আপডেট :

        দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারে তদন্ত শুরু, কর্মকর্তা নিয়োগ

        গাজায় শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে পুতিন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

        আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পোর্টল্যান্ডে সৈন্য পাঠালেন ট্রাম্প

        ট্রাম্পের নির্দেশে শিকাগোতে ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন

        স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে কংগ্রেসে তীব্র দ্বন্দ্ব, সোমবার ভাগ্য নির্ধারণী ভোট

        মূল্যস্ফীতির কারণে স্বর্ণের দাম ছুঁইছুঁই দুই লাখ টাকা ভরি প্রতি

        পাহাড়ি এলাকায় সীমানা বিরোধে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ২৫ জনের মধ্যে স্থানীয় ও পুলিশ সদস্য

        এলডিপির শীর্ষে তাকাইচি, জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে

        ইসরায়েলের আটক অভিযান শেষে তুরস্কে পাঠানো হলো সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩৭ কর্মী

        ঢাকায় সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় আইনজীবী আহসান হাবিবকে আটক করেছে পুলিশ

        বর্তমান সহিংসতার সমালোচনায় নুর, বললেন—হাসিনা আমলেও হয়নি এমন হামলা

        আমেরিকানদের গণমাধ্যমে ভরসা ভেঙে পড়ছে, গ্যালাপ বলছে আস্থা সবচেয়ে নিচে

        বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত: জীবন্ত কোষ থেকে কম্পিউটার চালানোর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক উদ্ভাবন

        চরম অস্থিরতার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন জাপা নেতা

        নাহিদ ইসলাম: কিছু উপদেষ্টা প্রতারণার মাধ্যমে আস্থা ভঙ্গ করেছে

        গাজায় ভয়াবহ প্রাণহানি: ট্রাম্পের নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৬৭ হাজার

        সরকারকে উদ্দেশ্য করে চরমোনাই পীর: ভয় দেখানো নয়, বাস্তব সমস্যার সমাধান করুন

        ‘স্বল্প সময়ের সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে’ — সংস্কৃতি উপদেষ্টা

        নবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের অগ্রগতি, মার্কিন প্রতিবেদনে প্রশংসা

        এ বছর নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা: হত্যা, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ হামলার শিকার কতজন?

বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত: জীবন্ত কোষ থেকে কম্পিউটার চালানোর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক উদ্ভাবন

বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত: জীবন্ত কোষ থেকে কম্পিউটার চালানোর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক উদ্ভাবন


জীবন্ত কোষ ব্যবহার করে কম্পিউটার তৈরির পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই অদ্ভুত ও যুগান্তকারী গবেষণার নাম ‘বায়োকম্পিউটিং’। 

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সুইজারল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী। তাদের স্বপ্ন, এমন ডেটা সেন্টার তৈরি করা, যা চলবে ‘জীবন্ত’ সার্ভারে এবং প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় সামান্য পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করবে।


এই গবেষক দলের আশা, একদিন এমন ডেটা সেন্টার দেখা যাবে, যেখানে ‘জীবন্ত’ সার্ভার থাকবে। এই সার্ভারগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যেভাবে শেখে তার কিছু দিক অনুকরণ করবে এবং বর্তমান পদ্ধতির তুলনায় সামান্য শক্তি ব্যবহার করেই কাজ করবে।

কম্পিউটারের উপাদানগুলো হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারে বিভক্ত। তবে এই বায়োকম্পিউটারের ক্ষেত্রে নতুন শব্দ ‘ওয়েটওয়্যার’ (Wetware) ব্যবহার করেন এই গবেষক দল।


অদ্ভুত এই শব্দের ব্যাখ্যা সহজভাবে বলতে গিয়ে ফাইনালস্পার্ক ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. ফ্রেড জর্ডান বলেন, গবেষণাগারে স্টেম সেল থেকে উৎপাদিত নিউরন দিয়ে তৈরি ‘অর্গানয়েড’। এটি মূলত নিউরন ও সহায়ক কোষের ক্লাস্টার। অর্গানয়েডলোকে ইলেকট্রোডে (তড়িৎদণ্ড) যুক্ত করা হয়। তখনই এটিকে মিনি কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অনেকের কাছে বায়োকম্পিউটিং ধারণাটা অদ্ভুত শোনাবে স্বীকার করে ড. জর্ডান বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে মানুষ এই ধারণার সঙ্গে অনেক আগেই পরিচিত হয়েছে। যখন আপনি বলেন যে, আমি একটি নিউরনকে ছোট একটি যন্ত্রের মতো ব্যবহার করব, তখন এটি আমাদের মস্তিষ্ককে ভিন্নভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি দেয় এবং আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেয়।’

ফাইনালস্পার্ক ল্যাবে এই বায়োকম্পিউটার তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু হয় মানুষের ত্বক থেকে নেওয়া স্টেম সেল থেকে। এই সেলটি সুইজারল্যান্ডের গবেষকেরা জাপানের একটি ক্লিনিক থেকে কিনে এনেছিলেন। দাতা-ব্যক্তিদের পরিচয় অজ্ঞাত। তবে এখন অনেক স্বেচ্ছাসেবী স্টেম সেল দান করতে আগ্রহী।

এ বিষয়ে ড. জর্ডান বলেন, ‘অনেকেই আমাদের কাছে আসে। কিন্তু আমরা কেবল অফিশিয়াল সরবরাহকারীর স্টেম সেলই বেছে নিই, কারণ কোষের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ফাইনালস্পার্ক ল্যাবে স্টেম সেল থেকে তৈরি নিউরন এবং সহায়ক কোষ মিলে কয়েকটি ক্লাস্টার বা গুচ্ছ তৈরি করা হয়। এগুলোই এক-একটি মিনি ব্রেইন। মানব মস্তিষ্কের জটিলতা এগুলোতে নেই, তবে এর গাঠনিক উপাদান একই রকম। কয়েক মাসের প্রক্রিয়ার পর এই মিনি ব্রেইনগুলো তড়িৎদ্বারের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য প্রস্তুত হয়। এগুলো সরল কি-বোর্ড কমান্ডের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম হয়।

গবেষকেরা বলছেন, এই মিনি ব্রেইনগুলোর বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণ করার একটি পদ্ধতি এবং ফলাফল একটি সাধারণ কম্পিউটারে রেকর্ড করা হয়। এটি খুব সহজ একটি বিষয়। যেমন, কি-বোর্ডের কোনো একটি বোতাম চাপলে, তা তড়িৎদ্বারের মাধ্যমে মিনি–ব্রেইনে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়। এরপর, যদি সেই মিনি ব্রেইন কাজ করে (সব সময় করে না), তাহলে স্ক্রিনে একটি ছোট কার্যকলাপ দেখা যায়।

স্ক্রিনে প্রদর্শিত এই কার্যকলাপের গ্রাফটি অনেকটা ইইজির (ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাম) মতো দেখতে। ড. জর্ডান জানান, তাঁরা এখনো অনেক কিছু বুঝতে পারছেন না যে অর্গানয়েডগুলো কী করছে এবং কেন করছে। তবে আপাতত অর্গানয়েড বা মিনি ব্রেইনে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করা গবেষকদের মূল লক্ষ্যগুলোর একটি। অর্থাৎ, বায়োকম্পিউটারের নিউরনকে শেখার জন্য উদ্দীপিত করা এবং সেগুলোর ধীরে ধীরে কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হওয়া—এটিই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

সাধারণ কম্পিউটার চালু রাখা সহজ—শুধু পাওয়ার সাপ্লাই দরকার। কিন্তু বায়োকম্পিউটারের ক্ষেত্রে কী হয়? এটি এমন এক প্রশ্ন—যার উত্তর বিজ্ঞানীরা এখনো পাননি। এ ক্ষেত্রে অর্গানয়েড কীভাবে টিকে থাকবে বা এগুলো শক্তি কীভাবে পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের সেন্টার ফর নিউরোটেকনোলজির পরিচালক ও নিউরোটেকনোলজি অধ্যাপক সাইমন শুল্জ বলেন, ‘অর্গানয়েডে রক্তনালি নেই। মানব মস্তিষ্কে রক্তনালি আছে যা বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে থাকে এবং তা মস্তিষ্ককে কার্যকর রাখতে পুষ্টি সরবরাহ করে। আমরা এখনো সেগুলো ঠিকমতো তৈরি করতে পারি না। এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

একটি বিষয় নিশ্চিত যে, কম্পিউটার অকার্যকর হয়ে গেলে আমরা ভাবি সেটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু ‘ওয়েটওয়্যারের’ ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই মৃত্যু ঘটে। ফাইনালস্পার্ক গত চার বছরে কিছু অগ্রগতি করেছে। তাদের অর্গানয়েড এখন চার মাস পর্যন্ত বাঁচে।

তবে এগুলো মারা যাওয়ার সময় কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো অর্গানয়েড মারা যাওয়ার আগে হঠাৎ করে খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে—যেমন কিছু মানুষের মৃত্যুর মুহূর্তে হৃদ্‌যন্ত্রের গতি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম বেড়ে যায়। ড. জর্ডান বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি, শেষ মিনিটে অর্গানয়েডের কার্যক্রম খুব দ্রুত বেড়ে যায়। গত পাঁচ বছরে আমরা প্রায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার এমন মৃত্যু রেকর্ড করেছি।’

ফাইনালস্পার্ক একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয় যারা বায়োকম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ার কর্টিক্যাল ল্যাবস ২০২২ সালে ঘোষণা করেছিল, তারা ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত নিউরনকে দিয়ে প্রাথমিক কম্পিউটার গেম ‘পং’ খেলাতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও ‘মিনি-ব্রেইন’ তৈরি করছেন। তাঁরা দেখতে চান এগুলো কীভাবে তথ্য প্রক্রিয়া করে—বিশেষ করে আলঝেইমার এবং অটিজমের মতো স্নায়বিক রোগের ওষুধ উন্নয়নের জন্য তাঁরা এটি করছেন। আশা করা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই ধরনের কাজকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করতে পারবে।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ড. লেনা স্মিরনোভা বলেন, ওয়েটওয়্যার বৈজ্ঞানিকভাবে আকর্ষণীয়, কিন্তু এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তিনি বলেন, কম্পিউটার চিপের প্রধান উপাদানকে এটি প্রতিস্থাপন করার সম্ভাবনা খুব কম। তাঁর মতে, ‘বায়োকম্পিউটিং সিলিকন এআই-এর বিকল্প নয় বরং সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া রোগ নির্ণয় মডেল তৈরি এবং পরীক্ষাগারে প্রাণীর ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করবে।’

অধ্যাপক শুল্জও এতে একমত। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এগুলো অনেক ক্ষেত্রে সিলিকনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র খুঁজে পাবে।’

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত