বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উপহার দেওয়ার জন্য কাতারের প্রস্তাবিত বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এই বিমান ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, এয়ার ফোর্স ওয়ানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এটি ঘুষ ও বিদেশি প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প নিজে এই উপহারকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তারা আমাদের বিমানটি ফ্রি দিচ্ছে। আমি কি বলব—না, আমরা নেব না? বরং বলা উচিত, আপনাকে ধন্যবাদ। পরে নিজের প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, এই বিমানটি আমাকে নয়, মার্কিন বিমানবাহিনীকে দেওয়া হচ্ছে। কেবল একজন বোকারাই এমন উপহার প্রত্যাখ্যান করবে।
তবে হোয়াইট হাউজের এই ব্যাখ্যায় অনেকেই সন্তুষ্ট নন। কংগ্রেসে বিষয়টি নিয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনা। বিরোধীদলীয় ডেমোক্র্যাট নেতারা একে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সঙ্গে প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের দাবি, এই উপহার কাতারের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের অংশ এবং এটি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক বাধাকে লঙ্ঘন করছে।
এমনকি রিপাবলিকান দলের মধ্যেও দেখা দিয়েছে মতভেদ। টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ একে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এমন উপহার গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আর সিনেটর র্যান্ড পল বলেন, কাতারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অতীত আমাদের মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তবে ট্রাম্পঘনিষ্ঠ কিছু রিপাবলিকান, যেমন সিনেটর টমি টিউবারভিল, বিমান গ্রহণকে বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায়, এই ধরনের বিমান কেনার মতো বাজেট আমাদের নেই।
এদিকে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটি কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ, এবং এর পেছনে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। হোয়াইট হাউজ থেকেও বলা হয়েছে, বিমানটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারের পর সরকারিভাবে সংরক্ষণে যাবে। যা প্রেসিডেন্ট আর্কাইভের অংশ হবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কিছু কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, সাবেক উপদেষ্টা পাম বন্ডির কাতারের হয়ে লবিয়িং করার তথ্য সামনে আসায়, স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ জোরালো হয়েছে। জানা গেছে, তিনি কাতারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ১.১৫ লাখ ডলার আয় করতেন। একই সময়ে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন কাতারে বিলাসবহুল গল্ফ রিসোর্ট নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। যা পরিস্থিতিকে আরও সন্দেহজনক করে তুলেছে।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সরকার কর্মকর্তা বিদেশি রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তিগত উপহার গ্রহণ করতে পারেন না, যদি না কংগ্রেস তার অনুমোদন দেয়। যদিও হোয়াইট হাউজ দাবি করছে এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, তবে সমালোচকদের প্রশ্ন, এত বড় মূল্যের উপহার আসলেই শর্তহীন হতে পারে কি না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডগ হেই বলেন, ট্রাম্প অতীতে বহু বিতর্ক পার করে গেছেন। এই বিতর্ক হয়তো তাকে সরাসরি ক্ষতি করবে না, তবে এটি অন্য যেকোনো রাজনীতিবিদের জন্য ধ্বংসাত্মক হতো। তিনি আরও বলেন, “যত বড় উপহার, তত বড় প্রশ্ন।
কাতারের উপহার নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে এই মুহূর্তে চলছে চাপা উত্তেজনা। এটি শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়—আইন, নীতি ও মূল্যবোধের জটিল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে এখন এটি হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার পরীক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন