যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে “নো কিংস” বিক্ষোভের আগে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের
দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন
করেছেন জাময়াত নেতা আলী আহসান
মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা
সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের
সংশ্লিষ্ট শাখায় নিজ নিজ আইনজীবীর
মাধ্যমে এ রিভিউয়ের (পুনর্বিবেচনার)
আবেদন উপস্থাপন করেন তারা।
প্রথমে মুজাহিদের পক্ষে তার আইনজীবী
শিশির মনির আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট
শাখায় ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন জমা
দেন।
এরপর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে
১০৮ পৃষ্ঠার গ্রাউন্ডে মোট ৩৫৭ পৃষ্ঠার
রিভিউ আবেদন করেন তার আইনজীবী
হুজ্জাতুল ইসলাম।
এদিকে মুজাহিদ ও সাকার রিভিউ আবেদন
উপস্থাপনের কারণে তাদের মৃত্যুদন্ডের রায়
কার্যকর স্থগিত হয়ে গেল।
মুজাহিদ ও সাকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট
খন্দকার মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে বলেন,
আমরা রিভিউ আবেদনে বলেছি, রাষ্ট্রপক্ষ
এ দুটি মামলায় যে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির
করেছে তা সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা
হয়নি। সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা হলে
তারা সাজা থেকে মওকুফ পেতেন। তারপরও
যে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে
তাদেরকে কোনোভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায়
না।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সালাহউদ্দিন কাদের
চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের
রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে
আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি আশা
প্রকাশ করে বলেন, দুজনেরই আপিলের দেয়া
মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় রিভিউতেও বহাল
খাকবে।
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া
রায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। ওই দিনই
রায়ের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয় সুপ্রিমকোর্ট
প্রশাসন। ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তাদের মৃত্যু
পরোয়ানা জারি করে কারাগারে পাঠিয়ে
দেন। মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়ে ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক মুজাহিদকে এবং
কাশিমপুর কারাগারে আটক সালাউদ্দিন
কাদের চৌধুরীকে তা পড়ে শোনায় কারা
কর্তৃপক্ষ।
আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী
আসামিপক্ষ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার
অথবা আসামিকে মৃত্যু পরোয়ানা জারির
বিষয়টি পড়ে শোনানো যেটি আগে হয়, সেই
হিসাব ধরে রিভিউ আবেদন দায়েরের জন্য
১৫ দিন সময় পান। সে হিসেবে নির্ধারিত
সময়ের একদিন আগেই রিভিউ আবেদন দায়ের
করেছেন জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
এদিকে রিভিউ আবেদন দায়ের হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গেই তাদের মৃত্যু পরোয়ানার
কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে গেছে বলে
জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে
আলম। এই রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না
হওয়া পর্যন্ত তাদের ফাঁসি কার্যকর করা
যাবে না। রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে
যে সাজা বহাল থাকবে সেই সাজা কার্যকর
হবে। আর আসামিপক্ষের দায়ের করা রিভিউ
আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করা
হবে বলে আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ
রয়েছে।
রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তির পরও যদি
আসামিদের ফাঁসি বহাল থাকে তাহলে তারা
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের
সুযোগ পাবেন। যদিও এর আগে ফাঁসি কার্যকর
হওয়া দুজন যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রপতির কাছে
প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ গ্রহণ
করেননি।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের মামলার রায় দেন।
ওই রায়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা
৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত
হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে
তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এ রায়ের
বিরুদ্ধে একই বছরের আগস্টে মুজাহিদ আপিল
বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগ
এই আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৬ জুন তার
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন।
আর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পৃথক চারটি (৩, ৫, ৬ ও
৮নং) অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির
আদেশ দিয়ে রায় দেন। এছাড়া তিনটি (২, ৪ ও
৭নং) অভিযোগে তাকে দেয়া হয় ২০ বছর
করে কারাদণ্ড। দুটি (১৭ ও ১৮নং) অভিযোগে
দেয়া হয় ৫ বছর করে কারাদণ্ড। একই বছরের
২৯ অক্টোবর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন
সাকা চৌধুরী। আপিল বিভাগ এই আপিল
নিষ্পত্তি করে গত ২৯ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড
বহাল রেখে রায় দেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ওই দুটি
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের মধ্য
দিয়ে তাদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া
আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।
শেয়ার করুন