যুক্তরাজ্যের সিলেটী পরিবারটি এখনও নিখোঁজ
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত একটি পরিবার সিলেট ঘুরে যুক্তরাজ্য যাবার পথে নিখোঁজ হয়ে
গেছে। তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্যের পুলিশ ধারণা করছে, বেডফোর্ডশায়ারের
লুটন শহরে বসবাসরত ১২ সদস্যের এ পরিবারটি হয়তো তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে।
বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে যাবার পর গত ১৭ই মে থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ স্বজনদের
বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আত্মীয়রা। তারা বলছে এটি খুবই
বিচলিত হবার মতো ঘটনা। নিখোঁজ ওই পরিবারের ১২ জন সদস্যের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে।
এছাড়া দু’জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন যাদের একজন নারী ক্যান্সারের রোগী এবং বয়স্ক পুরুষটি
ডায়াবেটিসের রোগী। তুরস্ক থেকে সিরিয়া যাওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করলেও বেডফোর্ডশায়ার পুলিশ
জানিয়েছে, পরিবারটি ঠিক কবে নাগাদ সীমান্ত অতিক্রম করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য
নেই। পুলিশ এ বিষয়টির তদন্ত চালাচ্ছে। পরিবারটির কোনো সদস্যের নাম সন্ত্রাসীদের তালিকায় ছিল
কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। পুলিশকে জানিয়েছে, গত ১০ই এপ্রিল এই পরিবারটি
বাংলাদেশে যায়। এক মাস পর ১১ মে তারা যুক্তরাজ্যে ফেরার জন্য রওনা হন। ১১ই মে তারা
ইস্তাম্বুলেও পৌঁছায়। কিন্তু এর তিন দিন পর তাদের লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা থাকলেও
তারা আসেনি। কমিউনিটি নেতা আশুক আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি ৩৫ বছর ধরে
ওই পরিবারটিকে চেনেন। পরিবারটির প্রধান ৮২ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সাথে তিনি
সবসময় মসজিদে যাতায়াত করতেন। তিনি বলেন “তারা ছুটি কাটাতেই বাংলাদেশে গিয়েছিল এ
বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। অনেকে তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশে যায়, যুক্তরাজ্যে আসে। কেন যে
তারা আসলো না সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। এখানকার বাঙালিরা সবাই খুব উদ্বিগ্ন। এরা তিন প্রজন্ম
একসাথে সফর করছিল"। আশুক আহমেদ বলছেন, “সিরিয়ায় ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীতে পরিবারের
কোন সদস্য যোগ দিয়েছে কিনা সে বিষয়েওতো কেউ কিছু জানেনা”। তবে আহমেদ এটাও বলেছেন
যে ওই পরিবারের কয়েকজন নারী উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করছেন
স্থানীয়রা। তারা সন্দেহ করছেন, গ্রেফতার এড়াতে তারাই পুরো পরিবারটি নিয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন।
লুটনে ওই পরিবারের প্রতিবেশীদের একজন সৈয়দ হুসাইন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পরিবারটি
এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতে গেছে এবং খোঁজ-খবর
করেছে। মিঃ হোসাইন বলেন, “আমি শুনেছি, তারা সিরিয়া চলে গেছে। বয়স্ক দুজনের জন্য খারাপ
লাগছে। খুব সম্ভবত এসবের কিছুই তারা জানেন না"। মিঃ মান্নানের আগের স্ত্রীর দুই ছেলেও লুটনে
থাকেন, তারাই পরিবারটির নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশকে জানায়। তবে সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ
থেকে তাদের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। নিখোঁজ
পরিবারের যেসব আত্মীয় যুক্তরাজ্যে বাস করছে তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“স্বজনদের এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভেঙে পড়েছি। কারণ এ আচরণ তাদের
স্বভাববিরুদ্ধ।” আশুক আহমেদ বলেন, ওই পরিবারের একজন যুক্তরাজ্যে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুই
সপ্তাহ আগে যোগাযোগ করেছে বলে তিনি শুনেছেন। “আমি শুনেছি, ফোনে তারা স্বজনদের বলেছে যে
তারা নিরাপদে আছে এবং তাদের নিয়ে চিন্তা করতে মানা করেছে"। পুলিশও বলেছে, যুক্তরাজ্যে থাকা
স্বজনদের সঙ্গে পরিবারটি যোগাযোগ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তবে তারা কোথায়
রয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি। 'তুরস্কে পৌঁছার পর ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল'
ব্রিটেনে ফেরার পথে নিখোঁজ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পরিবারটির সদস্যদের পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও গ্রামে। এই গ্রামে তারা ছুটি কাটাতে এসেছিলেন গত ১১ই এপ্রিল
এবং সেখানে একমাস ছিলেন। ১২ সদস্যের নিখোঁজ পরিবারটির কর্তা ৮২ বছর বয়স্ক আব্দুল মান্নান
বহু বছর আগে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তার ছোট ভাই আব্দুল লতিফ এখনও পৈত্রিক
নিবাসে থাকেন। সেখান থেকে লতিফ টেলিফোনে বলছিলেন, বয়স্ক ভাইসহ পরিবারের ১২ জন
সদস্যের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, তুরস্কে পৌঁছার পর তার ভাইয়ের সাথে
যোগাযোগ হয়েছিল এবং তখন তারা জানিয়েছিল, তারা দু’দিন ইস্তাম্বুলে থেকে লন্ডন যাবে।কিন্তু
এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। তিনদিন পর লতিফ জানতে পারেন, তার ভাই ও পরিবারের সদস্যরা
লন্ডন যায়নি। আব্দুল লতিফ আরও জানিয়েছেন, লন্ডনে না পৌঁছানোর খবর পেয়ে, তারা লন্ডনের
পুলিশকে তা জানান। লন্ডনের পুলিশ তাদেরকে জানিয়েছে, ১২জন সদস্যের পরিবারটি তুরস্কের কোন
ঠিকানা দেয়নি।সেখান থেকে তারা অন্য কোথাও চলে গেছে। এটুকুই তারা জানতে পেরেছেন। আব্দুল
লতিফ উল্লেখ করেছেন, অনেক বছর আগে তার ভাই আব্দুল মান্নানের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর
দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী এবং এই সংসারের ছেলে মেয়ে নাতিসহ ১২ জনই নিখোঁজ হয়েছে।
প্রথম ঘরের দুই ছেলে লন্ডনে থাকে এবং তারাই সেখানে পুলিশকে জানিয়েছিল। মি: লতিফ বলেছেন,
ছুটি কাটানোর সময় একমাসে তারা তার ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোন অস্বাভাবিক
আচরণ দেখেননি। তাদের কেউ জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকতে পারে, এমন ধারণাও তারা
পাননি। তবে তারা শুনেছিলেন, পরিবারটির বাংলাদেশে আসার আগে লন্ডনের কাছে লুটনে তাদের
বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল এবং হিথ্রো বিমানবন্দরে পরিবারটির একজন মেয়ে সদস্যকে পুলিশ জঙ্গি
সংগঠনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আব্দুল লতিফ আরও জানিয়েছেন, তার ভাই এবং অন্যরা
যুক্তরাজ্যের নাগরিক হওয়ায় তারা লন্ডনের পুলিশকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের পুলিশকে কিছু
জানাননি। এদিকে গ্রামটির ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেছেন,পরিবারটির গ্রামে
ছুটি কাটানোর সময় তার সাথে দেখা হয়েছে এবং অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। এছাড়া পরিবারটির
অন্য সদস্য যারা গ্রামেই থাকেন, তারা প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত বলেই তারা জানেন।
শেয়ার করুন