পাকিস্তানি সিনেমার কদর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে
গত বছর প্রথম কোনো পাকিস্তানি চলচ্চিত্র হিসাবে অস্কারের মঞ্চে মনোনয়ন পায় ‘জয়ল্যান্ড’। একজন রূপান্তরকামী নারীর সঙ্গে বিবাহিত এক পুরুষের প্রেম, পুরুষতান্ত্রিক পরিবার, রক্ষণশীল ধ্যান ধারণা- সব মিলিয়ে জটিল এক আখ্যান চিত্রায়িত করা হয়েছিল ‘জয়ল্যান্ড’ সিনেমাটিতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেলেও, নিজ দেশেই আটকে যায় সিনেমাটি। পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে এর প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে প্রগতিশীল গল্পগুলো? সাথে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতাই বা কী প্রভাব ফেলছে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে? এ প্রশ্নগুলোর নানা আঙ্গিকে উত্তর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘জয়ল্যান্ড’-এর আগে ২০১২ সালে শারমিন ওবায়েদ-চিনয় নির্মিত ‘সেভিং ফেস’ সেরা ডকুমেন্টারি বিভাগে একাডেমি পুরষ্কার জিতেছিল। মূলত সেটাই ছিল অস্কারের মঞ্চে পাকিস্তানের প্রথম কোনো অর্জন। এ নারী নির্মাতা ৪ বছর পর পুনরায় "আ গার্ল ইন দ্য রিভার: দ্য প্রাইস অফ ফরগিভনেস"-এর জন্য তার দ্বিতীয় অস্কার জয় করেন। বর্তমানে তিনি পরবর্তী ‘স্টার ওয়ার্স’ চলচ্চিত্র পরিচালনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শারমিনের মতো আরও একজন পাকিস্তানি নির্মাতাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচালনা করতে দেখা যাবে। আসিম আব্বাসি নামের এ তরুণ নির্মাতাকে ‘দ্য ফেমাস ফাইভ’-এর একটি পর্ব পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক শো-বিজ অঙ্গনে পাকিস্তানের কৃতিত্ব জাহির করে নিঃসন্দেহে। তাহলে নিজ দেশে চলচ্চিত্র শিল্পের দশা এমন বেহাল কেন? জার্মানি-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় উত্তর।
অস্কার-বিজয়ী নির্মাতা শারমিন ওবায়েদ-চিনয় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এত বছর ধরে চলচ্চিত্র নির্মাতারা নানা কারণে পাকিস্তানের সীমানার বাইরে কাজ করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু বর্তমানে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি অংশ এখন দেশের গন্ডির বাইরেও তাদের নৈপুণ্য অনুশীলন করতে চান সেটা যুক্তরাজ্যে হোক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।’
পাকিস্তানে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা কঠিন। এ সত্য মেনে নিয়েই তিনি বলেন,
‘এখানে কোনো তহবিল নেই, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব কম এবং সেন্সরশিপও জোরদার। চলচ্চিত্র নির্মাতারা সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ গল্প বলতে চান। তারা পাকিস্তানে তাদের গল্পটি বলতে না পারলে দেশের বাইরে যেতে দ্বিধাবোধ করবে না। 'জিন্দেগি তামাশা' এবং 'জয়ল্যান্ড' নিয়ে কী হয়েছে তা আমরা সবাই দেখেছি। আমি মনে করি, চলচ্চিত্র নির্মাতারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। তাদের নৈপুণ্য সম্মানের দাবি রাখে।’
কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্জনকে প্রকৃত অর্থে অর্জন বলা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চলচ্চিত্র পরিবেশক ও প্রদর্শক নাদিম মান্ডভিওয়ালা। তার মতে, এর সঙ্গে কতগুলো বিষয় জড়িত।
তিনি বলেন, ‘মূল বিষয় হলো, আমাদের আরও সিনেমা তৈরি করতে হবে। সিনেমাগুলো দর্শক টানতে পারলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। দেখা যায়, যে ১০ জন পরিচালক সিনেমা তৈরি করছেন তাদের মধ্যে দুয়েকজন সবাইকে অবাক করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।’
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আলী জেইন স্থানীয় বক্স অফিসের আরও করুণ এক চিত্র তুলে ধরেন। বলেন,
‘‘সংগ্রাম বেড়েছে আগের থেকে। প্রথমত, কোভিডের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। ভারতীয় চলচ্চিত্র পাকিস্তানে মুক্তির অনুমতি না দেওয়ায় অবস্থা আরও জটিল হয়েছে। দেশে একটি শীর্ষস্থানীয় মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে যা গত চার বছরে সিনেমা দেখানোর পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। নতুন বড় ব্যানারের সিনেমাও আসছে না শিগগিরই।’
তার মতে, ব্যবসা শুধুমাত্র ইংরেজি [হলিউড] চলচ্চিত্রের উপর নির্ভর করে চলছে। কিন্তু এরকম আর কতদিন চলতে পারবে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
অভিনেতা আদনান শাহ টিপুর কথায় উঠে আসে নতুন তথ্য।
টিপু বাড়তে থাকা অর্থনৈতিক অস্থিরতাকেই দুষছেন এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য। তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো- চলচ্চিত্রগুলো আর জনসাধারণের 'পরিসরে' নেই। একজন মধ্যবিত্ত দর্শক কীভাবে ৭৫০ রুপি (২.৪৮ ডলার) মূল্যের একটা টিকিট কিনবে? আপনি আপনার চলচ্চিত্রগুলোকে সাধারণ দর্শকের কাছে না আনতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন