'গাজায় যুদ্ধ শেষ হলেও নিহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়াতে পারে'
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
ইসরায়েলি বাহিনী যদি নির্বিচার বোমা হামলা বন্ধ করেও দেয়, এরপরও ফিলিস্তিনের গাজায় প্রাণহানি বাড়তির দিকে থাকতে পারে, এমনটা আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। বিশ্বখ্যাত জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি চিঠিতে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। গবেষকদের আশঙ্কা, গাজায় নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৮৬ হাজারে।
টানা ৯ মাসের যুদ্ধ গাজাবাসীর জনস্বাস্থ্যে কেমন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, সেই ধারণা উঠে এসেছে ওই চিঠিতে। সেই সঙ্গে গাজায় নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণের গুরুত্ব এবং সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসুবিধার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৯ মাস ধরা চলা ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গাজা উপত্যকায় ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
নিহত মানুষের এই সংখ্যার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনকি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাটির যথার্থতা নিরূপণ করা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গবেষকদের ধারণা, নিহত মানুষের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তা সম্ভবত বেশ কম। কেননা, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার দশেক মানুষের মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের সংখ্যা নিহত মানুষের তালিকায় ধরা হয়নি।
সরাসরি যুদ্ধে যতজন নিহত হয়েছেন, তার চেয়ে পরোক্ষ কারণে বেশি মানুষের প্রাণ গেছে; এমন উদাহরণও আছে। পূর্ব তিমুরে ১৯৭৪ ও ১৯৯৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার আক্রমণের সময় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ নিহত কিংবা নিখোঁজ হন। বিশ্লেষকেরা পূর্ব তিমুরের এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতি হত্যা’ বলে দাবি করেন।
কিন্তু একই সময়ে পূর্ব তিমুরে পরোক্ষভাবে প্রাণ হারান প্রায় ৮৪ হাজার মানুষ। অর্থাৎ সরাসরি যুদ্ধে নিহত হওয়া প্রতি একজনের বিপরীতে পরোক্ষ কারণে চারজন মানুষের প্রাণ যায়।
গাজা নিয়ে লেখা চিঠির দুজন সহ–লেখক সেলিম ইউসুফ ও রাশা খতিবের সঙ্গে কথা বলেছেন গার্ডিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যবিষয়ক সম্পাদক মোনা চালাবি।
সেলিম ইউসুফ বলেন, যুদ্ধের শুরুর দিকে তিনি ভেবেছিলেন, গাজায় সরাসরি যুদ্ধে নিহত হওয়া প্রতি একজনের বিপরীতে পরোক্ষ কারণে চারজন মানুষ মারা যেতে পারেন। তবে এখন তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই অনুপাত আরও বেশি হতে পারে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলকে এড়িয়ে বহির্বিশ্বে যাওয়ার একমাত্র পথ রাফা সীমান্ত ক্রসিং। মিসরের সঙ্গে এই সীমান্ত। গাজার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ কার্যত বিধিনিষেধের আওতায় থাকা রাফায় জড়ো হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর পর রাফায় মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকায় পুরো গাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন।
এর ফলে গাজায় মানুষের মধ্যে মেনিনজাইটিস, খোসপাচড়া, চুলকানি, জলবসন্তের মতো রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। গত মে মাসে রাফায় হামলা জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর ফলে গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ নতুন করে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে রাশা খতিব বলেন, গাজায় পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যান্য যেকোনো যুদ্ধ ও সংঘাতের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে আর যাঁরা বেঁচে যাবেন, তাঁদের জন্য মানসিক ও শারীরিক পুনরুদ্ধার এবং অবকাঠামোগত পুনর্নির্মাণ, সবই কঠিন হয়ে যেতে পারে।
শেয়ার করুন