নগদে ভাড়া নেওয়ার সুযোগ দিল উবার, চালকদের উদ্বেগ বাড়ছে নিরাপত্তা নিয়ে
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহত ১৫০ জনের বেশি, আহত ৭০০-এর অধিক
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শুক্রবার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অসংখ্য ভবন, সেতু ও একটি বিহার। মিয়ানমারে এ পর্যন্ত ১৪৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে দুটি প্রধান শহরে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং একটি বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ভূমিকম্পে তার দেশে ১৪৪ জন নিহত ও ৭৩০ জন আহত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও ধ্বংসযজ্ঞ
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে আঘাত হানে। এর পরপরই ৬.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।
মান্দালয়ে ভূমিকম্পের ফলে বহু ভবন ধসে পড়ে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল একটি বিশাল বিহার। রাজধানী নেপিডোতে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হতাহতদের বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরকার জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে রক্তের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত মিয়ানমার সরকার বিদেশি সাহায্য নিতে অনীহা প্রকাশ করে, তবে এই দুর্যোগের পর তারা সহায়তা গ্রহণে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানিয়েছে, পাঁচটি শহর ও গ্রামে ভবন ধসে পড়েছে এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে একটি মান্দালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে ছিল। একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সাইনবোর্ড ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে, যা রাজধানীর প্রধান ১,০০০ শয্যার হাসপাতালের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া, মান্দালয়ের বিখ্যাত মা সোয়ে ইয়ানে বিহারটি মুহূর্তের মধ্যে মাটির নিচে ধসে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ন্যাসীরা নিজস্ব মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন, ঠিক তখনই বিহারটি ধসে যায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়েছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড জানিয়েছে, মান্দালয়ে একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডে বিপর্যয়
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ৩৩ তলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে, যার ফলে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, ১৬ জন আহত এবং ১০১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে ধুলোর কুয়াশা উঠছে, আর আতঙ্কিত মানুষজন ছুটে পালাচ্ছেন। ব্যাংককের বিখ্যাত চাতুচাক মার্কেটের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুয়াংরুংরুয়াংকিত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “এটি এক বিরাট ট্র্যাজেডি। তবে আমরা আশা করছি, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো জীবিত কেউ থাকতে পারে।”
এ ভূমিকম্পের ফলে ব্যাংককের এলিভেটেড রেল সিস্টেম ও মেট্রোরেল পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
চীনে অনুভূত ভূমিকম্প, আহত অনেকে
মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত চীনের ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রুইলি শহরে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু আহতের খবর পাওয়া গেছে।
চীনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রুইলি শহরের রাস্তায় ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে এবং আহতদের স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
মিয়ানমার একটি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত, তবে সাধারণত বড় ধরনের ভূমিকম্পগুলো জনবহুল শহরগুলোর পরিবর্তে দূরবর্তী এলাকায় আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা আশঙ্কা করছে, এ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট, গৃহযুদ্ধ ও মানবিক সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং প্রায় ২ কোটি মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ দেশটির অনেক এলাকা সংঘাতের কারণে প্রবেশের অনুপযোগী বা বিপজ্জনক।
সংক্ষিপ্ত তথ্য:
•ভূমিকম্পের মাত্রা: ৭.৭ (মূল ভূমিকম্প), ৬.৪ (আফটারশক)
•মৃতের সংখ্যা: মিয়ানমার – ১৪৪+, থাইল্যান্ড – ১০+
•আহত: ৭০০+
•নিখোঁজ: থাইল্যান্ডে ১০১ জন
•প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা: মান্দালয়, নেপিডো, ব্যাংকক
•জাতিসংঘের সহায়তা: ৫ মিলিয়ন ডলার
•সম্ভাব্য মোট প্রাণহানি: ১,০০০+ (USGS অনুমান)
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন, ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন