রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন এবং বাংলাদেশের করনীয়
উপ-সম্পাদকীয়
বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে মায়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সরকারী ভাবে সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন। দুনিয়ার মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এগুলো নিয়ে নানা রকম সংবাদ প্রচার করছে। বাংলাদেশেও সংবাদ মাধ্যমের বড় ধরনের আগ্রহ এই ইস্যু নিয়ে। থাকাও উচিত।
মায়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনের ইতিহাস অনেক দিনের। সেদিকে নাই গেলাম। আজকে লিখছি, কেন রোহিঙ্গা নির্যাতন থামছে না ? কেন এর কোন সমাধান হচ্ছে না? কিভাবে সমাধান হতে পারে ?
সারা দুনিয়া জুড়ে চলছে যুদ্ধ আর যুদ্ধ। যে গুলোর অধিকাংশ মুসলিম দেশ গুলো জুড়ে। নানান অজুহাতে। কখনও পারমানবিক অস্ত্র মুক্ত করার লক্ষ্যে, কখনও মানব অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে,কখনও গণতন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যে ! কিন্তু একই সমস্যা অন্য জায়গায় থাকলেও সেখানে যুদ্ধবাজরা মনযোগ দেন না। মুসলিম বিশ্বে চুন থেকে পান খসলে পশ্চিমা বিশ্ব বন্দুক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে মানব অধিকার রক্ষার নামে। অথচ তাকিয়ে দেখুন বার্মার দিকে, যারা চরমভাবে সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম নির্যাতন করেই চলেছে। আর উন্নত বিশ্ব শুধু সংবাদ প্রচার করে এবং গোটা দুই সমালোচনা করেই ক্ষান্ত । কিন্তু কেন ?
আজ যদি মায়ানমার কোন মুসলিম প্রধান দেশ হতো, আর বৌদ্ধরা যদি নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদয় হতো , তাহলে পশ্চিমা বিশ্বের আচারন কেমন হত? আমার তো মনে হয় তখন মুসলিম বিদ্ধেষী শক্তি গুলো জাতিসংঘের সাইন বোর্ড সামনে নিয়ে মানবতা রক্ষার নামে আরও একটি মুসলিম দেশে যুদ্ধের খড়গ চালাতে দ্বিধা করত না।
কিন্তু না। আজ প্রেক্ষাপট অন্যরকম। মুসলমান নির্যাতিত , তাই দেখার কেউ নেই। মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালালে সেটা কি মানবতা বিরোধী নয় ? এখানে কি জাতিসংঘের ভূমিকা কি শুধু মুসলিম দেশ গুলোর বিরুদ্ধাচারন করা? জাতিসংঘ সকলের সংগঠন । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সমান। এখানে কোন পক্ষপাতিত্যের সুযোগ নেই।
এবার আসি বাংলাদেশ কি করতে পারে সে বিষয়ে। ২৭/১১/২০১৬ তারিখ বিবিসির খবরে শুনলাম, বার্মায় মুসলমানদের উপর অনৈতিক নির্যাতনের যে ভয়াবহ ও অমানবিক চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে নাকি বাংলাদেশে অবস্থানরত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাকি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে? আমার মনে হয় এটা ঠিক যে পাশে দেশের মানুষের কষ্ট আমাদের দেশের ধর্মপ্রান মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করে। দেশের সকল মানুষ সমান শিক্ষিত নন, সমান মনভাবের অধিকারী নন, সমান ধৈর্যের অধিকারীও নন। অনেকে এই ইস্যু নিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের উপর আঘাত আনতে পারে , এমন সম্ভাবনা অমুলক না। কারন এটা এখন অনেকটা আবেগের বিষয় হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল এসব কথা কেন উঠবে ? কেন রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন হবে মায়ানমারে? কেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বৌদ্ধরা ভয়ে কাতরাবে? মায়ানমারের মুসলিমরা সেদেশে তাদের অধিকার নিয়ে সম্মান নিয়ে নির্বিগ্নে জীবন যাপন করবে। বাংলাদেশের বৌদ্ধরাও তাদের সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে বাস করবে বাংলাদেশে। এখানে কেন সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো হবে? ইন্টারনেটের এ যুগে সারা বিশ্ব একটি ছিত গ্রাম । মানুষ এখন খুব সচেতন । অল্পতেই সব বোঝে। মায়ানমারে কেন গণহত্যা চলছে তা বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ট মুসলমানরা খুব ভাল করে বোঝে। খুব স্বাভাবিক কারনে অন্যদেশে তার মুসলিম ভাইদের প্রতি নির্যাতন করা সম্প্রদায়ের উপর ক্ষোভ জন্মাতে পারে। যা খুব সুখকর নয়।
বাংলাদেশ ।। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের দেশের মুসলমানরা ধর্ম ভীরু। কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলেছেন। তারপরও ইসলামী শিক্ষা না পাওয়া কিছু লোক তো থাকতে পারে যারা মায়ানমারের এই হেন মানবতা বিরোধী কাজের জেরে কু-মতলব না করে।
এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। আর বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বৌদ্ধ সম্প্রদায় কে। তাদের কে মুসলিম নিধনের বিপক্ষে সোচ্চার হতে হবে। মায়ানমার বৌদ্ধ প্রধান দেশ। বৌদ্ধরাই মুসলিমদের সহ্য করতে চায় না। নাগরিক হিসেবে মেনে নেয় না। চালাচ্ছে খুন, ধর্ষণ, আগুনে পোড়ানো। কিন্তু কেন? এর কোন যৌক্তিক কারন নেই। যে গুলো মায়ানমার বলে তা পুরাই মিথ্যা আর বানোয়াট বলেই মনে করে গোটা বিশ্বের মানুষ। বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হল, "জীব হত্যা মহা পাপ"। তাহলে এগুলো কি? রোহিঙ্গারা কি কোন জীব না। কেন তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হবে। এগুলো কি মানবতা বিরোধী অপরাধ নয়?
বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধদের কে রোহিঙ্গা ইস্যুতে উচ্চ স্বরে মায়ানমার সরকারের কাছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে জোর প্রতিবাদ করা উচিত। তাদের কে বোঝানো উচিত , তোমরা মায়ানমারে মুসলিম নিধন করলে আমরা বৌদ্ধরা বাংলাদেশে নির্ভয়ে থাকতে পারি না। পথে ঘাটে চলতে ভয় লাগে। এই বুঝি বৌদ্ধ বলে, রোহিঙ্গা হত্যাকারীর দল বলে পিটিয়ে না মারে। এখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উচিত সরকারী খরচে হলেও প্রতিনিধি দল নিয়ে মায়ানমার যাওয়া। এবং তাদের সরকার ও সেনাবাহিনীর সাথে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আলোচনা করা। নির্যাতনের প্রতিবাদ করা। নির্যাতন বন্ধ করতে অনুরোধ করা। যাতে তারা বিষয় টা উপলব্ধি করে।
যদি এমন কাজ বৌদ্ধরা করে তবে, দুই দিকেই লাভ। এক, মায়ানমার সচেতন হতে পারে এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে বের হয়ে আসতে পারে। দুই, বাংলাদেশের মানুষ যারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর নাখোশ, তারা সন্তুষ্ট হবেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে।
লেখকঃ এস এস ফেরদৌস
খন্ডকালীন সাংবাদিক ও আউটসোর্সিং লেখক
ইমেইলঃ sabusenew@gmail.com
শেয়ার করুন