আপডেট :

        কোয়াডকপ্টার উড়িয়ে শত্রুরা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে যা তাদের নিজেদের জন্যই অপমানজনক

        বিয়ে করতে গেলেন হেলিকপ্টার নিয়ে গেলেণ বর

        ইরানের ইস্পাহান শহরের জারদানজান এলাকায় একটি পারমাণবিক স্থাপনায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা

        যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের মানববন্ধন ও সমাবেশে

        সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গাড়িকে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে

        সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গাড়িকে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে

        নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরতে হবে বললেন রাষ্ট্রপতি

        নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরতে হবে বললেন রাষ্ট্রপতি

        শাহজালালের থার্ড টার্মিনালে ঢুকে গেল রাইদা বাস, প্রকৌশলীর মৃত্যু

        ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা ভোট গ্রহন

        রাসেল মাহমুদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েও পায়নি মোহামেডান

        তূর্ণা ও কক্সবাজার এক্সপ্রেসে কাটা পড়লো ২ জন

        প্রতারিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা

        সিলেটের শাহপরাণে পুলিশের জালে দুই কারবারি

        সিলেট নগরীতে ২১ এপ্রিল থেকে কোভিডের ৩য় ও ৪র্থ ডোজ প্রদান করা হবে

        বর্ণাঢ্য আয়োজনে সিলেট ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

        প্রথম পতাকার নকশাকারদের অন্যতম শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যু

        নদী পেরিয়ে টেকনাফে আশ্রয় নিলেন বিজিপির আরও ১৩ সদস্য

        ইসরায়েলের রাতভর হামলায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি

        বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ফরিদপুর জেলা সড়ক নিরাপত্তার কমিটির সভা

অন্তরঙ্গ আলোকে: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান

অন্তরঙ্গ আলোকে: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান

গণের মানুষ, মনের মানুষ, ঘরের মানুষ বাঙালী জাতির হাজার বছরের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।  উনার অন্তরঙ্গ আলোকে আলোকিত হয়েছি আমি মহা ভাগ্যবান অথচ কেহ নহি, মোট চার বার।

প্রথম বার - আমেরিকায় বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্র সচীব এনায়েত করিম যখন ইন্তেকাল করেন ঢাকার  পি.জি. হাসপাতালে ১৯৭৪ সালের ২৪শে ফেব্রূয়ারি অতি ভোর বেলায়। মৃত্যু সংবাদে উনি চলে এসেছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, "লোকটাকে আমিই মেরে ফেললাম। কেন উনাকে অর্ডার দিলাম না, আপনি আমেরিকাতেই থাকেন, এম্বাসেডর থাকেন বা জাতিসংঘে যান।" প্রেক্ষাপট হল, আমেরিকায় পাকিস্তান দূতাবাসের সর্বউর্ধতন বাঙালি কূটনীতিক হিসেবে করিম ডিফেকশনের মাধ্যমে নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ মিশন খোলেন এবং স্বাধীন  বাংলাদেশের লক্ষ্যে কাজ করা কালীন দুটি হৃদরোগ আক্রমণের শিকার হন। সর্বজন বিদিত যে তৃতীয় হৃদরোগ আক্রমণের হাত থেকে প্রাণ ফিরে পাওয়া দুষ্কর। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা তাঁকে পরোক্ষে দিয়েছিল এরূপ - তুমি এখানে বসে বাংলাদেশের জন্য কাজ করছো, দেশে তোমার বাবা মা ভাই বোনেরা নেই? কঠিন পরিশ্রম, তার উপরে এই মানসিক চাপ তাকে দুটি হার্ট এটাক দেয়। ডিসেম্বর আনুমানিক ১৪ তারিখে আলবদর বাহিনী তার বাবাকে উত্তোলন করতে গিয়েছিল। 

দ্বিতীয়বার - গুলশান এক নম্বর মার্কেটের ঠিক পেছন দিকে এনায়েত করিমের একতলা বাসভবনে যখন তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় একই মৃত্যুদিবসের সকালে। করিমের সুপরিসর ড্রয়িং-কাম-ডাইনিং রুমের ড্রয়িং অংশের মাঝ বরাবর তাঁর মরদেহ রাখা হয়। যথা সময়ে প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান সেখানে আসেন ও মরদেহের সামনে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকলেন খানিকক্ষন। অনুমান হয় জাতির পিতার মনে তখন হয়তোবা এনায়েত করিমের সাথে তাঁর সুদীর্ঘ দিনের পরিচয়ের স্মৃতিগুলো সিনেমার দৃশ্যের মত একের পর এক খেলে যাচ্ছিল। সেই ১৯৫১-৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় উভয়ের একত্রে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবরণ, আটক অন্যান্য ভাষা সৈনিকদের সাথে। একজন ছিলেন ডাক্তার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া যার কবর পাথরে খোদিত, "এখানে শায়িত ভাষাসৈনিক ......."।  করিমের বাসভবনে তখন ছিলেন করিমের পিতা এডভোকেট মোঃ ইয়াসিন। উনি বলছেন বঙ্গবন্ধুকে, "আপনারা দুইজন তখন জেলখানায়, জেলগেটের সামনে আপনার বাবা (শেখ লুৎফুর রহমান) আর আমি টিফিন ক্যারিয়ার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতাম।"  সামনে করিমের দ্বিতীয় কন্যা শাহলা ও আমি দাঁড়ানো ছিলাম, জাতির পিতা শাহলার মাথায় একটা হাত রাখেন, কিন্তু তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, সেভাবেই বললেন, "কোনো চিন্তা নাই, আমি আছি।"  বঙ্গবন্ধু আনুমানিক তিরিশ মিনিট ছিলেন। মরহুম করিমের পত্নী হোসনে আরা করিম সেখানে ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ে এক বৎসর পরিচালক, ওয়াশিংটন ডি.সি.তে পাঁচ বছর ভিসা ও পলিটিক্যাল কাউন্সেলর, অস্ট্রেলিয়াতে পাঁচ বছর অনুরূপ পরন্তু ডেপুটি হাই কমিশনার ও সর্বশেষ, মন্ত্রণালয়ে দুই বৎসর ডাইরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। উনার দফতর ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নেপাল ও ভুটান সহ। বঙ্গবন্ধু ও হোসনে আরার মধ্যে এই সময়ে কোন বাক্য বিনিময় হয়নি।

তৃতীয়বার - সেদিনই রাত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আবার আসেন। আমি তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। গৃহের একমাত্র ইয়ং ম্যান হিসেবে আমি প্রধান মন্ত্রীর আসন্ন আগমন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় বিশেষত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে সজাগ দায়িত্ত্ব পালনে তৎপর হয়েছিলাম। পোর্টিকোর সামনের বারান্দায় সারিবদ্ধ ভাবে দন্ডায়মান ছিলেন হোসনে আরা করিমের ছয় কনিষ্ঠ ভগিনীদের স্বামীগন - এনিম্যাল হাসবেনড্রির ডেপুটি পরিচালক আবুল ফয়েজ, পরিকল্পনার ডেপুটি সেক্রেটারি হায়দার আলী, তথ্য ও বেতারের ডেপুটি ডাইরেক্টর আসিফ আলী, লিভার ব্রাদার্সের ক্রেতাপ্রধান আজিজুর রহমান, ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম, ও সর্বশেষ টেলিফোন ও তার যোগাযোগের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। উনাদের পিছনে গৃহে প্রবেশের প্রধান দরজা, ডাইনে ডাইনিং স্পেসের দরজা বন্ধ, বামে আমার ঘরের দরজা বন্ধ। পাকের ঘরের সামনে বাইরে বাহিরিবার দরজা তালাবন্ধ, সর্বপিছনের বারান্দার দরজা তালাবন্ধ, গৃহের ডানদিকে হলওয়ের দরজা তালাবন্ধ। ইতিমধ্যে বাইরে তাকিয়ে হঠাৎ দেখি বন্দুক হাতে কয়েকজন সেনা প্রহরী দালানের চারিদিকে অবস্থান নিয়েছেন। বুঝলাম প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি এখনই ঢুকবে। পোর্টিকোতে দেখলাম বঙ্গবন্ধুর গাড়ি দাঁড়ানো, উনি তখনো সমাসীন, পোর্টিকোর বারান্দায় ছয় ভদ্রলোক পিছনে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন, আমি সেখানে গেলে তিনচারজন বলে উঠলেন, "ওই তো ঝন্টু এসেছে!" যেন প্রধানমন্ত্রীকে গাড়ি থেকে নামানো আমারই দায়িত্ত্ব। ড্রাইভ ওয়েতে ঢুকে গাড়ির মুখ সামনে, বন্ধ মেইন গেটের সামনে ও পিছনে দুজন করে বন্দুক হাতে দাঁড়ানো। বাঁ হাতে গাড়ির দরজার হ্যান্ডেল ধরে ডান হাত জানালা দিয়ে ঢোকানো মাত্র বঙ্গবন্ধু উনার বিশাল থাবা দিয়ে আমার ডান হাত খপ করে ধরেছেন, "দেখি এখন ক্যামনে নামান!", "এটা কোন ব্যাপার না!" বলে আমি উনার ডান হাত আমার বাঁ হাতে নিয়ে ডান হাতে গাড়ির দরজা খুললাম, উনার ডান হাত আবার আমার ডান হাতে নিয়ে বাঁ হাতে গাড়ির দরজা সম্পূর্ণ খুলে ধরলাম। ততক্ষনে উচ্চস্বরে উনার "হা-হা" হাসি শুরু হয়ে গিয়েছে, "শাবাশ!" বলে সেভাবেই হাসতে হাসতে আমর ডান কাঁধে হাত দিয়ে কার যেন খুলে দেওয়া দরজা দিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকলেন। "কি নাম তোমার?", "ঝন্টু", "ঝন্টু!?, এইটা আবার একটা নাম হইলো?" উনার ছাদ ফাটানো সে-কি বিরাট অট্টহাস্য, থামতেই চায় না। এই সময় হোসনে আরা অনুচ্চ স্বরে উনাকে কিছু বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু মাথা সামান্য ঝুকিয়ে সেটা শুনলেন। আমি উনার অটোগ্রাফ কোথায় নেবো তাড়াতাড়িতে আমার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর প্রধান দেহরক্ষী আমার গমনপথের দিকে সুতীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিলেন। আমি তাড়াতাড়িতে আমার গীতবিতান নিয়ে উনার সামনে মলাট উল্টিয়ে ধরলাম, উনি লিখে দিলেন, "ঝন্টুকে শুভেচ্ছা সহ"।  
 
বঙ্গবন্ধু আমার কাঁধে হাত দিয়ে ঘরে ঢোকার পর ভালো করে তাকিয়ে দেখি সেখানে আরো রয়েছেন ফরেন মিনিস্টার ডঃ কামাল হোসেন, ডেপুটি ফরেন সেক্রেটারি ফখরুদ্দিন আহমেদ, পশ্চিম ইউরোপের ডি.জি. নবাব পরিবারের খড়গনাসা কায়সার মোর্শেদ, পূর্ব ইউরোপ সংক্রান্ত ডি.জি. রেজাউল করিম এবং পশ্চিম আফ্রিকা সংক্রান্ত ডি.জি. শামসুল আলম। বঙ্গবন্ধুর কাছে আমার বিষয়ে হোসনে আরার কথা শেষ হতেই সামনে এগিয়ে এসে ডি.জি. শামসুল আলম আমার দিকে খানিক ইশারা করে বঙ্গবন্ধুকে বললেন, "স্যার উনি ফরেন অফিস জয়েন করবেন।" প্রধান মন্ত্রী আমাকে বললেন, "খালি জয়েন করলেই হইবো! করিমের মত ন্যাশনালিস্ট হইতে পারবা? এর পরে ডাইনিং স্পেসে ডাইনিং টেবিলে বসে বঙ্গবন্ধু ও হোসনে আরা মাথা নামিয়ে কিছু আলোচনা করলেন। সেখানে আলোচনা হয় হোসনে আরা এক বৎসর পরিচালক হিসেবে কাজ করে ওয়াশিংটন ডি.সি. যাবেন ও আমি দুই-তিন মাস পর ফাইনাল ইয়ার শেষ করে প্রারম্ভিক "সেকশন অফিসার" হিসেবে যোগ দিতে পারবো। বঙ্গবন্ধু সহ বাকি সকলের প্রস্থানের পর ফখরুদ্দিন আহমেদ আমাকে একান্তে ডেকে নিয়ে বললেন এনায়েত করিমের কালো ফ্যালকন ৫০০ হোসনে আরা ব্যবহার করতে থাকবেন। পরের দিন সকালে দেখি পোর্টিকোর নিচে গাড়িটা দাঁড়ানো। বঙ্গবন্ধুর ডান হাত বিবেচিত এনায়েত করিমের ৩১ নম্বর রাস্তায় তৎকালীন দোতলা বাড়ি বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ভবনের ঠিক পেছনে, কমন বাউন্ডারি দেয়াল। করিমকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "রিটায়ার করার পর আমরা বাউন্ডারি ওয়ালে একটা দরজা বানাবো, একদিন আমার উঠানে আর একদিন আপনার উঠানে বসে আমরা চা খাবো আর দাবা খেলব।" হায় কি হল! ১৯৭৪-এ ইন্তেকাল করলেন এনায়েত করিম, ১৯৭৫-এ বিপথগামী কিছু সেনা অফিসার নৃশংস ভাবে হত্যা করলো জাতির পিতা সহ উনার পুরো পরিবার। দুই বোন বিদেশে থাকার কারণে নিস্তার পেয়ে যান। সদ্য সমাপ্ত করিমের দুইতলার ছাদে আমি খেলতাম, উল্টোদিকের ছাদে দেখতাম আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছোট বোন শেখ রেহানা ও ভাই শেখ কামাল ক্রীড়ারত।       

চতুর্থ বার - ১৯৭৪-এর মাঝামাঝি এক সরকারি ছুটির রৌদ্রকরোজ্জ্বল বিকেলে হোসনা আরা আমাকে বললেন, "ঝন্টু শিগগির রেডি হও, আমরা প্রধান মন্ত্রীর বাসায় যামু।" করিমের অফিশিয়াল কালো ফ্যালকন উনি কয়েকদিন মাত্র ব্যবহার করে ফেরত দিয়ে দেন ও পারিবারিক প্রায় নতুন সাদা চার দরজা মাজদা ১৬০০ ব্যবহার শুরু করেন। গাড়িটা বেশ ভারী ছিল। উনি চালাচ্ছেন, আমি পাশে বসা। গাড়িটা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ভিতরে পার্ক করে পেছনে হেঁটে পাশের একটা দরজা দিয়ে ঢুকে আলাদা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় আমরা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ড্রয়িং-ডাইনিং রুমে উঠলাম। পেছন দিকে ছয় চেয়ারের ডাইনিং টেবিল, তার সামনে ট্রিপল সোফায় বঙ্গবন্ধু বসা ছিলেন, উনার পেছনে কাজের ছেলেটা সোফায় ভর দিয়ে তাকিয়ে আছে, মাঝে ছোট সেন্টার টেবিল, উল্টো দিকের ডাবল সোফায় হোসনে আরা বসলেন, আমি সিঙ্গেল সোফাটায় বসলাম। বঙ্গবন্ধুর পরনে সাদা বেশ ঢিলা পাজামা, ততোধিক ঢিলা সাদা পাঞ্জাবির হাতা হাতের কব্জি পেরিয়ে প্রায় আঙুলের মাথা পর্যন্ত। জাতির পিতার ঢুলু ঢুলু চোখ চেহারায় গভীর প্রশান্তির ছাপ, বাংলাদেশকে উনি স্বাধীন করে দিয়েছেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালী জাতিকে উনি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। কাজের ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, "অই মেহমানদের চা দিবি কি দিয়া?", "নানা কেক আছে দিই?" উনি মৃদু মাথা নেড়ে যায় দিলেন। ফ্রট কেক আর চা। হোসনে আরা কিছু নিলেন না, জাতির পিতা চায়ের কাপে দুই-তিন চুমুক দিয়ে সেটা ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি ছোট এক পিস্ কেক শেষ করলাম, কাপের চা প্রায় শেষ করলাম, উনি বেশ আমুদে চোখে হালকা অবলোকন করছেন। ছেলেটা টেবিল পরিষ্কার করলো। জাতির পিতা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "ঝন্টু সাহেব কিছু বলেন।", "কি বলবো?" , "এই যেমন প্রথম দিকে কত কত ব্যাংক ডাকাতি হইলো, দুইটা একটা এখনো হয়, সবাই বলে আমি যথেষ্ট কড়া না।"  আমি একটু চিন্তায় পড়লাম, ভাবছি এত কঠিন একটা প্রশ্ন! উনি সামান্য হেসে বললেন, "তোমার যা বলার নির্ভয়ে বলো।" উনি আমাকে পরীক্ষা করছেন। আমি বললাম, "সংবাদ পত্রের খবরে জানা যায় এই ডাকাতিগুলো হয়েছে অনেকাংশে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বা আধুনিক পিস্তল ব্যবহার করে। আমার অনুমান হয় প্রথম দিকে এটা যারা করেছিল বা এখনো মাঝে মধ্যে করে তাদের মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা, এই পরিস্থিতি তো চিরদিন থাকবে না, অচিরেই শেষ হবে বলে আমার বিশ্বাস।" উনি শুনতে শুনতে একটু সোজা হয়ে বসেছেন, "ঝন্টু, একটা বাচ্চা ছেলে হইয়াও তুমি যেটা বুঝলা, আমি মানীগুণী মানুষদেরে সেইটা ক্যামনে বুঝাবো?" উনার চেহারা এখন সজাগ, মৃদুহাসি। আমার কূটনৈতিক উত্তরে উনি সন্তুষ্ট। "আর কোন উপদেশ!", "আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণে তেল অনুসন্ধানে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। ভারত বলছে এই তেল-গ্যাসে নাকি তাদের ভাগ রয়েছে, আমরা একতরফা ভাবে তেল উত্তোলন করতে পারবো না। আমার কথা হল তারা তাদের অংশে উত্তোলন করে না কেন, কে বাধা দিচ্ছে! আমার মনে হয় সমুদ্র-সীমা বা "maritime law" আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে জ্বালানি দফতরের দায়িত্ত্ব দিলে ভালো হবে। জাতির পিতার কিছুটা  আশ্চর্যান্বিত সহাস্য চেহারা আমার মনে আছে। "আমি তো ইতিমধ্যে ব্যারিস্টার কামালকে এই দায়িত্ত্ব দিবার ডিসিশন নিয়েছি!" হোসনে আরা এই সমস্ত সময়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করেননি, বলার জন্য নিয়ে গিয়েছেন আমাকে। আমরা চলে আসার সময় সিঁড়ির মাথায় একটু ঝুকে আমার মাথায় উনার সুবিশাল উষ্ণ থাবা বসিয়ে সামনে থেকে পিছনে একটু বুলিয়ে দিলেন, "তুমি আবার আসবা।" আমার আর যাওয়া হয়নি।              

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত