পর্যটকদের আনাগোনায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে জাফলং ও বাকি পর্যটনকেন্দ্র গুলো
দীর্ঘ বিরতির পর সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে ঈদুল আজাহার ছুটিতে এ অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলো ছিল পর্যটকশূন্য। তবে আজ শুক্রবার বৃষ্টি মাখা সিলেটের নয়নাভিরাম চা-বাগানগুলোতে বেশ কিছু পর্যটক দেখা যায়। সৌন্দর্যের আরেক লীলাভূমি জাফলংয়েও ছিল বেশ ভিড়। এসব স্পটে বিভিন্ন পণ্যের পসরা বিছিয়ে বসেছেন দোকানীরা। সংশ্লিষ্টদের আশা, সিলেটের সাদাপথর, জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, লালাখাল, পান্থুমাই, মায়াবী ঝরনাসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলো আবার জমে উঠবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ পর্যটকদের আনাগোনায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে জাফলং। পিয়াইন নদীর শীতল পানি ও মায়াবী ঝর্ণায় মানুষ ভিজছে। ঘুরছেন চা-বাগান, বনাবনানী ও পাথুরে রাজ্যে। জিরো পয়েন্টে যেন পা ফেলার ঠাঁই নেই। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ অন্য সংস্থার দায়িত্বশীলরাও বেশ তৎপর।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুর থেকেই পর্যটকরা জাফলং পর্যটনস্পটে ভীড় করতে শুরু করেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রায় ১০ হাজার পর্যটকের জড়ো হয়েছেন সেখানে।পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরাফেরা করে পর্যটকরা যাতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সে লক্ষে কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। হ্যান্ড মাইকিং করে, দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা।
সিলেটের অন্য পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে সাদা-পাথর, বিছানাকান্দি, লালাখাল, রাতারগুল। এসব স্পটে সারা বছরই বেড়াতে আসেন পর্যটকরা। আগে বর্ষা মৌসুমেও এসব স্পটে পর্যটকের ভিড় থাকলেও এবার চিত্র ছিল ভিন্ন। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে এই জনপদ একাকার ছিল এতদিন। এতে পর্যটকরা যেমন বঞ্চিত হন, তেমনি পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধস নামে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ঈদের ছুটিই এ অঞ্চলের পর্যটন মৌসুম। কিন্তু এবারের ঈদে আকস্মিক বন্যায় সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে সিলেটের পর্যটন খাতে অন্তত তিনশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, সিলেট পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল। ঈদের ছুটিতে সিলেটে পর্যটকের ঢল নামে। তবে এবার বন্যার কারণে এই খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে।
সিলেট টুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি হুমায়ূন কবির লিটন ইত্তেফাককে বলেন, বন্যার পানি কমলেও এখনো সেভাবে পর্যটক আসছেন না। শুক্রবার কিছু পর্যটক এসেছেন।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে সিলেটের ৩০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। শুধু এগুলোতেই এই এ ঈদে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হতো। বন্যার কারণে বিশাল লোকসান হচ্ছে।
সিলেটে চলতি মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পর দুই দফা পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্যার কারণে প্রথম ধাপে গত ৩০ মে বন্ধ ঘোষণার পর ৭ জুন পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জুন থেকে আবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সবশেষ গত ২৩ জুন থেকে পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. রতন শেখ বলেন, প্রচুর পর্যটক এসেছেন জাফলংয়ে। গোয়াইনঘাটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন