ট্রাক চায় নৌকার পথ আটকাতে
জলের বাহন নৌকা। আর স্থলের বাহন ট্রাক। সাধারণত এই দুই বাহনের বিরোধ লাগার কারণ নেই। কিন্তু সিলেট-২ আসনে এমনটিই ঘটতে যাচ্ছে। এখানে নৌকার পথ রুদ্ধ করতে চায় ট্রাক।
গত দুটি নির্বাচনে মহাজোট শরিকের হাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ; যার কারণে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন নেতাকর্মীরা। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে তাদের।
বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে পরপর দু’বার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিশ্বনাথের পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই জোরেশোরে প্রচারের মাঠে শফিকুর রহমানের নেতাকর্মীরা।
এমনকি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে প্রবাস থেকে দেশে চলে এসেছেন তার পরিবারের সদস্যরাও।
অনুসারীদের দাবি, গত দুই দফায় উন্নয়নবঞ্চিত এ এলাকার মানুষ এবার নৌকার প্রার্থীকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করতে মুখিয়ে আছেন।
নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে প্রচারে নেমেছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী স্ত্রী তাহমিনা চৌধুরী, ভাই আজিজুর রহমান চৌধুরী, হামিদুর রহমান চৌধুরী ও বোন শিরিন চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরপরই তারা যুক্তরাজ্য থেকে দেশে চলে আসেন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, টানা দশ বছর এ আসনে দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। তাই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নিরঙ্কুশ জয়ের প্রত্যাশা তাদের।
স্থানীয় ভোটার ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী, নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে মহাজোট শরিককে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এলাকায় তাঁর বিচরণ ছিল সবসময়। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে এখানকার আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এ কোন্দলের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হতে থাকে। তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের সময় এই দুই হেভিওয়েট নেতার মাঝে সমঝোতা হয়; যার কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান জানান, টানা দশ বছর এ আসনে দলীয় কোনো প্রার্থী না থাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল মানুষ। এবার মানুষ নৌকা প্রতীক পেয়ে খুশি। চারদিকে নৌকার যে সুর উঠেছে তাতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু জানান, দলের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে দিনরাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চারদিকে নৌকার জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
দলের একাংশের নেতারা বলছেন, একচেটিয়া বিজয়ের আশা করতে পারেন না নৌকার প্রার্থী। কারণ শফিকুর রহমানকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিশ্বনাথের পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান। নানাভাবে তার মনোনয়ন আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মুহিবুরের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিশ্চিত হয়েছে। জাতীয় পার্টির শক্ত প্রার্থী থাকায় এবং বিশ্বনাথ এলাকায় মুহিবুরের গ্রহণযোগ্যতার কারণে চাপে থাকবে নৌকা। নির্বাচনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নেমেছেন মুহিবুর রহমান।
এই দুই প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচনে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, গণফোরামের বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান, তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক, কংগ্রেস মনোনীত মোহাম্মদ জহির এবং এনপিপি প্রার্থী মনোয়ার হোসেন।
বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ ৫ বার, জাতীয় পার্টি ৩ বার এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ২ বার এবং গণফোরাম মনোনীত প্রার্থী একবার জয় পেয়েছেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন