লন্ডনী সেজে পঞ্চম বিয়ে করতে গিয়ে বর শ্রীঘরে
সিলেটের বালাগঞ্জের হোসেনপুর গ্রামে মোকামপাড়া শেখপাড়া মোকাম বাড়ি গ্রামের মৃত কনা মিয়ার পুত্র দেলোয়ার হোসেন বুলবুল (৪১) ভূঁয়া লন্ডনি সেজে একাধিক বিয়ে নিয়ে এলাকার চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর প্রতারনায় ইতিমধ্যে নি:স্ব হয়েছে বিভিন্ন এলাকার একাধিক পরিবার। ২০১১ সালে ওসমানীনগর উপজেলার গলমুকাপন গ্রামের লন্ডন প্রবাসী নাঈমা রহমানকে বিয়ে করেন দেলোয়ার । অজানা কারণে সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি।
এদিকে লন্ডনি কন্যার স্পর্শ পেয়ে ভূয়া লন্ডনি সেজে শুরু হয় প্রতারক দেলোয়ারের বহুবিবাহ কর্মসূচী। তার নিত্য নতুন পরিবেশ উপযোগি অভিনয়ের মন্ত্রে মুগদ্ধ হয়ে কনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অভিভবকরা দিলোয়ারের প্রতারনার শিকারে পরিনত হন। এরপর শুরু হয় নির্মম কাহিনী। একের পর এক মোটার অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন কনের পক্ষ থেকে। অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে একর পর এক বিবাহ করে বিয়ে পাগল দিলোয়ার। প্রতিটি বিয়ের অবস্থান ভিন্ন জেলা। বিয়ে করে নানা অজুহাত দেখিয়ে কোন স্ত্রীকে তার বসত ঘরে তুলেননি। ইত্যাদি কারণে কনের পক্ষগণ তার বহু বিবাহ ধরতে পারেননি।
অন্য দিকে কনের পক্ষরা চতুর দিলোয়ার প্রতারনা যখন বুঝতে পারেন তখন সেখান থেকে পলায়ন করে অন্যত্র নতুন বিয়ের কার্যক্রম শুরু করে দিলোয়ার। তার বহুবিবাহ কর্মসূচী সফলে রয়েছে একাধিক প্রতারক বন্ধু-বান্ধব। যারা তার গুন কীর্তন ও চারিত্রিক সনদ প্রদানে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। বিনিময়ে তারা দিলোয়ারের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে থাকে। কাবিন নামা মোতাবেক তার বিয়ে সংখ্যা পাওয়া যায় ৪টি। তবে স্থানীয়দের দাবী কাবিন ছাড়াও আরোও একাধিক বিয়ে রয়েছে দিলোয়ারের।
অবশেষে পঞ্চম বিয়ে করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে ২৫ ডিসেম্বর ওসমানীনগরে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন দিলোয়ার। পুলিশ তাকে তার নানার বাড়ি ওসমানীনগর উপজেলার গলমুকাপন গ্রাম থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে সে শ্রী ঘরে অবস্থান করছে। তার প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে নি:স্ব হয়েছেন কনের অভিভাবকগণ। কনের ভবিষ্যত জীবন নিয়ে অন্ধকার দেখছেন অভিভাবকরা।
অভিযোগে জানা যায়, সিলেটের বালাগঞ্জের হোসেনপুর (শেখপাড়া) মোকাম বাড়ি গ্রামের মৃত কনা মিয়া দিলোয়ার হোসেন বুলবুল (৪১) ২০১১ সালে ওসমানীনগর উপজেলার গলমুকাপন গ্রামের লন্ডন প্রবাসী নাঈমা রহমানকে বিয়ে করে। অজানা কারণে সে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর সে ভূঁয়া লন্ডনি সেজে শুরু করে প্রতারনা ব্যবসা। তার প্রতারনার মূখ্য ভূমিকা পালনকারীরা হচ্ছেন দেলোয়ারের ভাবি জেসমিন আক্তার ও নিকতাত্মীয়, ওসমানীনগর উপজেলার পাঁচ পাড়া গ্রামের তোফায়েল আহমদ।
২০১৩ইং সালের ৩০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার একাটুনা কচুয়া গ্রামের হাজী সাইফ উদ্দিনের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তামান্না ফেরদৌস সোনিয়া (২০) কে ২০লক্ষ টাকার কাবিন দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতারক দেলোয়ার কনের অভিভাবকদের কাছ থেকে লন্ডন নেয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রায় ১৬লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি সোনিয়াকে শারীরিক নির্যাতনও করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সোনিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে সোনিয়া বেগম বাদি হয়ে মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে দেলোয়ারসহ তাঁর ভাবি জেসমিন আক্তার ও নিকতাত্মীয় তোফায়েল আহমদ কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
সোনিয়ার অভিভাবকরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, দেলোয়ার ২০১৪ সালের ৩ আগষ্ট বি-বাড়িয়া জেলার সড়াইল উপজেলার চৌধুরী পাড়া শরিয়তপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আজিজুর রহমানের মেয়ে কলেজ ছাত্রী সৈয়দা সানজিদা বেগম (১৮) কে ২৫ লক্ষ টাকার কাবিন মূলে বিবাহ করে। কিছুদিন পর প্রতারক দিলোয়ার তৃতীয় স্ত্রী সানজিদার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে দেলোয়ার একই কায়দায় চতুর্থ বিয়ে করে নবীগঞ্জ থানার ইনাতগঞ্জ এলাকার মৃত হাজী আলাউদ্দিনে মেয়ে আয়শা বেগমকে। ২০১৫ সালের ৭ আগষ্ট গোপন সুত্রে জানতে পারেন দেলওয়ার নতুন শশুরুর বাড়ি ইনাতগঞ্জে যাচ্ছেন। যাওয়ার পথে সানজিদা এলাকাবাসির সহযোগিতা নিয়ে দেলোয়ারকে আটক করেন। খবর পেয়ে ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দিলোয়ার কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ কর্তৃক দেলোয়ার আটকের খবর পেয়ে ২য় স্ত্রী সোনিয়া তাঁর অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে নির্মম ঘটনার বর্ণনা করেন । আটকের দুদিন পর আইনের ফাঁক ফোখড়ে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে কিছু দিন দেলোয়ার ও তাঁর সহযোগিরা। আত্মগোপনে চলে গেলেও বন্ধ হয়নি তার বহু বিবাহ কর্মসূচি। এ দিকে ২য় স্ত্রী সোনিয়ার দায়ের করা মামলায় প্রতারক দিলোয়ারে বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন বিজ্ঞ আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারীর পর সোনিয়ার অভিভাবকরা পরিচয় গোপন রেখে অভিনব কায়দায় মোবাইলে আবারও দিলোয়ারের সাথে বিয়ের আলোচনা করেন। বর দেখার দিন তারিখ ধার্য করা হয়। আলোচনা অনুযায়ী গেল বছরের ২৫ডিসেম্বর প্রতারক দিলোয়ারের মামার বাড়ি ওসমানীনগরের গলমুকাপন এলাকায় বর দেখার দিন ধার্য করা হয়।
দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া অভিবাবকদের সঙ্গে নিয়ে যান দিলোয়ারের মামার বাড়িতে। এ সময় বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর থানার পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে দিলোয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিস্তু তার প্রতারণার শিকার নারীগণ ও তার অভিভাবকরা দেখছেন ভবিষ্যত জীবন অন্ধকার। কনের অভিভাবকসহ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী হচ্ছে, প্রতারক দিলওয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। যাতে আর কোন প্রতারক মেয়েদের জীবন নিয়ে চিনিবিনি খেলা করতে না পারে।
দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া ও তৃতীয় স্ত্রী সৈয়দা সানজিদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, ভূঁয়া লন্ডনি সেজে আমাদের ভবিষ্যত জীবন অন্ধকার করে দিয়েছে দেলোয়ার। প্রতারক দেলোয়ার তাঁর সহযোগিদের নিয়ে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। বিয়ের পর নানা কৌশলে আমাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বড় অংকের নগদ টাকা পয়সা নিয়ে গোটা পরিবারকে নি:স্ব করে দিয়েছে। আমরা একাধিকবার তাকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দিলেও সে আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে পুনরায় তার প্রতারনা শুরু করে। আমাদের মত আর কোন মেয়ের জীবন যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য আমরা দেলোয়ারসহ তাঁর সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বালাগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বলেন, নারী নির্যাতন মামলার পলাতক আসামী হিসেবে দিলোয়ারকে ওসমানীনগর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে আটকের পর একাধিক মাধ্যমে জানতে পারি, সে ভূয়া লন্ডনী সেজে একাধিক বিয়ে করেছে।
শেয়ার করুন