এশিয়ান কাপ ফুটসাল বাছাই: জি গ্রুপে ইরানের বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ
ইসরায়েলের হুমকির মুখে খামেনি: পরিবারসহ বাঙ্কারে আশ্রয়ের খবর
প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই জনসমক্ষে অনুপস্থিত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। কোনো ভাষণ বা বার্তাও দেননি। অথচ দেশ তখন গভীর সংকটে। এরমধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিন যুদ্ধের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি করেছে ইরান।
গতকাল বুধবার এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের ব্যুরো চিফ ফারনাজ ফসিহি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খামেনির অনুপস্থিতির সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল এক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়, যা কার্যকর হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে।
এই পুরো সময়ে খামেনি ছিলেন অনুপস্থিত। সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, তিনি এক সুরক্ষিত বাংকারে আছেন এবং হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন।
সর্বোচ্চ নেতার এমন অনুপস্থিতি শুধু জনসাধারণ নয়, রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।
‘খানমান’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, ‘খামেনির কয়েক দিনের এ অনুপস্থিতি আমাদের, যাঁরা তাঁকে ভালোবাসি, গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।’ দুই সপ্তাহ আগেও যে আশঙ্কা অকল্পনীয় ছিল, তা এখন স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যদি তিনি (খামেনি) মারা যান, তাঁর জানাজার মিছিল হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও গৌরবময়।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে প্রতিটি বড় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন খামেনি। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মতো সিদ্ধান্তে তাঁর অনুমোদন অত্যাবশ্যক।
যাহোক, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে এবং কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় দ্রুত সম্পাদিত হয়। তবে ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তারা গত কয়েক দিনে তাঁরা খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কি না বা কোনোভাবে যোগাযোগ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলেননি।
এ নীরবতা জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জল্পনার—সাম্প্রতিক বড় সিদ্ধান্তগুলোতে খামেনির ভূমিকা কতটুকু? তাঁর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে কি? তিনি এখনো দেশ পরিচালনায় সক্রিয়? তিনি অসুস্থ, আহত কিংবা আদৌ বেঁচে আছেন কি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজা সাফাভি আয়াতুল্লাহ খামেনির শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা ও রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের জেনারেল ইয়াহিয়া সাফাভির ছেলে হামজা জানান, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বাস করে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যাচেষ্টা চালাতে পারে। তাই তাঁর নিরাপত্তায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রায় বন্ধ রয়েছে।
তবে সাফাভির ধারণা, খামেনি এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দূর থেকে অনুমোদন দিচ্ছেন।
তবু খামেনির অনেক সমর্থক এখনো সামাজিকমাধ্যমে বলছেন, তারা সর্বোচ্চ নেতাকে না দেখা বা তাঁর কথা না শোনা পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের আনন্দ অনুভব করতে পারছেন না।
যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, ‘খামেনির অনুপস্থিতি উল্লেখযোগ্য এক ঘটনা এবং এটি এই ইঙ্গিত দেয়, ইরানি নেতৃত্ব এখন অতিমাত্রায় সতর্ক ও নিরাপত্তাকেন্দ্রিক ভাবনায় চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আসছে আশুরার (১০ মহররম) আগে যদি খামেনিকে দেখা না যায়, তাহলে তা হবে খারাপ সংকেত। তাকে অবশ্যই জনসমক্ষে আসতে হবে।’
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন