শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন
ভারতে শুরু জ্বলছে ক্ষোভের আগুনঃ ক্রিকেটাররা ঝুকিতে
ভারতীয় ক্রিকেটটাই এক অর্থে এমনই।
ক্রিকেট ধর্মের মতো যে দেশে, সেই দেশেক্রিকেটারদের ব্যর্থতা মোটেও মেনে নিতেপারেন না সমর্থকরা। ম্যাচ তখনও শেষহয়নি। সিডনির যে গ্যালারির প্রায় ৭০শতাংশ পূর্ণ হয়েছিল ভারতীয় তেরঙায়, সেগ্যালারি প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। অসহায়নেতার মতো শেষ ভরসা মহেন্দ্র সিং ধোনিরানআউট হয়ে গেলেন। গ্যালারিতে তাক করাক্যামেরার ফ্লাশ দেখাল চোখ ছলছল একভারতীয় দর্শককে। বেদনাবিধুর তখন ভারতঅধ্যুষিত গ্যালারি। ঠিক তখনই বা তারকিছুক্ষণ আগে-পরে ভারতে শুরু হয়ে গেছেক্ষোভ, আগুনে পোড়ানো শুরু হয়েছেক্রিকেটারদের পোস্টার। খেলোয়াড়দেরবাড়িগুলোতে তাই স্থানীয় পুলিশের তরফথেকে নিজ উদ্যোগে নেওয়া হয় বাড়তিনিরাপত্তা।ভারতীয় মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, অধিনায়কধোনির ঝাড়খণ্ড প্রদেশের রাঁচির বাড়িতেইসবার আগে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণকরা হয়। অথচ এই ভারতই সেমির আগ পর্যন্তবিশ্বকাপের টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিতছিল। এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয় ভারতে।১৯৯৬ সালের সেমিতে ভারত যখন হেরেযাচ্ছিল, তখন ইডেন গার্ডেন্সেরগ্যালারিতেই আগুন ধরিয়ে দিয়ে ম্যাচশেষের আগেই শেষ করতে বাধ্য করেনভারতীয়রা দর্শকরা। ২০০৭ সালেরবিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়ারপরও ক্রিকেটারদের বাড়িতে হামলা চালানসমর্থকরা। ঢাকায় ২০১৪ সালের টি২০বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষেহেরে যাওয়ার পর যুবরাজ সিংয়েরপাঞ্জাবের বাড়িতে হামলা চালানসমর্থকরা। অথচ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ারআগে, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ে ভারতেরসবচেয়ে বড় নায়ক ছিলেন যুবরাজই,হয়েছিলেন টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড়।কিন্তু মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তিনিখলনায়ক! এবার যেমন, ডিফেন্ডিংচ্যাম্পিয়নরা সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায়ভারতীয় সমর্থকরা চার বছর আগের হিরোদেরচার বছর পরই ভিলেনের আসনে বসিয়েদিয়েছেন!এই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় ভারতীয়রাসমর্থকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ তারকাব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির ওপর। কোহলিএই ম্যাচে ১৩ বলে ১ রান করে আউট হয়েদলকে বিপাকে ফেলেন। পাকিস্তানেরবিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১০৭ রান করা ছাড়াকোহলি এবারের আসরে তেমন কিছুই করতেপারেননি। তার এই ফর্মহীনতার কারণহিসেবে ভারতীয় সমর্থকরা ফেসবুক ওটুইটারে তার বান্ধবী বলিউড অভিনেত্রীআনুশকা শর্মাকে দায়ী করে বিভিন্ন ধরনেরআক্রমণাত্মক পোস্ট করছেন। এমনকি রাস্তায়নেমে আনুশকার পোস্টারও পুড়িয়েছেন।কোহলি-আনুশকা ছাড়াও রোহিত শর্মা, সুরেশরায়না ও রবীন্দ্র জাদেজার ওপর সমর্থকদেরক্ষোভ সবচেয়ে বেশি।অবশ্য শুধু পোস্টার পুড়িয়ে ও রাস্তায়বিক্ষোভ করেই ক্ষান্ত হননি ভারতীয়সমর্থকরা, কানপুরে ও গোরখপুরে অনেকেইরাগে-ক্ষোভে-দুঃখে তাদের টেলিভিশনপর্যন্ত ভেঙে ফেলেছেন!সেমিফাইনালে টসেজিতে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটেকরা ৩২৮ রানের জবাবে ভারত ৪৬.৫ ওভারে২৩৩ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারে ৯৫রানে। পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ খেলাভারত এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এতটা বাজেখেলায় ক্রিকেটারদের সমালোচনা করেছেনসাবেক ক্রিকেটাররাও। তারা অবশ্যসমালোচনার ক্ষেত্রে ক্রিকেটীয়দৃষ্টিকোণেরই বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন।সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কারযেমন বলেছেন, 'তাদের শট নির্বাচন আমাকেখুবই হতাশ করেছে। বিরাটকে তার পুল শটআরও উন্নত করতে হবে। ৩২৯ রান তাড়াকরার চাপ ভারতীয় ব্যাটসম্যানদেরব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে। তারাউইকেটে টিকতেই পারেনি এবং বাজে শটখেলে রান করার চেষ্টা করেছে।'২০০৩ সালের বিশ্বকাপ রানার্সআপ হওয়াভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক অধিনায়কসৌরভ গাঙ্গুলী অবশ্য ক্রিকেটীয়ব্যাখ্যাসহ সমর্থকদের আচরণেরও সমালোচনাকরেছেন। তার মতে, বিরাট কোহলিরব্যর্থতার জন্য আনুশকা শর্মাকে দোষারোপকরা বাড়াবাড়ি। সৌরভ বলেছেন, 'আনুশকাকী ভুল করেছে? সে তো শুধু একটা ক্রিকেটম্যাচই দেখতে গিয়েছে, যেমনটা অন্যখেলোয়াড়দের পরিবারও গেছে। কোহলিরপারফরম্যান্সের কারণে তাকে দোষারোপকরা অন্যায়। এটা সমর্থকরদেরঅপরিপকস্ফতারই প্রতিফলন।' সঙ্গে যোগকরেন, 'যখন দু'জন মানুষ ভালোবাসারসম্পর্কে সম্পৃক্ত হয়, সেটা তো কোনো ভুলনয়।' ভারত কেন ম্যাচ হেরেছে সেইব্যাখ্যাও দিয়েছেন সর্বকালের অন্যতমসেরা এই ভারতীয় অধিনায়ক, 'খোলামেলাইবলছি, মোহিত শর্মা, উমেশ যাদব ওমোহাম্মদ শামির শ্রেণীর বোলার নয়, যদিওঅনেকে মনে করেন তার সেই সামর্থ্য আছে।রবীন্দ্র জাদেজাকে হয় উইকেট নিতে হবে,নতুবা সাত নম্বরে রান করতে হবে। সেকোনোটাই করতে পারেনি। এটাই অন্যদলগুলোর সঙ্গে ভারতেরপার্থক্য।'সাবেকদের এমন ক্রিকেটীয়ব্যাখ্যাও কি পারবে ক্রিকেট-পাগলভারতীয়দের ক্ষোভের আগুনকে প্রশমিতকরতে?
শেয়ার করুন