরকে। যিনি আবার

বাংলাদেশে কোচিং করাতে আসা ও-পারের রণদেব বসুর তত্ত্বাবাধনেও ছিলেন। এত দিন পর্যন্ত

মুস্তাফিজুরের নামী উইকেট বলতে ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি যুদ্ধে শাহিদ আফ্রিদি আর

মহম্মদ হাফিজ। আজ থেকে কত নাম জুড়ে গেল। রোহিত শর্মা। অজিঙ্ক রাহানে। রবীন্দ্র জাডেজা।
আসলে এটাই এখন বাংলাদেশ। যারা আর ক্রিকেটীয় হীনমন্যতায় না ভুগে নিয়মিত তুলে আনছে

পরের পর প্রতিভা। কেউ বিকেএসপি থেকে উঠে আসছেন। যাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আতুঁড়ঘর

বলা হয়। কেউ বা আসছেন স্কুল ক্রিকেট থেকে। নামগুলো কখনও সৌম্য সরকার। কখনও তাসকিন

আহমেদ। আজকের পর বাংলাদেশের পক্ষে সিরিজটা ১-০ হয়ে গেল। অঘটন বললে যে গৌরবকে

অপমান করা হবে। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম তিনশো, প্রথম উইকেটে প্রথম বারের জন্য একশো

রানের পার্টনারশিপ করে দেওয়া, কোনটা বাকি থাকল। ভারত শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিতবে কি না

সময় বলবে। কিন্তু এমএসডি একটা ব্যাপার বুঝে মাঠ ছাড়লেন। এটা আর অতীতের বাংলা নয়।

অন্য বাংলা। নতুন বাংলা।
শের-ই-বাংলা!

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত