আপডেট :

        আটককেন্দ্রে মেক্সিকান অভিবাসীর মৃত্যু, চলতি বছরে আইসিই হেফাজতে ১৪তম প্রাণহানি

        অরেঞ্জ সিটি কাউন্সিলের অনুমোদন: দুর্ঘটনাপ্রবণ ট্রাফিক সার্কেলে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা

        লস এঞ্জেলেসে ২.৬২ বিলিয়ন ডলারে কনভেনশন সেন্টার সম্প্রসারণ, লক্ষ্য ২০২৮ অলিম্পিক

        "৫জি প্রযুক্তিতে আফ্রিকার ধীরগতি: কভারেজ সীমিত ১.২ শতাংশ"

        "কষ্ট আমারই বেশি": তাহসানের বিদায়ী বার্তায় উঠে এলো কী রহস্য?

        ডেম্বেলের সোনার বল জয়ের মাঝে পিএসজির কান্না

        কাল নিউইয়র্কে: প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনের উদ্বোধনে অংশ নেবেন

        প্যালেস্টাইন স্বীকৃতির তালিকায় ১৫৬ নাম, বাংলাদেশের ৩৭ বছরের অটুট বন্ধুত্ব

        আর্জেন্টাইন পর্বতারোহী ক্যালিফোর্নিয়ায় ২,০০০ ফুট নিচে পড়ে নিহত

        স্টাইভেসান্ট কেলেঙ্কারি: এক বাংলাদেশি ছেলের হাতে নকলের সাম্রাজ্য

        “যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না, তা ঘটবে আগামী ৫ মাসে”: মান্না

        দক্ষ কর্মী ভিসার জন্য বছরে ১ লাখ ডলার ফি আরোপ

        নিয়মিত ভাতের সঙ্গে লেবু খেলে কী কী পরিবর্তন হয়?

        কর আইনজীবী কর ফাঁকির অভিযোগে সমালোচনার মুখে

        ছবির শুটিংয়ে দুর্ঘটনায় জুনিয়র এনটিআর আহত

        ‘জুঁইফুল: সাবিনা ইয়াসমিন’ এবার ঘরে বসে দেখা যাবে

        দশ বছর পর চাকসুর অনার বোর্ডে ফিরল মান্নার নাম

        ৩০ টাকার পটোল এখন কারওয়ান বাজারে ৭০ টাকায় বিক্রি

        কানাডা ঘোষণা: বাংলাদেশে যাত্রীদের জন্য বাড়তি সতর্কতা

        গাজায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক

আন্দামান সাগরে সিলেটের ছেলে মোহাম্মদ কয়েসের জীবন-মৃত্যুর লড়াই

আন্দামান সাগরে সিলেটের ছেলে মোহাম্মদ কয়েসের জীবন-মৃত্যুর লড়াই

আমার নাম মোহাম্মদ কয়েস। গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলায়। আমি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য গত মার্চ মাসে বাড়ী থেকে বের হই। আমার মনে আছে তারিখটা। ১৯শে মার্চ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখে আমি রওনা হয়েছিলাম।
গত দুমাসের বেশি সময় ধরে আমি সাগরে ছিলাম। এই কয়েক মাস কিভাবে ছিলাম, বলে বোঝাতে পারবো না। আমাদের নৌকায় খাবার ছিল না, পানি ছিল না। আমাদের ওপর প্রতিদিন নির্যাতন চলতো। আমাদের গালি-গালাজ করা হতো। পানিতে ফেলে দিয়ে ডুবিয়ে মারতে চেয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি রক্ষা পেয়েছি।

আমরা বঙ্গোপসাগর থেকে যখন রওনা হই, তখন প্রথমে ছোট ছোট নৌকায় তোলা হয়। অনেকগুলো নৌকা ছিল। এই সব ছোট ছোট নৌকার মানুষ সব একদিন একটা বড় নৌকায় তোলা হলো। প্রায় এক হাজার লোক। বার্মার লোক, বাংলাদেশের লোক, দুই দেশের লোকই আছে। পাচারকারীরা বললো তোমাদের এবার মালয়েশিয়া নিয়ে যাব। তোমরা মালয়েশিয়ায় ঢুকে যাবা।
প্রায় ৭২ ঘন্টা ধরে আমাদের নৌকা চলেছিল। কিন্তু যেদিন আমরা রওনা হই, সেদিন নৌকায় ভয়ংকর মারামারি শুরু হলো। পাচারকারীরা একটা লোককে গুলি করে মেরে ফেললো। নৌকায় সবাই ভয় পেয়ে গেল।
তিন দিন ধরে চলার পর নৌকাটা সাগরের যেখানে এসে থামলো, সেখানে একটা স্পীডবোট আসলো। আমাদের নৌকার ক্যাপ্টেন আর তাদের সব লোকজন সেই স্পীডবোটে পালিয়ে গেল। সাগরের মাঝখানে আমাদের এই অবস্থায় ফেলে রেখে।
এরপর আমাদের তো খুব অসহায় অবস্থা। নৌকায় তেল নাই। ইঞ্জিন নষ্ট। পানি নাই। খাবার নাই। তারপর বার্মার লোকরা জাহাজের দায়িত্ব নিল। এরপর তারা টর্চার শুরু করলো আমাদের বাংলাদেশিদের ওপর। যখন খুশি আমাদের মারধোর করে।
আমাদের নৌকা কোথায় কোনদিকে যাচ্ছে, কিছুই আমরা বুঝতে পারি না। কিছুদিন পর ইন্দোনেশিয়ার নেভির লোক এসে আমাদের নৌকা ধরে। ওরা আমাদের নুডলস এবং পানি দেয়। কিন্তু বার্মার লোকজন আমাদের নুডলসও খেতে দেয়নি, পানিও খেতে দেয়নি। আমাদের বাংলাদেশি লোক সবাই অসুস্থ।
ইন্দোনেশিয়ান নেভি আমাদের নৌকাটা মালয়েশিয়ার সীমানায় এনে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এরপর আমরা পড়ি বিপদে। এরপর আসলো মালয়েশিয়ান নেভি। ওরাও একইরকম খাবার দিল। নুডলস আর পানি দিল। আমাদের নৌকা টেনে নিয়ে তারাও দূর সমূদ্রে ফেলে দিয়ে চলে গেল।
এরপর আমরা কষ্টে আছি। বিশদিন ধরে সাগরে ভাসছি। সাগরের পানি খেয়ে আছি। সবার ডায়ারিয়া। কেউ দাঁড়াতে পারে না। এই বিশ দিন একবার ইন্দোনেশিয়ান নেভি আসছে, একবার মালয়েশিয়ান নেভি আসছে। সবাই খাবার দিয়ে চলে গেছে। কেউ সাহায্য করেনি।
সাগরের পানি, ঝিনুক খেয়ে বেঁচে ছিলাম। কেউ প্রস্রাব খেয়ে বেঁচে ছিল।
জাহাজে একদিন মারামারি লাগলো বার্মা আর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে। বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ফেলে ওরা মারলো।
একদিন নৌকা ফুটো হয়ে গেল। পানি উঠতে লাগলো। তখন ইন্দোনেশিয়ার যে ফিশিং বোটগুলো আছে, ওরা এসে আমাদের উদ্ধার করলো। সারারাত ধরে চালিয়ে আজ সকালে (শুক্রবার) ওরা আমাদের ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে আসে। এর মধ্যে দেড়শো লোক মারা গেছে পানিতে পড়ে।
যারা বুড়ো ছিল, যারা ডায়ারিয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল, ওরা বাঁচেনি।
এখন ভালো আছি। খাবার দাবার পাচ্ছি। চিকিৎসা পাচ্ছি।
আমাদের নিয়ে এখন কি করবে জানি না। আমরা অনুরোধ করেছি, আমাদের দেশের লোকজনকে খবর দাও।


শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত