অবৈধ অভিবাসন দমনে হন্ডুরাস ও উগান্ডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত চুক্তি
সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলান অভিবাসী ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে স্থগিতাদেশ দিয়েছে
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৭৯৮ সালের Alien Enemies Act ব্যবহার করে টেক্সাসের উত্তরের একদল ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আদালতের রায় ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা, যদিও আইনি লড়াই এখনো বিভিন্ন আদালতে চলছে।
এই মামলাটি ফেরত পাঠানো হয়েছে নিউ অরলিন্স-ভিত্তিক পঞ্চম সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে, যেখানে বিচারকরা নির্ধারণ করবেন আইনি ভিত্তিতে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বৈধ কি না এবং ফেরত পাঠানোর আগে অভিবাসীরা কতটুকু নোটিশ ও আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মতো স্বল্প নোটিশে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ এতে তারা নিজেদের অধিকার রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছে যে, এর আগে মেরিল্যান্ডের এক ব্যক্তি ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, যাকে আবার ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এই প্রেক্ষিতে আদালত অভিবাসীদের বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ’ রক্ষা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
রায়ের পরে ট্রাম্প এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “SUPREME COURT WON’T ALLOW US TO GET CRIMINALS OUT OF OUR COUNTRY”, অর্থাৎ “সুপ্রিম কোর্ট আমাদের দেশের অপরাধীদের বের করতে দিচ্ছে না”।
ভেতরের আইনি লড়াই চলছেই
ট্রাম্প মার্চ মাসে এই আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলান গ্যাং Tren de Aragua-এর সদস্য সন্দেহে শতাধিক অভিবাসীকে এল সালভাদরে পাঠানোর পরিকল্পনা নেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে প্রশাসন দ্রুত তাদের বিমানে তুলে পাঠিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে এএলসিইউ (ACLU) নামের মানবাধিকার সংস্থা বিভিন্ন হ্যাবিয়াস করপাস মামলা দায়ের করে, যাতে অভিবাসীদের যথাযথ নোটিশ ও আইনি সহায়তা ছাড়া ফেরত না পাঠানো হয়।
নিম্ন আদালতের ভূমিকা ও সমালোচনা
টেক্সাসের অ্যাবিলিনে দুই অভিবাসী দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে হ্যাবিয়াস পিটিশন দায়ের করে। বিচারক জেমস হেনড্রিক্স (যিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, সরকারের বক্তব্য ছিল যে তারা ওই দুইজনকে সরাসরি ফেরত পাঠাতে চায় না।
তবে সুপ্রিম কোর্ট হেনড্রিক্সের “১৪ ঘণ্টা ২৮ মিনিটের নিরবতা” নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, এটা কার্যত একটি স্থগিতাদেশ প্রত্যাখ্যানের সমান।
বিচারকদের মতপার্থক্য
বিচারপতি আলিটো ও থমাস রায়ের বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এভাবে নিচের আদালতকে এড়িয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।
অন্যদিকে বিচারপতি ব্রেট কাভানাহ রায়ের সঙ্গে একমত হলেও বলেন, মামলাটি এখনই পূর্ণ শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে তোলা উচিত ছিল, যেন দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান আসতে পারে।
ভবিষ্যত কী?
এই রায় Alien Enemies Act অনুযায়ী সমস্ত ফেরত পাঠানো কার্যক্রম কার্যত স্থগিত রেখেছে, অন্তত ৫ম সার্কিট কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় না দেওয়া পর্যন্ত।
বিশ্লেষক স্টিভ ভ্লাডেক বলেন, “আজকের রায় সুপ্রিম কোর্টের আগের অস্থায়ী স্থগিতাদেশকে কার্যকর রাখে”, এবং এর মাধ্যমে বর্তমানে আইনটির কার্যকারিতা স্থগিত রয়েছে।
এই মামলার পরিণতি শুধুমাত্র ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের জন্য নয়, পুরো মার্কিন অভিবাসন নীতির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন