ফ্রান্সে পেনশন নিয়ে জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
ফ্রান্সে পেনশন পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লাগাতার প্রতিবাদ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। বিক্ষোভের সময় বহু জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বোর্দো শহরের ঐতিহাসিক পৌর ভবনের দরজায় আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নবম দিনের বিক্ষোভে দশ লাখ মানুষ অংশ নেয়। তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ৩৫ লাখ মানুষ। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৪১ জন সদস্য আহত হয়েছে। বেশ কিছু শহরে দাঙ্গা পুলিশের ছোঁড়া স্টান গ্রেনেডে আহত হয়েছে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীও।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও প্যারিস ও বোর্দোসহ আরও কয়েকটি শহরে মিছিলের বাইরে সহিংসতা হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজধানী প্যারিসের রাস্তাতেই ৯০৩টি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বিক্ষোভকারীদের এভাবে ফুঁসে ওঠার পেছনে ছিল বুধবার প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর টেলিভিশনে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার। জাতীয় পরিষদে চূড়ান্ত ভোটাভুটি ছাড়াই ৪৯:৩ নামে সংবিধানের বিশেষ একটি ধারা প্রয়োগ করে সরকার অবসর গ্রহণের বয়স সংক্রান্ত এই সংস্কার পাস করিয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এই সাক্ষাৎকারে জানান। এই সংস্কার অনুযায়ী অবসর গ্রহণের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়েছে।
এই সংস্কারের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন পেনশনভোগীর সংখ্যা ছিল এক কোটি, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখে। তিনি বলেন, 'আমরা যত দেরি করব, তত এই সংখ্যা বাড়বে এবং (কোষাগারে) ঘাটতিও বাড়বে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সঠিক সময়।'
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে পেনশন পদ্ধতিতে এই সংস্কার আনায় ক্রুদ্ধ হয়েছে বহু মানুষ।
১৯ বছর বয়স্ক আইনের ছাত্রী এডেল বিবিসিকে বলেন, 'আমি ম্যাক্রোঁর সাক্ষাৎকার শুনেছি। শুনে মনে হচ্ছিল যেন কেউ আমাদের মুখে থুতু ছুঁড়ছে। এই পেনশন সংস্কার নিয়ে আইনে পরিবর্তন আনার অন্য পথও আছে। আসলে তিনি জনগণের কথা শুনতে চান না। এখানে গণতন্ত্রের স্পষ্ট অভাব রয়েছে।'
ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। তেল পরিশোধনাগার আর তেলের ডিপো অবরোধ করার কারণে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। ল্য ফিগারো ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ১৫ শতাংশ পেট্রল স্টেশনে পেট্রল ও ডিজেল ফুরিয়ে গেছে।
যারা প্যারিসের বাসাবাড়ি ও রাস্তা থেকে আবর্জনা তুলে নিয়ে যায়, তারাও প্রতিবাদে যোগ দেওয়ায় দুই সপ্তাহের ওপর আবর্জনার বিনগুলো খালি করা হয়নি। প্যারিসের বহু এলাকায় জঞ্জাল উপচে পড়ছে।
এলএবাংলাটাইমস/এজেড
শেয়ার করুন