স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে কংগ্রেসে তীব্র দ্বন্দ্ব, সোমবার ভাগ্য নির্ধারণী ভোট
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধের কারণে সরকার আংশিকভাবে বন্ধ থাকার সংকট আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সোমবার ভোটের আগে দুই দলই সমাধান খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রবিবার এনবিসির “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে পৃথক সাক্ষাৎকারে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস ও রিপাবলিকান নেতা মাইক জনসন একে অপরের দলকে দোষারোপ করেন। সোমবার সরকার বন্ধের পঞ্চম দিন পূর্ণ হতে যাচ্ছে।
মূল বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো স্বাস্থ্যসেবা খাত। ডেমোক্র্যাটরা নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে চান এবং মেডিকেড প্রোগ্রামে কাটা পড়া অর্থ ফেরানোর দাবি তুলেছেন। অপরদিকে রিপাবলিকানরা এই অতিরিক্ত ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন।
সরকারি ব্যয় অনুমোদনের একটি বিল প্রতিনিধি পরিষদে পাস হলেও এটি বারবার সিনেটে আটকে যাচ্ছে।
জেফ্রিস অভিযোগ করেন, “রিপাবলিকানরা মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে, কারণ তারা জনমতের আদালতে হেরে যাচ্ছে।” অন্যদিকে জনসন বলেন, “ডেমোক্র্যাটরা আন্তরিক নয়, তারা শুধু রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আলোচনাকে বিলম্বিত করছে।”
সোমবার বিকেলে সিনেট পুনরায় অধিবেশনে বসবে এবং অন্তবর্তীকালীন অর্থায়ন বিল নিয়ে আবার ভোট হবে। এদিকে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও আলাদা বৈঠকে বসবেন।
জনসন প্রতিনিধি পরিষদের ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছেন, ফলে সিনেটে কোনো সমঝোতা হলে তা অবিলম্বে হাউসে তোলা সম্ভব নয়।
রিপাবলিকানরা ১০০ আসনের সিনেটে ৫৩ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, বিল পাসে প্রয়োজন ৬০ ভোট।
জনসন বলেন, “ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবিত সাত সপ্তাহের অস্থায়ী ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় নতুন খরচ যুক্ত হয়েছে। করছাড় সুবিধাগুলো বছরের শেষ পর্যন্ত বহাল আছে—এখনই তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।”
তিনি আরও দাবি করেন, মেডিকেডে “অবৈধ অভিবাসী ও কর্মক্ষম তরুণদের” অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে, যা নীতিগতভাবে ভুল। তবে BBC Verify-এর তথ্যমতে, ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে অবৈধ বা অনিবন্ধিত অভিবাসীরা যোগ্য নয়।
জেফ্রিস পাল্টা বলেন, “আমরা কঠোর পরিশ্রমী মার্কিন করদাতাদের স্বাস্থ্যসেবার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। রিপাবলিকানরা করছাড় নবায়ন না করলে লাখ লাখ মানুষের প্রিমিয়াম, কপে, এবং ডিডাকটেবল নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাবে।”
তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকারও সমালোচনা করে বলেন, “এই আচরণ লজ্জাজনক। এখন আমাদের প্রয়োজন দায়িত্বশীল নেতৃত্ব।”
জেফ্রিস অভিযোগ করেন, রিপাবলিকান নেতারা এখন আর আলোচনাতেও বসছেন না। তিনি বলেন, “আমরা চাই দ্বিদলীয় সহযোগিতায় সরকার পুনরায় চালু করতে, কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের অবশ্যই এই রিপাবলিকান-সৃষ্ট স্বাস্থ্য সংকট সমাধান করতে হবে।”
আমেরিকানদের আস্থাহীনতা দুই দলের প্রতিই
সাম্প্রতিক CBS-এর এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন নাগরিকরা উভয় দলেরই আচরণে অসন্তুষ্ট। জরিপে ৮০% উত্তরদাতা বলেন, সরকার বন্ধের প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। মাত্র ২৩% মনে করেন রিপাবলিকানদের অবস্থান সঠিক, আর ২৮% ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে।
৩৯% ভোটার ট্রাম্প ও কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের দায়ী করেছেন, ৩০% ডেমোক্র্যাটদের এবং ৩১% উভয় দলকেই সমানভাবে দোষ দিয়েছেন।
এদিকে সরকার বন্ধের প্রভাবও ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার তহবিল সংকটে ন্যাশনাল গ্যালারি অব আর্ট তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, এই সুযোগে ফেডারেল কর্মীদের ব্যাপকভাবে ছাঁটাই এবং ডেমোক্র্যাটদের পছন্দের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রকল্পে কাটছাঁট করবেন। যদিও সেসব কাটছাঁটের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
জনসন বলেন, “এটি এমন একটি পরিস্থিতি, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও চান না। কিন্তু সিনেটর চাক শুমারকে এখন দায়িত্বশীল আচরণ করে সরকার চালু রাখতে ভোট দিতে হবে।”
সোমবারের ভোটের ফল নির্ধারণ করবে, যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও গভীর হবে, নাকি সরকারের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন