বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৯৫ নেতা–কর্মীর জামিন নাকচ
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৯৫ নেতা–কর্মীর কারও জামিন হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বিএনপির এসব নেতা–কর্মীর জামিন একাধিকবার নাকচ হয়েছে। ১৯ দিন ধরে কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীরা জামিন পাওয়ার আশায় আবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়েছেন। ইতিমধ্যে মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নাকচ করেছেন মহানগর আদালত। বাকিদের জামিন শুনানির জন্য আগামী জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দিন ঠিক করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী ও বিএনপি নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে দলের মহাসচিবসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে সরকার। একই মামলায় ৮ ডিসেম্বর আমানউল্লাহ আমান, আবদুল কাদের ভূইয়াসহ দুজনের জামিন দিলেও পরবর্তী সময়ে আর কাউকে আদালত জামিন দেয়নি। মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে মামলার কাগজপত্রের নকল কপি পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাসের জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। আর বাকি নেতা–কর্মীকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুলের আরেক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন জানান, ২১ ডিসেম্বর মহানগর আদালতে ফখরুল ও আব্বাসের জামিন নাকচ হয়। পরে জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্যান্য কাগজের অনুলিপি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও তা সরবরাহ করা হয়নি। ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। আর রমনা থানায় হয়েছে দুটি মামলা।
এসব মামলার মধ্যে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৫৫ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজনের জামিন হয়েছে। বাকি ৪৫৩ জন কারাগারে আছেন। কারাগারে থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, শামসুর রহমান (শিমুল বিশ্বাস), খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন। এ ছাড়া মতিঝিল থানার মামলায় ২১ জন, রমনা থানার দুটি মামলায় মোট ১১ জন, শাহজাহানপুর থানার মামলায় ১০ নেতা–কর্মী কারাগারে আছেন।
কারাগারে আটক নেতাদের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ও গোলাম মোস্তফা খান প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত একটি মামলায় যদি কোনো আসামি জামিন পান, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য আসামির জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন আদালত। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম কিংবা মির্জা আব্বাসের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। বারবার আদালতের কাছে বলা হয়েছে, দুজন অসুস্থ। মামলার এজাহারে তাঁদের নাম ছিল না। তারপরও পল্টনের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কোনো আদালত তাঁদের জামিন দেয়নি। অন্য বিএনপি নেতাদের অবস্থাও একই রকম।
এদিকে ৭ ডিসেম্বরের ঘটনায় দায়ের করা পাঁচ মামলার কোনোটির তদন্ত শেষ হয়নি। নতুন করে কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নয়াপল্টনে ৭ ডিসেম্বরের ঘটনায় দায়ের করা পাঁচটি মামলায় যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বাকি যাঁরা জড়িত রয়েছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার ৪৫৫ জনের মধ্যে ১৪২ নেতা–কর্মীকে রমনা থানার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন