আটককেন্দ্রে মেক্সিকান অভিবাসীর মৃত্যু, চলতি বছরে আইসিই হেফাজতে ১৪তম প্রাণহানি
‘জানি না আমার বাঁশিতে আর সুর উঠবে কি না’
‘আমি জানি না আমার বাঁশিতে আর সুর উঠবে কি না। হয় আমাকে বাঁশি বাজানো ছেড়ে দিতে হবে, নাহলে আরও বেশি করে বাজাতে হবে।’ প্রিয় স্ত্রীর প্রয়াণে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন দেশের স্বনামধন্য বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর হাসপাতালে ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় লালনসংগীতের এই মহারথীর। রোববার দুপুর ১২টার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। শিল্পীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষ ভিড় করেন সেখানে, সে সময় ফরিদা পারভীনের স্বামী বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম আবেগঘন হয়ে পড়েন।
গাজী আবদুল হাকিম বলেন, ‘ফরিদা পারভীনের মতো শিল্পী শতবর্ষে একবার আসে। তার চলে যাওয়ার ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে, আমি জানি না। কারও জন্য তো কোনোকিছু আটকে থাকে না। এটাও ঠিক ফরিদা পারভীন আর আসবেন না। কাজী নজরুল ইসলাম কি আর কোনো দিন হবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি হবে? আমি তাদের সঙ্গে তুলনা করছি না। কিন্তু ফরিদা পারভীন শতবর্ষে একবার আসে। কুষ্টিয়ার আখড়া থেকে পৃথিবীর দরবারে লালনগীতি পৌঁছে দিয়েছেন ফরিদা পারভীন। বড়লোকদের ড্রয়িং রুমে পৌঁছে দিয়েছেন। এরচেয়ে বড় কিছু তো আর হতে পারে না।’
গাজী আবদুল হাকিম শুধু ফরিদা পারভীনের জীবনসঙ্গী ছিলেন না, কর্মক্ষেত্রেও তারা ছিলেন সফল যুগল। ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে লালনগীতির সঙ্গে গাজী আবদুল হাকিমের বাশির সুর মিশে যেন ভিন্ন এক মাত্রা পেত। ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের সঙ্গীকে হারিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন গাজী আবদুল হাকিম।
গাজী আবদুল হাকিম বলেন, ‘তার স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবনটুকু বেঁচে থাকতে হবে। কিন্তু এই বেঁচে থাকা অনেক কষ্টের। আমরা যুগলবন্দী ছিলাম। আমার বাঁশি আর ফরিদা পারভীনের গান যেভাবে ক্লিক করেছে, সেটা আর কোথাও হয়নি। আমি জানি না আমার বাঁশিতে আর সুর উঠবে কি না। হয় আমাকে বাঁশি বাজানো ছেড়ে দিতে হবে, নাহলে আরও বেশি করে বাজাতে হবে, যাতে ওপারে সে তৃপ্তি পায় যে আমার হাকিম তো বাশিটা বাজাচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জোহর নামাজের পর ফরিদা পারভীনের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়ায়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হন লালনসংগীতের এই কিংবদন্তি শিল্পী।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন