আপডেট :

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন পরিকল্পনা

        গাজা যুদ্ধ ও দখল পরিকল্পনা বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলে তীব্র বিক্ষোভ

        অভিনেত্রী শমী কায়সারকে হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন দিল হাইকোর্ট

        জোতার স্মরণে কমিউনিটি শিল্ড: শ্রদ্ধার মধ্যে উঠে এল অসম্মানের অভিযোগ

        স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: নির্বাচনে ৮০,০০০+ সেনা সদস্য নিয়োজিত

        গোপন প্রেমিক ও প্রেমের কথা স্বীকার করলেন জয়া আহসান

        আট উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়,কী হবে এখন

        গাজায় তীব্র হামলার মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি চান নেতানিয়াহু

        ভাঙা ভালভের কারণে সান ফার্নান্ডো ভ্যালির প্রায় ৯,২০০ বাসিন্দা পানিবিহীন

        $২১৬ হাজার মূল্যের বিরল চীনা পাণ্ডুলিপি UCLA থেকে চুরি

        উবারের বাড়ছে যৌন নির্যাতন: প্রতি ৮ মিনিটে ১ অভিযোগ

        চীনে চিপ বিক্রি থেকে ১৫% রাজস্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে এনভিডিয়া ও এএমডি

        ট্রাম্পের দাবি – গৃহহীনদের অবিলম্বে ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়তে হবে

        পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি: সরকার প্রত্যাহার করল সম্মাননা

        ইনকগনিটো মোডের সীমাবদ্ধতা: যা আপনার জানা দরকার

        টাস্টিনে রুমমেটকে গুলি করে হত্যা, অভিযুক্ত অফ-ডিউটি শেরিফের ডেপুটি

        বাংলাদেশের আকাশে উল্কাবৃষ্টির মুগ্ধতা, মিস করবেন না!

        দরিদ্র বাসিন্দাদের ইবিটি কার্ড স্কিমিং করে লাখো ডলার চুরি, রোমানিয়ান নাগরিকের ১০ বছরের কারাদণ্ড

        পৃথিবীর চেয়েও প্রাচীন উল্কাপিণ্ড মার্কিন বাড়িতে আছড়ে পড়েছে

        জাতিসংঘে নতুন উপপ্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত সাবেক ফক্স নিউজ উপস্থাপক ট্যামি ব্রুস

গাজা যুদ্ধ ও দখল পরিকল্পনা বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলে তীব্র বিক্ষোভ

গাজা যুদ্ধ ও দখল পরিকল্পনা বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলে তীব্র বিক্ষোভ

ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ ও গাজা শহর দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সারা দেশে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। গত শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা যুদ্ধ শেষ করার জন্য পাঁচ দফা নীতি অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে গাজায় আটক ৫০ জিম্মির পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ—নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা জিম্মিদের জীবন বিপন্ন করবে। তারা সরকারকে দ্রুত জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সমালোচনার জবাবে বলেছেন, এই পরিকল্পনা “জিম্মিদের মুক্তিতে সহায়ক হবে।” তবে জিম্মি পরিবারের একটি সংগঠন এক্সে পোস্ট দিয়ে বলেছে, “যুদ্ধ বিস্তৃত করা মানে জিম্মি ও সেনাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানো—ইসরায়েলের জনগণ এটি মেনে নেবে না।”

বিক্ষোভে সৈন্যদের সেবা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান

শনিবার জেরুজালেমে এক বিক্ষোভে শাখা নামে এক অংশগ্রহণকারী বিবিসিকে বলেন, “আমরা চাই যুদ্ধ থামুক, কারণ আমাদের জিম্মিরা সেখানে মারা যাচ্ছে। তাদের বাঁচাতে যা যা দরকার করতে হয়, করতে হবে—যদি যুদ্ধ থামাতে হয়, থামানো হবে।”

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাবেক সেনা ম্যাক্স ক্রেস বলেন, যুদ্ধের শুরুতে তিনি ফ্রন্টলাইনে ছিলেন, তবে এখন তিনি সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। “আমরা ৩৫০ জনেরও বেশি সৈন্য আছি যারা যুদ্ধ চলাকালে সেবা দিয়েছি, কিন্তু এখন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক যুদ্ধে অংশ নেব না—যা জিম্মিদের ও গাজার নিরীহ মানুষদের ঝুঁকিতে ফেলছে।”

টাইমস অব ইসরায়েল জানান, তেল আবিবে ইসরায়েলি সেনা সদরদপ্তরের কাছে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে জিম্মি ও নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যরা সৈন্যদের এই সম্প্রসারিত সামরিক অভিযানে অংশ না নিতে আহ্বান জানান।

ধর্মঘটের আহ্বান, বিরোধী দলের সমর্থন

এক জিম্মির মা সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধান বিরোধী নেতা ইয়ায়ির লাপিদ এই আহ্বানকে “ন্যায্য ও যৌক্তিক” বলেছেন। 

তিনি এই ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক্সে পোস্ট করেছেন। তিনি জানান, 'অর্থনীতি স্থবির করে দেওয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তার পেছনে যুক্তিপূর্ণ ও মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা (আয়োজকদের) পাশে থাকব।'

বামপন্থি ডেমোক্র্যাটস পার্টির প্রধান ও আইডিএফের সাবেক উপ-প্রধান ইয়াইর গোলান ধর্মঘটের পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি 'ইসরায়েলের সব নাগরিককে' এতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং যুক্তি দেন, 'গাজায় (জিম্মি থাকা) আমাদের ভাই-বোনদের' উপেক্ষা করে দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো করে যাওয়া সম্ভব নয়।

গত শনিবার রাতে তেল আবিবের আয়ালন হাইওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং রাস্তার ওপর আগুন লাগানোর সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

সেনাপ্রধানের সতর্কতা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, গাজার পূর্ণ দখল নেওয়া “ফাঁদে পা দেওয়ার” সমান এবং এতে জীবিত জিম্মিরা ঝুঁকিতে পড়বেন। জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইসরায়েলি নাগরিক হামাসের সঙ্গে চুক্তি করে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধের অবসান চান।

নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে ফক্স নিউজকে বলেন, ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকা দখল করবে এবং পরে “আরব বাহিনীর” হাতে হস্তান্তর করবে। শুক্রবার এক্সে পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমরা গাজা দখল করছি না—আমরা হামাসকে সরিয়ে গাজাকে মুক্ত করছি। এতে জিম্মিদের মুক্তি ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।”

পাঁচ দফা পরিকল্পনা

নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদিত পাঁচ দফা পরিকল্পনা হলো— ১. হামাসকে নিরস্ত্র করা, ২. সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, ৩. গাজা উপত্যকা থেকে সামরিক অস্ত্র অপসারণ, ৪. নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, ৫. হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ছাড়া বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন।

 

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সংকট

জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন, গাজা শহরের পূর্ণ সামরিক দখল “প্যালেস্টাইনি বেসামরিক ও জিম্মিদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি” বয়ে আনবে। যুদ্ধের আগে এখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করতেন।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডাসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিন্দা করেছে। জার্মানি ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রবিবার এই পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করবে।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থা ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সাহায্য ও খাদ্য প্রবেশে আরও অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে পাঁচজন মারা গেছেন, যার মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত মৃত্যু ২১৭-এ দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০০ শিশু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৯ জন নিহত ও ৩৬৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ জন ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হন।

ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে গাজায় ৬১ হাজার ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায়, যখন ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন।

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত