আ.লীগের কাউন্সিলে আসছে বড় ধরণের পরিবর্তন
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে বড় ধরণের পরিবর্তন আসছে। আগামী ২৮ মার্চ কাউন্সিল উপলক্ষ্যে ত্যাগী নেতাদের মধ্যে আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।অপরদিকে, দলীয় কর্মকাণ্ডে যারা কিছুটা পিছিয়ে তারা পুনর্বার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবার জন্য ইতোমধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাসা-অফিসে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।
গত ৯ জানুয়ারি, শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আগামী ২৮ মার্চ ২০তম ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং বির্তকিত কর্মকাণ্ডে জড়িতরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন না। তাদের বাদ দিয়ে মেধাবীদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে একটি কমিটি উপহার দেওয়া হবে।
কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঘোষণা করায় রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বাদ যাচ্ছে না দলের তৃণমুলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। এ বিষয়ে ৪৮ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কমিশনার আবুল কালাম অনু বলেন, সময়মতো সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় দলের নেতাকমীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস বিরাজ করছে। আগের চেয়ে অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। যাত্রাবাড়ি থানা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু খন্দকার বলেন, সময় মতো কাউন্সিল ঘোষণা করায় মূল দলের পাশাপাশি আমাদের নেতাকর্মীরা খুশি।
এদিকে কাউন্সিল ঘিরে শুরু হয়েছে নানাপ্রস্তুতি। সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে নানা লবিং-গ্রুপিং।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বিগত কাউন্সিলে কিছু পদে পরিবর্তন জরুরি ছিল, কিন্তু করা হয়নি। এবার বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন দলীয় সভাপতি। কিছু নেতা দলীয় পদপদবীর অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলের সব পর্যায়ের নেতার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করে তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ব্যবসায়িক সব ধরনের তথ্যই নেত্রীর জানা। কাউন্সিলে সে-সব বিবেচনা ও মূল্যায়ন করা হবে। বিগত দিনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যারা নিষ্ক্রিয় আর যারা সক্রিয় ছিলেন সেসব দেখা হবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়। এর আগে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পৌর নির্বাচনের কারণে কাউন্সিল পিছিয়ে যায় এবং বর্তমান কমিটির মেয়াদও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
জানা গেছে, আসন্নকাউন্সিলে ঢালাওভাবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরিবর্তন আসছে। বাদ পড়ছেন বির্তকিতরা। দলের গঠণতন্ত্রেও আনা হচ্ছে সংশোধনী। গত দুই জাতীয় কাউন্সিলে তেমন কোনো পরির্বতন না হলেও এবার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসছে আমূল পরিবর্তন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম পদেও রয়েছে পরিবর্তনের আভাস।
সূত্রমতে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এবার মাঠের ত্যাগী ও পরীক্ষিত এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মূল্যায়ন করা হতেপারে।কার্যনির্বাহী সংসদের কলেবর বাড়ানোর গুঞ্জণ থাকলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা থাকবে অপরিবর্তিত। তবে নতুন কিছু পদ সৃষ্টি করা হতে পারে।
সূত্রটি জানায়, এবারের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। দলে বর্তমানে সাত বিভাগে সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে।ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা নতুন তিনটি বিভাগ হলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধি করে ১০ করা হতে পারে। সাধারণ সম্পাদকের বাইরে সমমর্যাদায় দলের মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিনিয়তই দলের পক্ষ থেকে কোনো না কোনো ইস্যুতে বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই পদটির কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
দলের বর্তমান গঠনতন্ত্রে মুখপাত্রের বিষয়টি স্পষ্ট না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদকই মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর বাইরে নতুন করে তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি), প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। এ ছাড়া প্রচার ও প্রকাশনা, শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি ও সমবায়সহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদকে ভেঙ্গে এর সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী সংসদের মোট সদস্য ৭৩ জন।এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৫ জন, সাধারণ সম্পাদকসহ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ৩২জন। একজন কোষাধ্যক্ষ ও সভাপতি মনোনীত সদস্য ২৬ জন।
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের সাথে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ই জেলা-উপজেলাসহ শাখা ইউনিট বৃদ্ধি করে আসছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এই শাখা ইউনিটগুলোর অনুমোদন দিয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে এই দুই নগরীকে জেলা শাখার মর্যাদা দিয়ে নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ দু’টি শাখা যুক্ত হওয়ায় দলটির সাংগঠনিক জেলা ৭৩টি থেকে বেড়ে ৭৫টি হয়েছে। এখন কার্যকর না হলেও কার্যনির্বাহী সংসদ ঢাকা মহানগরীকেও দুইভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।
এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলে জেলার মর্যাদা দিয়ে বিভাগীয় শহরটিতে আরেকটি ইউনিট অনুমোদন দেয়া হতেপারে।প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করা হলে সেখানেও একই ধরনের অর্থাৎ জেলার মর্যাদায় মহানগর কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হতেপারে।
জানা যায়, দলের সাত সাংগঠনিক সম্পাদকই দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে অন্তত: চারজন তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারণী মহল। আগামী কাউন্সিলে কপাল পুড়তে পারে তাদের। প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও যারা নিস্ক্রিয়, বাদ পড়তে পারেন তারাও। গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদে থেকেও দলকে তেমন কিছু দিতে পারেননি বেশ কয়েকজন নেতা। দলের কাজে মনোযোগী হওয়ার চেয়ে তারা বেশি ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এমন জনাদশেক নেতা। নামেই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দলের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়। পদ হারাতে হতে পারে তাদেরও।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, দলের কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। কমিটিতে স্থান পেতে নেতাকর্মীরা দৌঁড়ঝাপ করবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
শেয়ার করুন