গাজা সংকটে অগ্রগতি, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ সম্পন্নের পথে
টেস্টের ছোঁয়া, টোয়েন্টির গতি—অদ্ভুত নিয়মে নতুন ফরম্যাট
ক্রিকেটের নতুন এক সংস্করণ আসছে, যার নাম টেস্ট টোয়েন্টি। এটি মূলত টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির মিশ্রণ, বিশেষভাবে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণদের জন্য তৈরি। নতুন ফরম্যাটটি উদ্ভাবক ক্রীড়া উদ্যোক্তা গৌরব বহিরবানি এবং উপদেষ্টা হিসেবে চারজন কিংবদন্তি — স্যার ক্লাইভ লয়েড, ম্যাথু হেইডেন, হরভজন সিং ও এবি ডি ভিলিয়ার্স–এর সহযোগিতায় এসেছে।
এটি মূলত টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির মিশ্রণ। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বানানো হয়েছে টেস্ট টোয়েন্টি। এখানে ২০ ওভারের দুটি করে ইনিংস খেলবে প্রতিটি দল। সাদা পোশাকে, লাল বলে, এক দিনেই শেষ হবে ম্যাচ। অর্থাৎ প্রতিটি ম্যাচ হবে ৮০ ওভারের। টেস্টের মতো এখানেও প্রথম ইনিংসের স্কোর যোগ হবে দ্বিতীয় ইনিংসে। ফল হতে পারে জয়, হার, টাই কিংবা ড্র।
নতুন কী আইনকানুন
১. পাওয়ারপ্লে
প্রতিটি দল একটি মাত্র পাওয়ারপ্লে নিতে পারবে, প্রথম বা দ্বিতীয় ইনিংস—যখন খুশি। ৪ ওভার স্থায়ী এই পাওয়ারপ্লেতে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকতে পারবে মাত্র দুই ফিল্ডার। যদি দ্বিতীয় ইনিংসের সপ্তম ওভারের মধ্যে অধিনায়ক পাওয়ারপ্লে কখন নেবেন সেই সিদ্ধান্ত না জানান, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সপ্তম থেকে দশম ওভার পর্যন্ত চলবে পাওয়ারপ্লে।
২. ফলোঅন
প্রথম ইনিংস শেষে যদি পরে ব্যাট করা দল ৭৫ বা এর বেশি রানে পিছিয়ে থাকে, আগে ব্যাট করা দলের অধিনায়ক ফলোঅন করাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে পরে ব্যাট করা দলটিকে সঙ্গে সঙ্গেই আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হবে।
৩. আর্লি কলাপ্স ক্লজ
যদি কোনো দল প্রথম ইনিংসে ১০ ওভারের আগে অলআউট হয়, তবে তাদের অব্যবহৃত ওভারের মধ্য থেকে ৩ ওভার যোগ হবে প্রতিপক্ষের ইনিংসে। যেমন, দল ‘এ’ যদি ৭ ওভারে গুটিয়ে যায়, তবে দল ‘বি’ প্রথম ইনিংসে খেলবে ২৩ ওভার (২০+৩)।
৪. বোলিং বণ্টন
পুরো ম্যাচে সর্বোচ্চ পাঁচজন বোলার ব্যবহার করা যাবে। প্রত্যেক বোলার দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৮ ওভার বল করতে পারবেন। এক ইনিংসে ৬ ওভার, অন্য ইনিংসে ২ ওভার—যেভাবেই ভাগ করা হোক, মোট ৮ ওভারের বেশি নয়।
৫. ওয়াইড ও নো বল
টি–টোয়েন্টির নিয়মই প্রযোজ্য থাকবে। প্রতিটি ওয়াইড ও নো বলে এক রান এবং অতিরিক্ত বল। ফ্রন্টফুট নো বল মানেই ‘ফ্রি হিট’। এক ওভারে যদি কোনো বোলার ৩ বা তার বেশি ওয়াইড/নো বল করেন, তবে অতিরিক্ত ৩ রান পেনাল্টি পাবে প্রতিপক্ষ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে আম্পায়াররা নিজেদের বিবেচনা প্রয়োগ করতে পারেন। যদি কোনো ব্যাটসম্যান ইচ্ছা করে ক্রিজ ছেড়ে সরে যান, তাহলে সেই ডেলিভারিকে আম্পায়ার ‘ওয়াইড’ না–ও দিতে পারেন।
৬. শর্তসাপেক্ষ ড্র
চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের যদি পাঁচের কম উইকেট পড়ে, তারা চাইলে ম্যাচটি ‘ড্র’ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে পঞ্চম উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগ হারাবে—তখন ফল হবে শুধু জয় বা পরাজয়, রানের যোগফল অনুযায়ী। আবহাওয়ার কারণে খেলা অসম্পূর্ণ থেকে গেলে ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হবে। টাই হলে সুপার ওভারে খেলা গড়াবে। এক ওভারের সেই খেলায়ও ফল না পাওয়া গেলে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাউন্ডারি মারায় যে দল এগিয়ে তারা জিতবে।
২০২৬ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো মাঠে গড়াবে টেস্ট টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। ছয়টি গ্লোবাল ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে তিনটি দল হবে ভারতের শহরভিত্তিক এবং বাকি তিনটি দল দুবাই, লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবে। প্রতিটি স্কোয়াডে মোট ১৬ জন খেলোয়াড় থাকবে, যাদের মধ্যে আটজন ভারতীয় এবং আটজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। টুর্নামেন্টটির প্রথম দুই মৌসুম হবে ভারতে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, টেস্ট টোয়েন্টিতে বড় ভূমিকা থাকবে এআই ডিসকভারি ইঞ্জিনের। এটি একটি উন্নত প্ল্যাটফর্ম, যা ভিডিও বিশ্লেষণ, মোশন সেন্সর প্রযুক্তি এবং ডেটা সায়েন্স একত্র করে খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও সম্ভাবনা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করে। টেক-ট্রান্সফার পার্টনারশিপ (টিটিপি)–এর মাধ্যমে এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট বোর্ড, একাডেমি এবং সংস্থাগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এতে প্রতিভা শনাক্তকরণ হবে স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন।
এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সংস্করণের উদ্বোধনের সময় উদ্যোক্তা গৌরব বহিরবানি বলেন, ‘আমরা টেস্ট ক্রিকেটের গভীরতা আর টি–টোয়েন্টির গতি মিলিয়ে এমন একটা ফরম্যাট বানিয়েছি, যা আজকের প্রজন্মকে দেবে অর্থবহ লড়াইয়ের সুযোগ। আইপিএলের মতো বহু সংস্কৃতির আমেজ থাকবে এখানে, শুধু তরুণদের জন্য।’ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড নতুন সংস্করণের প্রশংসা করে বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি হলো প্রদর্শনী, আর টেস্ট হলো পরীক্ষা। এখন আপনি এই দুটোকে একসঙ্গে মেলাচ্ছেন। আমি নিশ্চিত এটি সফল হবে।’
প্রোটিয়া কিংবদন্তি ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, ‘এই ফরম্যাট আমাদের খেলাকে নতুন মাত্রা দেবে। টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেই নতুন প্রজন্মের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা এটি। টেস্ট টোয়েন্টি শক্তি, ধৈর্য, সৃজনশীলতা—সবকিছুর মিশ্রণ।’ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং বলেন, ‘টেস্টের ধৈর্য আর টি–টোয়েন্টির রোমাঞ্চ—দুটোই আছে এখানে। বুদ্ধিদীপ্ত তরুণদের জন্য বানানো একদম নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে শুধু ব্যাট-বল নয়, দেখা যাবে মানসিক দৃঢ়তা, শৃঙ্খলা, আর ক্রিকেটের আসল রূপ।’
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন