অবৈধ অভিবাসন দমনে হন্ডুরাস ও উগান্ডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত চুক্তি
মেইল-ইন ভোট বন্ধ করতে পারবেন কি ট্রাম্প?
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি আগামী ২০২৬ সালের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নির্বাচনের আগে মেইল-ইন ভোটিং (ডাকযোগে ভোট) বন্ধ করতে চান।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “দেশের সেরা আইনজীবীরা এখনই একটি নির্বাহী আদেশ প্রস্তুত করছেন, যা মেইল-ইন ব্যালট বন্ধ করবে, কারণ এগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত।”
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময়ও ট্রাম্প দাবি করেন, ডেমোক্র্যাটরা শুধু মেইল-ইন ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচনে জিততে পারে।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৪ সালের নির্বাচনে নিজে জয়ী হতে ট্রাম্পও আংশিকভাবে মেইল-ইন ব্যালটের সুবিধা পেয়েছিলেন। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে ২০২০ সালের নির্বাচনে মেইল-ইন ভোট ও ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে কারচুপি করে তাকে হারানো হয়েছিল।
মেইল-ইন ভোট কীভাবে কাজ করে?
মেইল-ইন ভোটিং ব্যবস্থায় ভোটাররা বাড়িতে বসেই ব্যালট পূরণ করে ডাকযোগে বা নির্দিষ্ট বাক্সে ফেলে ভোট প্রদান করতে পারেন।
বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, হাওয়াই, নেভাদা, ওরেগন, উটাহ, ভারমন্ট, ওয়াশিংটনসহ মোট আটটি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি-তে সব নির্বাচন ডাকযোগেই হয়। এর মধ্যে শুধু নেভাদা ও উটাহ ২০২৪ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল।
অন্য রাজ্যগুলোতে ভোটাররা চাইলে ডাকযোগে ভোটের আবেদন করতে পারেন। মহামারির সময়, বিশেষ করে ২০২০ সালের নির্বাচনে এই পদ্ধতি সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে বছর মোট ৪৩% ভোট মেইল-ইনের মাধ্যমে পড়েছিল, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৩০%-এ।
কেন আপত্তি ট্রাম্পের?
ট্রাম্প দাবি করেন, মেইল-ইন ভোট দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সহজেই জালিয়াতির সুযোগ তৈরি করে। তার মতে, এটি ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে যায়। যদিও এখন পর্যন্ত গবেষণায় দেখা যায়নি যে এটি কোনো দলের জন্য নির্দিষ্ট সুবিধা তৈরি করে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প তার সমর্থকদের যেকোনোভাবে ভোট দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। এমনকি কিছু রিপাবলিকান রাজ্যে (যেমন নর্থ ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা ও পেনসিলভানিয়া) রিপাবলিকান ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের চেয়েও বেশি মেইল-ইন ভোট দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের কি আইন বদলানোর ক্ষমতা আছে?
সংক্ষেপে উত্তর হলো—না।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের সময়, স্থান ও পদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যের আইনসভাগুলোর হাতে। কংগ্রেস চাইলে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, তবে প্রেসিডেন্টকে কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প চাইলে কোনো নির্বাহী আদেশ দিয়েও ২০২৬ সালের নির্বাচনে মেইল-ইন ভোট বন্ধ করতে পারবেন না।
তবে ট্রাম্প দাবি করছেন, অঙ্গরাজ্যগুলো কেবল ফেডারেল সরকারের “এজেন্ট” হিসেবে ভোট পরিচালনা করে, তাই প্রেসিডেন্ট চাইলে নিয়ম চাপিয়ে দিতে পারেন।
এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইউসিএলএ’র আইন অধ্যাপক রিক হ্যাসেন বলেছেন, “সংবিধান প্রেসিডেন্টকে কোনোভাবেই নির্বাচনের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেয়নি। ট্রাম্পের এ বক্তব্য ভুল এবং বিপজ্জনক।”
যুক্তরাষ্ট্র কি একমাত্র দেশ যেখানে মেইল-ইন ভোট হয়?
না। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ শতক থেকেই কোনো না কোনোভাবে ডাকযোগে ভোট চালু রয়েছে।
ট্রাম্প প্রথমে দাবি করেছিলেন, একমাত্র আমেরিকাতেই মেইল-ইন ভোট হয়। তবে পরে তিনি স্বীকার করেন, তিনি ভুলও হতে পারেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা IDEA জানিয়েছে, বিশ্বে অন্তত ৩৪টি দেশে মেইল-ইন ভোট চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি দেশ—যেমন কানাডা, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়া—সব ভোটারের জন্য ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ রেখেছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন