গাজা সংকটে অগ্রগতি, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ সম্পন্নের পথে
হোয়াইটওয়াশের মঞ্চ তৈরি
হবে তো? হোয়াইটওয়াশ হবে তো আজ? এই একটি প্রত্যাশার দ্বিধা থরথর চূড়ায় যেন ভর করে
আছে 'সাতটি অমরাবতী'। গোটা দেশের হৃদয় দুলছে আশা-নিরাশার দোলায়। সিরিজ জয় শেষ।
তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। আরও চাই। হোয়াইটওয়াশ চাই-ই চাই। মঞ্চ যে প্রস্তুত করেই রেখেছে
মিরপুর। বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট। আজ চূড়ান্ত এই প্রত্যাশা নিয়েই মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নামছে টাইগাররা। মিরপুর আবারও সারাদেশের কেন্দ্রবিন্দু। আজ
আরেকটি মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। এই মাঠেই তো আগের দুটি সিরিজে প্রতিপক্ষকে
হোয়াইটওয়াশ করেছিল মাশরাফি বাহিনী। আজ আরও একটি নতুন দিনে, নতুন ইতিহাসের
হাতছানি। পারবে তো বাংলাদেশ?
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। নাসির বললেন,
'আমরা এটাকেও আরেকটা ম্যাচ হিসেবেই খেলতে চাই। জিততে চাই। হোয়াইটওয়াশ বা
বাংলাওয়াশ নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছি না। তবে এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না।' নাসিরের শেষ
বাক্যটাই তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের প্রতীকী দৃশ্য। ছাড় না দিলেই জয়
সম্ভব। আর জয় এলেই তো ধবলধোলাই ...!
নাসিরের দশ মিনিট আগে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলে গেলেন ভারতীয় অফস্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন।
তাকে হোয়াইটওয়াশের কথা বলতেই বোধহয় কিছুটা বিব্রত হলেন। বললেন, 'কিসের
হোয়াইটওয়াশ!' প্রশ্নকর্তা এবার বললেন, '৩-০-তে সিরিজ হারা। এখানে এটাকে বাংলাওয়াশও
বলে।' অশ্বিনের উত্তরটা হলো_ 'ও হ্যাঁ, এটা, ভালো কথা_ বাংলাওয়াশ! আমরা বাংলাওয়াশ এড়ানোর
চেষ্টা করব।'
অশ্বিনের কথাতেই পরিষ্কার, শুধু 'বাংলাওয়াশ' এড়ানোর জন্যই নয়, এই একটা ম্যাচ জেতার জন্য
কতটা মরিয়া ভারত। যদি প্রথম দুই ওয়ানডের মতো তৃতীয়টাতেও হারতে হয়, তাহলে যে এ যাত্রায়
বাংলাদেশ থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হবে ক্রিকেট মোড়ল ভারতকে! ফতুল্লার একমাত্র টেস্টটা ড্র
হলো। তিন ওয়ানডের দুটিতেই পরাজিত। বাংলাজয়ের জন্য মরিয়া তো ভারত হবেই!
হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ভারতকে সবার আগে 'রহস্য' এড়াতে হবে। বলা বাহুল্য, সেই রহস্যের নাম
মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের ১৯ বছর বয়সী তরুণ এ বাঁহাতি পেসার বিশ্বখ্যাত ভারতীয়
ব্যাটসম্যানদের কাছে এখন এভারেস্টজয়ের মতো দুরূহ হয়ে গেছেন! প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট
নিয়ে এরই মধ্যে সিরিজসেরা খেলোয়াড় হওয়ার শ্রেষ্ঠ দাবিদার হয়ে গেছেন। গতকাল অশ্বিনও
মুস্তাফিজের প্রশংসা করলেন। শুধু প্রশংসাই করলেন না, আনন্দিত হয়ে বললেন, 'আন্তর্জাতিক
ক্রিকেটের শুরুতেই কাউকে এমন কিছু করতে দেখাটা আমার জন্য আনন্দের।' আর মজা করে
বললেন, 'আমরা তার বিপক্ষে কী করব? তাকে কিডন্যাপ করে ফেলব? কোনোভাবেই এটা সম্ভব
নয়। আমাদেরকে মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। তাকে সঠিকভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করতে
হবে।' অশ্বিন এটাও জানান, যে ফর্মে মুস্তাফিজ রয়েছেন, তাতে তার এ আনন্দ আরও একবার
বিষাদময় করে তুলতে পারেন সাতক্ষীরার এ বোলার। মুস্তাফিজ-রহস্য যে কাটছেই না ভারতের!
এর ওপর আরেকটা 'ঘোড়ার চাল' দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। গতকালই স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে ২০
বছর বয়সী লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনকে। লিখনকে যদি আজ নাও খেলানো হয়, তবু
ভারতের মধ্যে হয়তো একটা মনস্তাত্তি্বক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবেই স্কোয়াডে নেওয়া। আবার
যদি খেলানোও হয়, সেটা আরও বড় চমক হয়ে উঠবে। সেই চমকটা আসতে পারে রুবেল
হোসেনকে বসিয়ে। প্রথম ম্যাচে আরাফাত সানিকে বসিয়ে মুস্তাফিজকে খেলিয়ে সে চমকটাই তো
দিয়েছিল বাংলাদেশ!
ভারতও চমকে গিয়েছিল, যে চমকটা এখন রীতিমতো আততায়ীর ভূমিকা নিয়ে ফেলেছেন। যে
ঘাতক এখন তাদের খালি হাতে দেশে পাঠানোর বন্দোবস্ত প্রায় করেই ফেলেছেন!
রিক্তহস্ত না থাকার ভারতীয় প্রত্যাশা অবশ্য শেষ করে দিতে পারে আবহাওয়া। তবে, প্রশ্ন হলো, এই
আবহাওয়ার দৌরাত্ম্য ভারতের এই অন্যরকম বাংলাদেশ সফরে কখন ছিল না? বৃষ্টির কারণেই
ফতুল্লা টেস্ট বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ার পরও ড্র হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বৃষ্টির
বাধায় খেলে থেমে গেছে। যদিও ম্যাচের ফলাফল পেতে সমস্যা হয়নি। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন
ঢাকায় বৃষ্টিই হয়নি। সারাদিনই ছিল রৌদ্র করোটি। অথচ ম্যাচের দিন ঠিকই ভারতীয় ইনিংসের প্রায়
শেষ দিকে বৃষ্টি এলো ঝুমিয়ে। ৫০ ওভারের ম্যাচ নেমে এলো ৪৭ ওভারে। তৃতীয় ওয়ানডের আগে
পরিস্থিতি আবার উল্টো। গতকাল সারাদিনই ঢাকার আকাশের মন খারাপ। বৃষ্টি নেমেছে নিয়মিত
বিরতিতে। এমন আবহাওয়াতেও অবশ্য দু'দলই নিজেদের প্রস্তুতি সেরেছে মিরপুরে। একই সময়ে।
ইনডোরে বাংলাদেশ। একাডেমি মাঠে ভারত। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস হলো, এই প্রস্তুতি বুমেরাং
হয়ে যেতে পারে। আজ নাকি সারাদিনই বৃষ্টি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে!
বৃষ্টিতে খেলা না হলে ভারতের মন খারাপ হবে যে কারণে, বাংলাদেশেরও হবে ঠিক সে কারণেই।
ভারত যেমন জিততে চায়, বাংলাদেশও তো জিততে চায়। তা কোনো খেলোয়াড়ই তো খেলতে এসে
ড্রেসিংরুমে অলস সময় কাটাতে চান না। তাই গতকাল নাসির হোসেন সাফ জানিয়ে দিলেন, 'আমরা
খেলতে চাই। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে খেলা হলে অনেক কিছু শেখার আছে।'
ভারতেরও কি কিছু শেখার নেই? অন্তত এটা তো শেখা যায়ই যে, কীভাবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানো
যায়! সে এক শিক্ষা বটে। ভারতের সর্বশেষ কোনো দলের বিপক্ষে ধবলধোলাই হওয়ার ঘটনা সেই
১৯৮৯ সালের মার্চে। তখনকার একমেবাদ্বিতীয়ম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিবীয় মাটিতে গিয়ে
৫-০-তে সিরিজ হেরে এসেছিল ভারত। এরপর বেশ কয়েকবারই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও
মুখ রক্ষা করেছে ভারত। সম্ভাব্য কাছাকাছি সময়টা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষে তিন ম্যাচের প্রথম দুটিতে হেরে যাওয়া ভারতের মান বেঁচেছিল সেঞ্চুরিয়ানে তৃতীয় ম্যাচটি
বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যাওয়ায়।
বাংলাদেশের জন্যও অবশ্য হাতছানি দিচ্ছে রেকর্ড। এর আগে টানা তিন সিরিজে জয়ের রেকর্ড
অনেক দলেরই আছে। তবে, প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করার কৃতিত্বটা আছে পাকিস্তান ও
নিউজিল্যান্ডের। নিউজিল্যান্ড ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে তিন, তিন ও এক ম্যাচের সিরিজে এমন
ইতিহাস গড়েছিল। পাকিস্তান ২০০৮ সালে যথাক্রমে পাঁচ, পাঁচ ও তিন ম্যাচের সিরিজে প্রতিপক্ষকে
করেছিল হোয়াইটওয়াশ। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতেছে ডিসেম্বরে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতল তিন ম্যাচের সিরিজ। আরেকটা ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশও সেই দারুণ
অভিজ্ঞতার স্বাদ পাবে। মিরপুরে আজ ধবলধোলাইয়ের মঞ্চে ইতিহাসের হাতছানি!
শেয়ার করুন