অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে আফগানিস্তান
গত আগস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর তালেবান ক্ষমতায় ফেরে। শুরু হয় আফগানদের দেশছাড়ার হিড়িক। অনেক তালেবান নেতার নাম মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকায় নতুন সরকার শুরু থেকেই চাপে ছিল। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের দেশ ছাড়ার প্রতিযোগিতা পরিস্হিতিকে করে তুলেছে বিপজ্জনক। দিনের পর দিন অবস্হা শোচনীয় হয়েছে।
আফগনিস্তানে বেশির ভাগ মানুষের রুজি রোজগারের নিশ্চিত ব্যবস্থা নেই। অর্ধেকের বেশি মানুষ অনাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তনিও গুতেরেস গত মাসে বলেছিলেন, ‘আফগানদের জন্য দৈনন্দিন জীবন নরকযন্ত্রণা হয়ে উঠেছে। আফগান পুনর্গঠন তহবিলের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতিমতো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অতিসত্বর ছাড় করা প্রয়োজন। তালেবান নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় জরুরি ত্রাণ ও মানবিক সংস্হাগুলো দেশটিতে কাজ করতে ভরসা পাচ্ছে না।
বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এই সংস্হাগুলোকে নির্ভয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এদিকে নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান ইগল্যান্ড সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন আফগানিস্তান দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তিনি বলেন, সমস্যা যে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুরু হয়েছে তা নয় এর আগের সরকারগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে দেশটিতে ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারেনি। ফলে প্রতিবেশী ইরান ও পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া সাধারণ আফগানদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নাই।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানুয়ারিতে সতর্ক করে বলেছিল, আফগানিস্তান ‘ক্ষুধার সুনামি’ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ দেশটির অর্থনীতি বিধ্বস্তপ্রায়। সে দেশ থেকে আকস্মিক সৈন্য প্রত্যাহারের ফলে মানবিক সঙ্কট তৈরির ঝুঁকি আছে, বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে আবারও আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। তবে তিনি মনে করেন না যে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলেই দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে চলেছে। ব্রিটিশ সাংবাদিক জেন ফার্গুসন সম্প্রতি আফগানিস্তান সফর করেন। এই সফরের ওপর ভিত্তি করে তিনি নিউ ইয়র্কের একটি নিবন্ধ লিখেছেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মৌলিক সেবাগুলো নিশ্চিত করতে না পারায় অর্থনীতি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে আফগানিস্তানে এখন কিছু অবশিষ্ট নেই। দেশটি এখন পুরোপুরি বৈদেশিক সাহাঘ্যের ওপর নির্ভরশীল।’ পিবিএইচ নিউজ আওয়ারের উপস্হাপক জেন নিউ ইয়র্কের একজন নিয়মিত লেখক। যুদ্ধ নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য তার পরিচিতি রয়েছে।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি আফগান প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে। অভিবাসী নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মতে, প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার আফগান ইরানে ঢুকছে। এক্ষেত্রে ইরানে সীমান্ত শহর জারাঞ্জকে তারা গেটওয়ে হিসাবে ব্যবহার করছে। জারাঞ্জের উপকণ্ঠে রয়েছে প্রচুর বেসরকারি বাস টার্মিনাল, রেস্তোরাঁ ও স্বল্পমূল্যের অতিথিশালা।
শরণার্থীরা সাধারণত রাতের বেলা গিয়ে সেখানে পৌঁছে। সেখান থেকে দালালচক্র তাদের দেশের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। ২৬ বছর বয়সি শরণার্থী নাজাফ আখলাকি বলছিলেন, দেশছাড়া ছাড়া তার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ তিনি মনে করেছিলেন আফগানিস্তানে তাদের কোনো ভবিষ্যত্ নেই। আখলাকির মতো বহু আফগান শরণার্থীর একই মত। অর্থনৈতিক সংকট, নারী অধিকার ও অন্যান্য ইসু্যতে পশ্চিমের সঙ্গে তালেবানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কাও নিষেধাজ্ঞা, সব মিলিয়ে এক অন্ধকার ভবিষ্যত্ বহু আফগানের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে দেশের অর্থনীতিই ধসে পড়ার মুখে, ত্রাণ সহায়তা সে অবস্হার কতটুকু পরিবর্তন ঘটাতে পারবে? আফগানিস্তানের মানুষের বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হলে দেশের ভেতরই তাদের জন্য কাজের ব্যবস্হা করতে হবে। এজন্য অর্থনীতির সবগুলোর খাত সচল করে তুলতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/আই
[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]
শেয়ার করুন