আমার ছেলে তো নীতি থেকে একচুলও নড়বে না, ফলে তারা টর্চার করবেই
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম অন্যতম। সম্প্রতি নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন। এই আন্দোলনে ছেলের সম্পৃক্ততা, আন্দোলন সফলে একাগ্রতা ও সামনের দিনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহারের সঙ্গে কথা বলেছেন- নেছার উদ্দিন।
আপনার ছেলে একটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। এই বিষয়টি আপনার কেমন লাগে?
মমতাজ নাহার: আমি অনেক আনন্দিত, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আবার সে যখন আন্দোলন করছিল, তখনো যে কেমন লেগেছে, কত চিন্তা করেছি তার জন্য, তা বলে বোঝাতে পারব না।
নাহিদ শুরু থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা আপনি জানতেন?
মমতাজ নাহার: হ্যাঁ, আমি শুরু থেকেই জানতাম সে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আন্দোলনের সময় নাহিদে সঙ্গে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ হতো?
মমতাজ নাহার: আন্দোলন যখন শুরু করে, তা যখন আরো তীব্র হতে থাকে। তখন এমন হতো যে, তার সঙ্গে আমায় কয়েকটি দিন সাক্ষাৎ নেই, কথা নেই। দুই- তিন দিন দিন পর এক এবার হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট দিতো, ‘ঠিক আছি’, এটুকুই।
১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার পর আপনার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে?
মমতাজ নাহার: ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঝামেলার পর ১৬, ১৭, ১৮ তারিখ তার সঙ্গে সেরকম যোগাযোগ ছিল না। ১৯ তারিখ ছঠাৎ করেই বনশ্রীর বাসায় আসে। গোসল করে খাওয়া-দাওয়া করে দুই ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। সে এত ক্লান্ত ছিল, যা বলে বোঝাতে পারব না। ঘুম থেকে আবার উঠে চলে যেত লাগল। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ৭০০/৮০০ টাকার মতো আছে তার পকেটে। এরপর তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বললাম, তোর কাছে টাকা থাকলে সাহস থাকবে। যেখানেই থাকিস, যে কোনো কিছু কিনে খেতে পারবি। পুরো টাকা নিল না। সে আমায় ১ হাজার টাকা দিয়ে দিলো।
১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঝামেলার পর ১৬, ১৭, ১৮ তারিখ তার সঙ্গে সেরকম যোগাযোগ ছিল না। ১৯ তারিখ ছঠাৎ করেই বনশ্রীর বাসায় আসে। গোসল করে খাওয়া-দাওয়া করে দুই ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। সে এত ক্লান্ত ছিল, যা বলে বোঝাতে পারব না। ঘুম থেকে আবার উঠে চলে যেত লাগল। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ৭০০/৮০০ টাকার মতো আছে তার পকেটে। এরপর তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বললাম, তোর কাছে টাকা থাকলে সাহস থাকবে। যেখানেই থাকিস, যে কোনো কিছু কিনে খেতে পারবি। পুরো টাকা নিল না। সে আমায় ১ হাজার টাকা দিয়ে দিলো।
প্রথম বার যেদিন রাতে ডিবি পুলিশ তুলে নেয়, সেদিন কোনো কথা হয়েছে?
মমতাজ নাহার: আমার সঙ্গে কথা বলার এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার সঙ্গে বাকিরাসহ যারা ছিল, সবার নাম্বারে ফোন দিয়েছি, কাউকেই ফোনে পাইনি। কোনো পক্ষ থেকেই খবর পাচ্ছিলাম না। ২০ তারিখ দুপুরে বাকেরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সেদিনই আবার বাকেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ডিবিতে যোগাযোগ করা হলে অস্বীকার করে। আমার চিন্তা ছিল, আমার যে ছেলে সে কিন্তু তার নীতি থেকে একচুলও নড়বে না। ফলে তারা টর্চার করবেই। যেদিন ভোরবেলায় তাকে ফেলে যাওয়া হয়, সেদিন বাসায় দারোয়ানের নাম্বার থেকে আমাকে কল করেছে। এরপর তাকে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করি।
গণস্বাস্থ্য হসপিটাল থেকে দ্বিতীয় বার যখন ডিবি তুলে নেয়, তখন আপনারা ডিবিতে গিয়েছেন। আপনার ছেলের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে সে সময়ে?
মমতাজ নাহার: আসিফের আম্মাসহ আমরা ডিবিতে গিয়েছি তাদের খোঁজে। আমি নাহিদকে বুঝিয়েছি, আসিফের মা আসিফকে বুঝিয়েছে। আমি যখন আমার ছেলেকে বলছিলাম- বাবা, তুমি পদত্যাগ করে চলে আসো, তখন সে আমাকে বলল, তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো, কিন্তু এই আন্দোলনে যত হাজার স্টুডেন্ট মারা গেছে, তুমি তাদের কথা একবারও ভাবোনি? দেশ নিয়ে ভাবোনি? সবার আগে দেশ। আমার কাছে সবার আগে দেশ। পরে আসিফের আম্মু বলল, ভাবি কাজ হবে না। এরপর সেখান থেকে আমরা উঠে চলে আসি। ভেতরে ওদের চোখ-মুখের যে অবস্থা, মনে হচ্ছিল আগুন করছে। তারা তাদের জায়গা থেকে এত অটল ছিল যে, তারা কোনোভাবেই সরকারের সঙ্গে আপস করবে না।
তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো, কিন্তু এই আন্দোলনে যত হাজার স্টুডেন্ট মারা গেছে, তুমি তাদের কথা একবারও ভাবোনি? দেশ নিয়ে ভাবোনি? সবার আগে দেশ। আমার কাছে সবার আগে দেশ।
আপনার ছেলে ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে চাইলে আপনার সমর্থন থাকবে?
মমতাজ নাহার: ছেলে সামনে রাজনীতি করতে চাইলে আমি বাধা দিতে পারি না। সে যদি ভালো মনে করে, তবে তা-ই করবে। তবে, রাজনীতি আমার পছন্দ হয় না। বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো সুন্দর কালচার নেই। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখি। কাকে মেরে কে খাবে, এমন পরিস্থিতি। আমি তাকে বলেছি, যাই করবি, সততার সঙ্গে করবি। আমার কাছে রক্ষনীতি মানে জনগণের সেবা। যদি তুমি সততার সঙ্গে জনগণের সেবা করতে পারো, তাহলে করো। তা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার ছেলের বিষয়ে যদি বলতে হয়। আমি বলব, আমার ছেলে খুব নীতিবান। কাজকর্মে খুব অ্যাক্টিভ। কাজকর্ম সে সততার সঙ্গে করে। সে যে কাজটাই করে, তা পুরো মনোযোগ দিয়ে করে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন