প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার
কী রয়েছে জো বাইডেনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে? জেনে নিন!
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
বিশ্বের অন্যান্য অনেক উন্নত দেশগুলোর থেকে অবকাঠামোগত দিক থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। আর তাই এবার অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো ঢেলে সাজাতে ইতোমধ্যে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এই পরিকল্পনায় সড়ক, ব্রিজ, গণপরিবহন সংস্কার থেকে শুরু করে আবাসন সমস্যা নিরসন- সব কিছুতেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জেনে নিন বাইডেন প্রশাসনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় কী রয়েছে!
সড়ক, রেল ও যানবাহনের উন্নয়নে ৬৫০ বিলিয়ন ডলার: সড়ক, রেলপথ ও যানবাহনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য ৬৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রেখেছে বাইডেন প্রশাসন। এই পরিকল্পনার আওতায় ২০ হাজার মাইল হাইওয়ে ও সড়ক, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ১০টি ব্রিজ এবং অন্যান্য আরো ১০ হাজার ছোট-বড় ব্রিজ সংস্কার করা হবে। সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য রোড সেফটি প্রোগ্রামের আওতায় ২০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই সাথে হাইওয়ে প্রজেক্টের কারণে বিভক্ত হয়ে যাওয়া নেইবারহুডে সংযোগ পথ তৈরি করতে আরো ২০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাবলিক ট্রানজিটের জন্য ৮৫ বিলিয়ন ডলার ও এমট্রাক ট্রেনের জন্য আরো ৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া এয়ারপোর্ট সংস্কারে ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ের জন্য ১৭ বিলিয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রিক ভেহিকেলের মার্কেট চাঙ্গা করতে ১৭৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি ২৫ বিলিয়ন ডলার অন্য আরেকটি ট্রান্সপোর্টেশন প্রজেক্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আবাসন সংস্কারে ৬৫০ বিলিয়ন ডলার: আবাসন ব্যবস্থার উন্নতিতে ৬৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের আওতায় ব্রডব্যান্ড, নিরাপদ পানি, ইলেকট্রিক গ্রিড ও উচ্চ সুবিধা সম্পন্ন আবাসন নিশ্চিত করা হবে। প্রায় ১০ মিলিয়ন পরিবারের পানির লাইন এবং সার্ভিস লাইন পুরোপুরি বদলে দেওয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত ৩৫ শতাংশ মার্কিনীকে ব্রডব্যান্ড তথা ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া প্রায় দুই মিলিয়ন আবাসিক ভবন এবং ভেটেরান হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। নতুন পাবলিক স্কুল নির্মাণ ও পুরাতনগুলো সংস্কারের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ সরাসরি গ্রান্ট এবং বাকি ৫০ শতাংশ বন্ডের মাধ্যমে দেওয়া হবে। পাশাপাশি তেল ও গ্যাস উত্তোলণের জন্য পূর্বে তৈরি পরিত্যাক্ত মাইন ও কুয়া সিলগালা করে দেওয়া হবে। যেখানে পরবর্তীতে লাখ-লাখ বাসিন্দা কাজের সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ সূত্র।
‘কেয়ার ইকোনমি’র জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলার: হোয়াইট হাউজ সূত্র জানিয়েছে, প্রতি ছয়জনের একজন এসেন্সিয়াল কেয়ার ওয়ার্কার দারিদ্র্যতার মধ্যে বাস করেন। তাই সিনিয়র সিটিজেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন বাসিন্দা এবং ভালো বেতন ও বোনাস সম্পন্ন কেয়ারগিভিং কর্ম সৃষ্টিতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। মূলত হোম বা কমিউনিটিভিত্তিক এই সাহায্য করা হবে।
উৎপাদন, ট্রেনিং ও গবেষণা খাতে ৫৮০ বিলিয়ন: উৎপাদন, ট্রেনিং গবেষনা খাতের জন্য ৫৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদনের খাত বাড়াতে ৫০ বিলিয়ন ডলার, গবেষণা ও ডেভেলপমেন্টের জন্য ১৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া ক্লিন এনার্জি, বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি ও কয়লা খনির উৎপাদন ও চালান বাড়ানোর জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কীভাবে এসব অবকাঠামোগত অর্থের ব্যয় যোগানো হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই ব্যয় যোগান দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর নীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে বাইডেন প্রশাসন। মূলত এই ব্যয়ের বৃহৎ অংশ কর্পোরেট করের মাধ্যমে মেটানো হবে।
ইতোমধ্যে বাইডেন প্রশাসন কর্পোরেট কর ২১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৮ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ২১ শতাংশ কর্পোরেট কর নির্ধারণ করে দিয়েছিলো। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর নিয়ম সংস্কারের পাশাপাশি অন্যান্য আরো প্রতিষ্ঠানের কর নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজ সূত্র জানিয়েছে, এই কর নীতি সংস্কারের কারণে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যয় আগামী ১৫ বছরের মধ্যে উঠে আসবে এবং এরপর সরকারি কোষাগারের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন