জীবাশ্ম জ্বালানি শেষ হোক
দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক কপ-২৮ সম্মেলনের সমাপনী দিনের এক দিন আগে সোমবার জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে দুর্বল একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশের তুমুল সমালোচনা হয়। এদিন বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে ভারতীয় এক কিশোরীর অভিনব প্রতিবাদ নিয়ে। ১২ বছরের এ কিশোরী, জলবায়ু কর্মী লিসিপ্রিয়া কাংগুজাম মাথার ওপরে একটি ব্যানার ধরে আচমকা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ব্যানারে লেখা ছিল : ‘শেষ হোক জীবাশ্ম জ্বালানি। রক্ষা পাক আমাদের পৃথিবী, আমাদের ভবিষ্যৎ।
এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় অর্জন জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠন চূড়ান্ত হওয়া। তারপরও সম্মেলনে ভারতীয় এ কিশোরীর নতুন করে প্রতিবাদের ভাষা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দর্শকশ্রোতাদের করতালির মধ্যে পরে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
কপ-২৮-এর মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত মজিদ আল সুয়াইদি কিশোরী লিসিপ্রিয়ার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কপ-২৮ সম্মেলনে অল্পবয়সিদের এমন উদ্যমের প্রশংসা করেন। লিসিপ্রিয়ার জন্য আরেক বার হাততালি দিতে দর্শকশ্রোতাদের অনুরোধও জানান তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এই জাতিসংঘ জলবায়ু আলোচনায় মানুষের বিক্ষোভের ওপর কড়াকড়ি আছে। সম্মেলনে নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক সংগঠিত গোষ্ঠী এমনকি অনেক রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক ইউনিয়নও। জলবায়ু পরিবর্তনের রাশ টেনে ধরতে জীবাশ্ম জ্বলানির ব্যবহার ক্রমশ কমিয়ে আনা নিয়ে গত শনিবারেই বিরোধে জড়ায় বিভিন্ন দেশ। কয়েকটি দেশ চাইছে, কপ-২৮-এর আলোচনায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করা বা না করা নিয়ে নয়, বরং জলবায়ু দূষণ কমিয়ে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। আর বরাবরের মতোই এবারও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের বিরোধিতা করছে জ্বালানি তেল উত্পাদনকারী দেশগুলো।
সোমবার সম্মেলনের দেশগুলো চূড়ান্ত চুক্তির একটি নতুন খসড়ায় উপনীত হয়েছে। কিন্তু খসড়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির পর্যায়ক্রমে অবসান ঘটানোর বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি; যেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা বহু উন্নয়নশীল দেশের মূল দাবি।
এই দেশগুলো নতুন খসড়া নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু করেছে। আগের খসড়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধের প্রতিশ্রুতি ছিল। পরেরটিতে তা না থাকায় দেশগুলো হতাশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চুক্তির খসড়া বিষয়বস্তু আরো বলিষ্ঠ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপ দেশও বলছে, নতুন খসড়া পুরোপুরি অপর্যাপ্ত এবং জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে খুবই দুর্বল কথা বলা হয়েছে এতে। জলবায়ু-সংকটের জন্য মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি দায়ী। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ শেষ করতে এর আগেই দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ প্রধান। জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে চুক্তির নতুন খসড়ায় অংশ নিতে যাওয়া সবগুলো দেশকেই একমত হতে হবে, নতুবা চুক্তি ভেঙে পড়বে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন