বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
ভারতীয় পত্রিকা কর্তৃক ধনিদের বাম্বু জ্ঞাপন
বাংলাদেশের কাছে হারের পর ভারতের বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ হুবহু তুলে ধরলাম
দৈনিক আনন্দবাজার:
ঐতিহাসিক লজ্জার পিঠোপিঠি বিস্ফোরণ
জীবনে প্রথম অভিমানী হয়ে ধোনি বললেন, আমাকে সরিয়ে দিন
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নাকি বরাবরের নির্বিকার চরিত্র!
অপ্রত্যাশিত সিরিজ হারের পর সাংবাদিক সম্মেলন তখন মাঝপথে। ভারতীয় সাংবাদিকদের কেউ একজন প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলেন ভারত অধিনায়ককে— আপনি কি ক্রিকেটটা আর উপভোগ করছেন? মনে হচ্ছে না, ওয়ান ডে অধিনায়কত্বেও এ বার একটা বদল দরকার? ঠিক যা করে বিরাট কোহলিকে টেস্টে আনা হয়েছে?
“আপনাদের যদি মনে হয় আমার জন্যই ভারতীয় ক্রিকেট ডুবছে, আমাকে সরিয়ে দিলেই সব সমস্যা মিটে যাবে, তা হলে দিন না। আমাকে সরিয়ে দিন,” মীরপুরের প্রেস কনফারেন্স রুমে কথাগুলো যখন বলছেন ভারত অধিনায়ক, প্রশ্নকর্তাদের স্তব্ধ দেখায়। এর চেয়ে অনেক বেশি উথাল-পাথাল সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন ধোনি। জাতীয় মিডিয়া কিছু একটা খুঁজে পেলেই তাঁকে প্রবল ভাবে টেনে নামাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত অভিমানী তাঁকে কোনও দিন দেখায়নি। রবিবাসরীয় মীরপুরই প্রথম।
“আমি তো বলিনি আমাকে নিয়ে এসো। ক্যাপ্টেন করে দাও। আমি তখনই দায়িত্ব নিয়েছিলাম, যখন আমাকে নিতে বলা হয়েছিল। আজ যদি মনে হয় সেই দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিলে ভাল হয়, তা হলে সেটাই হোক। আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার কাছে দেশের হয়ে খেলাটাই সবচেয়ে বড় গর্ব,” উত্তরকে নিজেই দীর্ঘায়িত করে চলেন ধোনি। বলতে থাকেন, “আর ভারতীয় মিডিয়া আমাকে খুব ভালবাসে। আমি হলাম এমন একটা লোক, যাকে কোনও কিছু হলেই দোষী হতে হয়। সেটা তো হতেই হবে, না? কারণ আমার জন্যই তো সব কিছু হয়ে থাকে। আর দেখুন না, আপনাদের প্রশ্ন শুনে বাংলাদেশ মিডিয়াও কী রকম হাসছে!”
আসলে উত্তেজনার থার্মোমিটার প্রথম থেকেই চড়ছিল। ধোনি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রশ্নের চক্রব্যূহে ফেলে দেওয়া হয়। বলা হতে থাকে, আপনি কেন স্টুয়ার্ট বিনিকে নিলেন না? অজিঙ্ক রাহানেকে কোন যুক্তিতে টিমের বাইরে রাখলেন? মনে হয় না, এটা আপনার জীবনের সবচেয়ে জঘন্য ব্যর্থতা?
ভারত অধিনায়ক প্রথম দিকে শান্ত ছিলেন। প্রেস কনফারেন্স রুমে ঢোকার সময়ই তাঁকে ‘মওকা মওকার’ বিদ্রুপ উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ জনতা। রাহানে-প্রসঙ্গ পর্যন্তও মেজাজ ধরে রেখেছিলেন। বলছিলেন, “যে উইকেটে পেস থাকে, সেখানে রাহানে খুব ভাল ব্যাট। কিন্তু এই উইকেটটা অন্য রকম ছিল।” কিন্তু স্টুয়ার্ট বিনির প্রসঙ্গ ওঠামাত্র পাল্টা দিতে থাকেন ধোনি। জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন স্টুয়ার্টকে নেওয়া হল না? ধোনি শ্লেষ মেশানো উত্তর দেন, “আমি তো বললাম যে, পেসার কমাতে চেয়েছিলাম। তার পরেও আপনারা বলছেন, স্টুয়ার্টকে কেন খেলাইনি। আরে, ক্যাপ্টেন তো আমি। টিমের যেটায় ভাল হবে বলে মনে হয়েছে, সেটা করেছি। আপনি যে দিন ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হবেন, সে দিন দল নির্বাচন করবেন না হয়!”
টিম ইন্ডিয়ার সাপোর্ট স্টাফ পাল্টানোর প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও বিদ্রুপ উড়ে আসে। ধোনি বলে দেন, “যাক, এত দিন পর তা হলে আপনারা ডানকান ফ্লেচারকে মিস করছেন! আর শুনুন, যে সাপোর্ট স্টাফকে পাল্টানোর কথা আপনারা বলছেন, তারাই কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে-র সময় দুর্দান্ত কাজ করেছিল। আর দুমদাম কাউকে কোচ করে এনে বসিয়ে দেওয়ার দরকার আছে কি? রবি শাস্ত্রী তো আছেন, তাঁকে আপনাদের পছন্দ হচ্ছে না?”
কিন্তু এগুলো তুলনায় কিছুই না। পরের যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিব্যক্তি, টুকরো অভিমান— সেগুলো আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে থেকে গেল। ভারতকে সাফল্যের শিখরে তুলে দেওয়ার কথাও একবার উঠেছিল। অভিমানী ধোনি বলে দেন, “আমি কখন বললাম যে দেশকে সাফল্যের চূড়োয় তুলেছি?” পরে অন্ধকার শের-ই-বাংলা দিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঘনিষ্ঠদের কাউকে কাউকে ধোনি নাকি বলে দেন, তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে যা বলেছেন ভেবেচিন্তেই বলেছেন। তাঁর প্রয়োজন দেশের ক্রিকেটের কাছে ফুরিয়েছে মনে হলে, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
প্রয়োজনে আজই দেওয়া হোক!
দৈনিক আনন্দবাজার:
বাংলাওয়াশের গর্জনের সামনে বিপন্ন ব্র্যান্ড ধোনি
হিংস্র মুখগুলো ঝুঁকে পড়ছে রেলিং ধরে, মাঠ দিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে হেঁটে আসতে দেখে গলার শিরা ফাটিয়ে ততধিক বাড়ছে বিদ্রুপের ‘মওকা, মওকা..’ চিত্কার। শান্ত ভারত অধিনায়ক ওপরে তাকালেন একবার। হেসে হাত দিয়ে যেন বোঝাতে চাইলেন, আমি নই। ও সবের পিছনে আমি নই। পাঁচ মিনিটের মধ্যে মীরপুর প্রেস কনফারেন্স রুম আর অভিমানের বহিঃপ্রকাশ, সরিয়ে দিন আমাকে। দেশের ক্রিকেটের তাতে ভাল হলে সরিয়ে দিন!
আর কিছু ভাবতে না পেরে মাঠে শুধু লাফাতেই শুরু করে দিলেন মাশরফি মর্তুজা। কে বলবে, তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা এক নয়, দুই নয়, ছয়! উনিশের এক বাঙালি পেসারকে দেখা গেল এ বার এক ঝলক। অধিনায়কের সিংহ-হৃদয়ে মুখ লুকিয়ে। সস্নেহে একটা হাত অবিরাম ঘুরে যাচ্ছে পেসারের মুখে, হাতে, চুলে। অধিনায়কের হাত।
জালের প্রাচীরটা এত উঁচু কেন এত দিনে বোঝা গেল। নইলে ওই যে উন্মত্ত দর্শককুল, তাদের আজ ঠেকাত কে? ওরা এখন প্রাচীর ধরে ঝুলছে, টানছে, ভেঙে ফেলতে চাইছে নায়ক আর সাধারণের বিভেদের দেওয়ালটা। মুস্তাফিজুর রহমানকে আজ না ছুঁয়ে দেখলে আর কবে দেখবে পদ্মাপার? সাকিব-আল-হাসানকে আজ একবার জড়িয়ে না ধরলে জীবনে আর থাকল কী?
হাজার-হাজার বোতল রাতের ঢাকা আকাশে ছুঁড়ে, বাঘের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে, বুকে ডোরাকাটা দাগ এঁকে, ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলে রবিবাসরীয় মীরপুরে নতুন ক্রিকেট-সূর্য এনে ফেলল বাংলাদেশ। ভারতকে প্রথম বারের জন্য ওয়ান ডে সিরিজে হারিয়ে দেশের ক্রিকেটকে এ বার ইতিহাসের পাতায় তুলে ফেললেন মাশরফি মর্তুজার টিমের এগারো বাঙালি। তিন ম্যাচের সিরিজ রবিবারেই শেষ, অন্তিম ম্যাচ এখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের সম্মানরক্ষার প্রয়োজনেই পড়ে। কোনও সন্দেহ নেই ঢাকা আজ ঘুমোবে না। কুমিল্লা ঘুমোবে না। চট্টগ্রাম ঘুমোবে না। প্রথমে নিউজিল্যান্ড। তার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তান। শেষে ভারত। সোনার বাংলার ক্রিকেট-ইতিহাসে নতুন স্বর্ণ পালকের জন্ম হয় যে রাতে, সেখানে আর ঘুমনো সম্ভব?
রবিবারের মীরপুর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকলে যে কোনও ভারত সমর্থকের পারিপার্শ্বিক দেখলে প্রচণ্ড কষ্ট হবে। একটা টিম আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে। অন্য টিমটা সাত নম্বরে। সাধারণ ক্রিকেট-বোধ বলে প্রথম ম্যাচ যদি কোনও ভাবে হেরেও যায় র্যাঙ্কিংয়ে দু’নম্বর, তা হলে পরেরটায় সে ফিরে আসবে প্রত্যাঘাতের চাবুক নিয়ে! বিপক্ষকে চূর্ণ করে অক্ষত রেখে দেবে সম্মানের তাজ।
আর সম্মান! যে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল ধোনিদের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ, সেখানে ভারতবর্ষ তার সেরা এগারোর থেকে ‘উপহার’ পেল কুত্সিততম পারফরম্যান্স। ব্যাটিংয়ে, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংয়ে। আচার-ব্যবহারে।
উপমহাদেশের বাইরে ভারতীয় ব্যাটিং নিয়ে এত দিন প্রচলিত বিদ্রুপ ছিল, ‘বল নড়ে, উইকেট পড়ে’। এখন দেখা যাচ্ছে ওটা উপমহাদেশেও খুব ভাল নড়ে! ভাবা যায়, রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলির ভারত পঁয়তাল্লিশ ওভার টিকতে পারছে না। দুশো তুলতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের বাঁ হাতি পেসারকে এমন আতঙ্কের চোখে দেখছে যেন, কোনও এক ওয়াসিম আক্রম দৌড় শুরু করছেন!
বাংলাদেশ বাঁ হাতি পেসার নিঃসন্দেহে মারাত্মক প্রতিভা। আজকের পর মুস্তাফিজুর রহমানকে অনায়াসে সাতক্ষীরা ‘সায়নাইড’ বলে ডাকা যেতে পারে। গত পাঁচ দিনে দু’টো ম্যাচ খেলে এগারোটা উইকেট নিয়েছেন। দু’টো ম্যাচ মিলিয়ে দু-দু’বার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। এমএস ধোনি থেকে সুরেশ রায়না কাউকে পাল্টা মারের বিষ ছড়াতে দেননি। ‘সায়নাইড’ তো তিনি বটেই। তাঁর স্লোয়ার কাটারগুলো যখন দুঁদে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের টুঁটি ছিড়ে নেয়, নিঃশব্দ মৃত্যুদূতের বাইরে মুস্তাফিজুরকে আর কিছু মনে হয়নি। পরপর দু’ম্যাচে পাঁচ উইকেট তোলা, ক্রিকেট-বিশ্বে আজ পর্যন্ত জিম্বাবোয়ের ব্রায়ান ভিট্টোরির বাইরে কেউ করে দেখাতে পারেননি। মুস্তাফিজুর নিলেন আবার ছ’টা।
কিন্তু তার পরেও মুস্তাফিজুর ‘আনপ্লেয়বল’ নন। অন্য কেউ নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট যাঁরা গুলে খেয়েছেন তাঁরাই কথাটা বলছেন। বাংলাদেশ সাংবাদিককুলের ধারণা হল, ভারত মুস্তাফিজুর-আতঙ্ককে মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। তার পরিণাম এটা। আসল সত্যিটা কী, বলা মুশকিল। কিন্তু ইতিহাস সে সবে আগ্রহী হবে না। সোনার বাংলার ইতিহাস বলবে, মুস্তাফিজুরই ভারতের বিরুদ্ধে তাদের সেরা গর্বের রাতটা উপহার দিয়েছিল।
এবং গর্ব করার মতো, কলার তুলে হাঁটার মতো পারফরম্যান্স। শোনা গেল, ম্যাচ শেষে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে এমএসডি-র কাছে নাকি মুস্তাফিজুরকে নিয়ে গিয়েছিলেন মাশরফি মর্তুজা। আইপিএল দরজা খোলার সম্ভাবনা ছেলের আছে কি না জানতে। ধোনির কাছে একটা ব্যাটও নাকি চেয়েছেন দেশের এক নবীন প্রতিভাকে উত্সাহিত করতে। রবিবার অন্তত যার খুব একটা প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। এমন অবিশ্বাস্য বোলিং স্পেলের পর উত্সাহের নতুন টনিক লাগে নাকি?
১০-০-৪৩-৬!
রোহিত শর্মাকে দিনের দ্বিতীয় বলে তুলে নেওয়া দিয়ে যার শুরু। রবীন্দ্র জাডেজাকে বোল্ড করে যার শেষ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে যে ড্রাইভটা খেললেন রোহিত, মনে হয় না তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তাঁর কাছেও আছে বলে। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘লুজ শট’ বললেও তাকে অপমান করা হয়। এবং ছত্রিশ থেকে চুয়াল্লিশ ওভার ভারতীয় ইনিংসের আট ওভারের একটা সময়ে সাক্ষাত্ ‘মৃত্যুদূত’ হিসেবে আবির্ভূত হলেন মুস্তাফিজুর। আর কচুকাটার নমুনা এ রকম:
রায়না: শর্ট। কাটার মেশানো। টেনিস বলের মতো বাউন্স করে ভারতীয় মিডল অর্ডারের বাঁ হাতির ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের কাছে চলে গেল।
অক্ষর পটেল: সোজা এল, প্যাডে পড়ল এবং এলবিডব্লিউ।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: অফকাটার, খোঁচা ও ড্রেসিংরুম।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: মারাত্মক কাটারটা বুঝতেই পারলেন না। অনেক আগে শটের জন্য ব্যাট বাড়িয়ে দিলেন। বলটা থমকে ব্যাটে লেগে শর্ট কভারে চলে গেল।
সবচেয়ে খারাপ ধোনির জন্যই লাগবে। বহু দিন পর তিনি এ দিন ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বরে উঠে এসেছিলেন। মীরপুরের ভারতীয় ইনিংসে ‘চেষ্টা’ বলে যদি কোনও শব্দ ব্যবহৃত হয়, ধবন ছাড়া ধোনির ক্ষেত্রেই ওটা করতে হবে। ৭৫ বলে ৪৭ ব্র্যান্ড এমএসডি নয়, কিন্তু তাতে টিমকে টেনে সম্মানের তটভূমিতে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ভারত অধিনায়ককে কেউ একটা পার্টনারশিপই দিতে পারলেন না। পিচ-চরিত্র খুব ভুল ধরেননি ধোনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলতে পারছিল না বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত অধিনায়ক দেখলেন, তাঁর হাতে অশ্বিন ছাড়া কোনও স্পিনার নেই। দেখলেন, বিশ্ব ক্রিকেটের ‘বড়দা’ হয়েও তাঁর টিমের প্লেয়াররা মেজাজ হারিয়ে ফেলে চাপে পড়লে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে অহেতুক তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। টিপ্পনী ছোঁড়ে। দেখলেন, এত দিন যে তেতো ওষুধ বিপক্ষকে গিলিয়ে থাকতেন দেশের মাঠে, তা বাঘের ডেরায় এখন ওঁত পেতে নির্নিমেষ অপেক্ষা করছে তাঁরই জন্য। তাঁর টিমের জন্য। নামটা শুধু আলাদা।
ব্রাউন নয়, বাংলাওয়াশ!
দৈনিক আজকাল:
মাশরাফে: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় ফ্লুক ছিল না
ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পরও এতটা সংযম! এই বাংলাদেশকে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন৷ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নাকি অন্যায়ভাবে হারানো হয়েছিল৷ তাই নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল৷ অনেকেই হয়ত ভেবেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলে সংযমের বাঁধ ভাঙবে৷ কিন্তু কোথায় কী! বিশ্বের ২ নম্বর দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই মাশরাফে মোর্তাজাদের? অক্ষর প্যাটেলের বলে ১ রান নিয়ে সাব্বির রহমান দলের জয় নিশ্চিত করার পর মুসফিকুর রহিমরা মাঠে ছুটে এলেন৷ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন৷ ব্যাস, ওইটুকুই৷ বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই৷ দর্শকরা কিন্তু অন্য মেজাজে৷ তাদের আটকাবে কে? সিরিজ জয় নিশ্চিত হতেই মিরপুরের শের-ই-বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতল গোটা বাংলাদেশ৷ সংযমের রমজান মাসে সমর্থকরা একটু যেন অসংযমী৷ এটাই তো স্বাভাবিক৷ ভারতের বিরুদ্ধে ইতিহাস গড়েও মাশরাফে মোর্তাজাদের মনে কিন্তু একটাই জিনিসই ঘুরেফিরে আসছে, তা হল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ৷ ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের থেকেও এটাই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কাছে বড় পাওনা৷ ম্যাচের পর মাশরাফে মোর্তাজা বলছিলেন, ‘ভারতের মতো দেশের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় আমাদের কাছে দারুণ মুহূর্ত৷ তবে তার থেকেও আমাদের কাছে বড় পাওনা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ৷ প্রত্যেক বার আমরা কাছ থেকে ফিরে এসেছি৷ অবশেষে এবার খেলার ছাড়পত্র পেলাম৷’ ঘরের মাঠে এই নিয়ে টানা ১০ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ৷ ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের আগে পাকিস্তানকে ঘরের মাঠে হোয়াইট ওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ৷ ভারতের থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়কেই এগিয়ে রাখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক৷ মাশরাফে বলছিলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় ফ্লুক ছিল না, প্রমাণ করে দিলাম৷ ওদের বিরুদ্ধে আমরা যথার্থ ক্রিকেট খেলেছিলাম৷ বিশ্বকাপ থেকেই আমরা ভাল খেলছিলাম৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পর ভারতকেও হারালাম৷ এই সিরিজ জয়ের জন্য মুস্তাফিজুর রহমানকেই কৃতিত্ব দেব৷ দুটি ম্যাচেই অসাধারণ বোলিং করেছে৷ ওই-ই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে৷’ সামনের সিরিজগুলিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কথাও শোনা গেছে৷ এদিকে, দেশকে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতিয়েও বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস নেই মুস্তাফিজুর রহমানের৷ মাঠের মধ্যে যতটা সাবলীল, মাঠের বাইরে ঠিক ততটাই লাজুক৷ কথাবার্তায় একবারে চৌখশ নন৷ যা কিছু প্রশ্ন ভেসে আসছিল, একটাই কথা, ‘ভাল লাগছে৷’ ইংরেজি একেবারেই বলতে পারেন না৷ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাতেই বলে গেলেন, ‘সতীর্থরা সবাই দারুণ সাহায্য করেছে৷’ ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন দর্শকদের, ‘এই বৃষ্টিতে আমাদের সাপোর্ট করতে আসার জন্য ধন্যবাদ৷’ জীবনের প্রথম দুটি ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন৷ এর আগে জীবনের প্রথম ২ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন জিম্বাবোয়ের ব্রায়ান ভিটোরি৷ তাঁর রেকর্ড ভেঙে দিলেন মুস্তাফিজুর৷ ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে গিয়ে রেকর্ডের কথা জানার পরেও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই৷ লক্ষ্য তৃতীয় একদিনের ম্যাচে নিজেকে আরও ছাপিয়ে যাওয়া৷ রাত বাড়ছিল৷ বাংলাদেশের জনতাও উদ্বেল হয়ে উঠছিল টিম বাসকে ঘিরে৷ তার মধ্যে বাংলাদেশ সমর্থকরা যেভাবে ধোনিকে ‘ব্যারাকিং’ করে গেলেন, সত্যিই দৃষ্টিকটূ লাগছিল৷ যদিও সৌজন্যের দৃষ্টান্ত রেখেছেন বাংলাদেশের নেতা মাশরাফে৷ ম্যাচের পর একাই চলে গিয়েছিলেন ভারতের ড্রেসিংরুমে৷ হাত মেলান ধোনির সঙ্গে৷ আবদার করেন, ভারত অধিনায়কের একটি ব্যাট তাঁর চাই৷ ধোনি বলেন, নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দেবেন৷ আর হ্যাঁ, দাদার মতোই ভাইয়ের জন্য অনুরোধ করেছেন ধোনির কাছে৷ মাশরাফে তাঁকে বলেন, আগামী আই পি এলে মুস্তাফিজুর যাতে কোনও দলে খেলার সুযোগ পান, তা দেখতে৷ এক্ষেত্রেও ধোনি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন৷ তখন মাহিও মনে রাখেননি, মুস্তাফিজুরের হাতেই যে নাস্তানাবুদ হতে হল টিম ইন্ডিয়াকে৷
২৪ ঘন্টা:
বিশ্বকাপের শাপমোচন, ঘরের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের
মীরপুরে ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের। ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
রবিবার সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে ব্যাটিং ধ্বসের সম্মুখীন হয় ভারত। ওপেনিং থেকে টপ অর্ডার ব্যার্থ হয় ভারতীয় ব্যাটিং। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও মুস্তাফিজুরের পেসের সামনে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ। ৬ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙে দেন বাংলাদেশের এই পেসার। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন শিখর ধাওয়ান। ৪৭ রান করেন ধোনি।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই তামিম ইকবালের আউট নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। তামিম ১৩, সৌম্য সরকার ৩৪ রানে আউট হন। ৩৬ রান করে ফিরে গিয়েছেন লিটন দাসও। কিন্তু এর পর আর বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। ৪ উইকেট হারিয়ে অনায়েশেই জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে এই সিরিজ জয় ঐতিহাসিক। এই প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ হারল ভারত। প্রশ্নের মুখে ভারতীয় দলের পার্ফরম্যান্স। এমনকি বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ হারের প্রশ্ন চিহ্ন উঠছে ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়েও।
শেয়ার করুন