‘শিবশক্তি’ হল মোদি চন্দ্রযানের অবতরণের স্থানের নামকরণ
ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান–৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যেখানে অবতরণ করেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই জায়গার নাম দিলেন ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’। শুধু তা–ই নয়, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান–২ যেখানে ভেঙে পড়েছিল, ব্যর্থ হয়েছিল অভিযান, সেই জায়গার নাম রাখলেন ‘তেরঙা পয়েন্ট’। তিনি জানালেন, সার্থক চন্দ্রাভিযানের দিন ২৩ আগস্ট এখন থেকে ‘জাতীয় মহাকাশ দিবস’ হিসেবে উদ্যাপিত হবে।
ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ও অন্য বিজ্ঞানী–প্রযুক্তিবিদদের সামনে প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণের কিছুটা ব্যাখ্যাও দিলেন। তিনি বললেন, শিবের সঙ্গে শক্তি জোড়া হয়েছে বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম, প্রেরণা ও নারী শক্তিকে সম্মান দিতে। ইসরোর নারী বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে তিনি আলাদাভাবে কথা বলেন। অভিনন্দন জানান। বলেন, নারী শক্তির অবদান ছাড়া চন্দ্রাভিযান সফল হতো না।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও গ্রিস সফর শেষে দেশে ফেরার পথে দিল্লি না এসে আজ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদি সোজা চলে যান কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। সেখানে ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা ‘হ্যাল’–এর ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে সকাল পৌনে সাতটায় তাঁর বিশেষ উড়োজাহাজ অবতরণ করে। সেখান থেকে তিনি সোজা চলে যান ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’য়। হ্যাল বিমানবন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) মারফত জানিয়ে দেন, ‘ইসরোর সেসব বিজ্ঞানীর সঙ্গে দেখা করতে মুখিয়ে আছি, যাঁরা চন্দ্রযান–৩ অভিযান সফল করে দেশকে গর্বিত করেছেন।’
হ্যাল বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে রাজ্যপাল থেবরচাঁদ গেহলট বা মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া উপস্থিত ছিলেন না। কংগ্রেস জানায়, মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। যদিও প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ওই দিন সকালে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে বারণ তিনিই করেছিলেন।
তবে বিমানবন্দরের বাইরে কয়েক শ দলীয় কর্মী ও সমর্থক প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনে ভাষণ দিতে উপযুক্ত মঞ্চও তৈরি করা হয়েছিল। সেই মঞ্চের পেছনে ‘ব্যাকড্রপ’ হিসেবে ছিল চন্দ্রযান–৩–এর অবতরণ, জাতীয় পতাকা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। স্পষ্টতই, মোদির ইসরো আগমনের সিদ্ধান্ত চটজলদি গৃহীত ছিল না। হুট করে যাত্রাপথ বদল করে তিনি বেঙ্গালুরু যাননি। পরিকল্পনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
হ্যাল–এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজনও ছিল সেই পরিকল্পনার অংশ। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ‘জয় জওয়ান, জয় বিজ্ঞান ও জয় অনুসন্ধান’ স্লোগান দেন এবং উপস্থিত সবাইকে গলা মেলাতে বলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী যান ইসরোয়। সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময় ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁদের একাগ্রতা, পরিশ্রম ও ধৈর্য দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ভারতীয় বিজ্ঞানের জয়যাত্রার শঙ্খধ্বনি আজ অনুরণিত হচ্ছে। ভারতের জ্ঞান–বিজ্ঞান দাসত্বের সিন্দুকে আটকে রয়েছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে তা থেকে মুক্ত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদের যে জায়গায় আমরা পৌঁছেছি, আজ পর্যন্ত কেউ সে জায়গায় নামতে পারেনি। বিশ্ব তাই আজ ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কুর্নিশ করছে। তিনি বলেন, এই সাফল্য সমগ্র মানবজাতির। এই অভিযান অনেক নতুন পথের সন্ধান দেবে। পৃথিবীর সমস্যা সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে।
চন্দ্রাভিযানের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানান। বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা একটা গোটা প্রজন্মকে জাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে নিজেদের সাফল্যের দাগ কেটেছেন।
চন্দ্রাভিযানের সাফল্য নিশ্চিতভাবেই শাসক দল বিজেপির রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চলেছে। হিন্দুত্ববাদী চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে তাই করা হয়েছে নামকরণ। হিন্দু দেবতা ‘শিব’কে বাছা হয়েছে যেহেতু শিবের জটায় লেপ্টে থাকে চাঁদ। ‘শক্তি’ শব্দ বাছার কারণ যে নারী শক্তিকে সম্মান জানানো, সে কথা মোদি নিজেই বলেছেন। চন্দ্রযান–২ যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, সেই স্থানের নামকরণ ‘তেরঙা পয়েন্ট’ করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে।
কয়েক বছর ধরে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মোদির আহ্বানে সারা দেশে পালিত হয় ‘হর ঘর তিরঙ্গা’। ওই দিন বাড়ি বাড়ি জাতীয় পতাকা তুলে তার ছবি একটা নির্দিষ্ট অ্যাপে পাঠাতে বলা হয়।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন