সালাহউদ্দিন: যারা জামানত হারাবে, তাদেরই দরকার সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন
সিসিক নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের ভোট পড়বে কার বাক্সে
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। তবে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। তাদেরকে ভোট দিতে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন বলে ধারণা করা যায়। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও কেন্দ্রে আসবেন।
এই ভোটারদের পক্ষে টানার ছক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর অন্য মেয়র প্রার্থীরা ‘আওয়ামী বিরোধী’ এই ভোট নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটে প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতাদের ইতোমধ্যে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন না।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ২১ জুন। এতে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। ফলে নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপর পাঁচ প্রার্থী হচ্ছেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র মো. আবদুল হানিফ কুটু, মো. শাহ জামান মিয়া, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে এবার প্রার্থী হননি সিলেটের বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। তবে কাউন্সিলর পদে বিএনপির ৪৩ জন নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতপন্থী ২০ নেতা-কর্মী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের অনুসারী দলীয় কর্মীরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন।
প্রচারের শুরুর দিকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম বাবুল দুজনই বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। আরিফের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও লুটপাটের অভিযোগ তোলেন তারা। তবে গত কয়েকদিন ধরেই আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুলকে আরিফের সমালোচনার বদলে প্রশংসা করতে দেখা গেছে। বিএনপি ও আরিফ অনুসারীদের ভোট নিজেদের পক্ষে আনতে আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুল এই কৌশল নিয়েছেন বলে তাদের অনুসারীরা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে এক পথসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও বিএনপির ভোট নিজেদের পক্ষে আনার কথা বলেছেন। নানক বলেন, ‘বরিশাল সিটির ভোটের ফল প্রমাণ করে বিএনপির ভোটাররাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। সিলেটেও এমনটি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিএনপির লোকজনও আনোয়ারুজ্জামানকে ভোট দেবেন। তাদের ভোট নিজেদের পক্ষে আনার লক্ষ্যেই আপনাদের কাজ করতে হবে।’
নজরুল ইসলাম বাবুলও বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজের পক্ষে টানতে কাজ করছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ বিরোধিতা থেকে এই অংশের ভোটাররা লাঙলেই ভোট দেবেন বলে তার বিশ্বাস। সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি। সবশেষ ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের ফল অনুসারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পান ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া জামায়াতের তৎকালীন মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পান ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন পান ২ হাজার ১৯৫ ভোট। গত নির্বাচনের সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড ছিলো। এবার ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২টিতে। ভোটার সংখ্যাও বেড়ে দিগুণ হয়ে গেছে। বিএনপির নেতকর্মীরা এবার ভোটকেন্দ্রে যাবেন না জানিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘আমাদের দলের যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাই তারা আর বিএনপির কেউ নন।
‘এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে আমাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। এছাড়া এই ভোট নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন জামায়াত ইসলামী সিলেট মহানগর শাখার আমির ফখরুল ইসলামও। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে কেউ ভোট দিতে গেলে দল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকীয় পদে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপি থেকে না করলেও দলটির অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। দলটির কউন্সিলর প্রার্থীরাই তাদেরকে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। জামায়াতের ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ‘এই ভোটারদের নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। এসব ভোট কিভাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আনা যায় সে পরিকল্পনা চলছে। তিনি বলেন, এই ভোটারদের একটা অংশের ভোট জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের বাক্সে যেতে পারে। তবে সম্প্রতি বাবুলের ব্যক্তিগত একটি ভিডিও ফাঁস হওয়া আমাদের পক্ষে কাজ করবে।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র করেই আমাকে দমানো যাবে না। এই নগরে লাঙ্গলের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে সব দল-মতের ভোটাররা এবার আমাকে ভোট দেবেন।’ আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের ভোটাররা খুব সচেতন। তারা বুঝে-শুনেই ভোট দেন। কার পক্ষে নগরের উন্নয়ন করা সম্ভব তা সবাই বুঝতে পারছেন। ফলে নিজেদের প্রতিনিধি বাছাইয়ে তারা ভুল করবেন না।’
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন