দুই শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র
এলএ টাইমসে বাংলাদেশের সার্ফার কিশোরীরা
সুমুদ্রের সঙ্গে তাদের সখ্য। সার্ফিং বোর্ড নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে। দরিদ্রতা আর জীবিকা নির্বাহে পরিশ্রমের ক্লেশ ভুলে মেতে ওঠে সার্ফিংয়ে। ওরা বাংলাদেশী একদল উচ্ছল কিশোরী। সার্ফিংয়ের প্রতি তাদের অদম্য ভালোবাসার গল্প উঠে এসেছে টাইম ম্যাগাজিনের সচিত্র প্রতিবেদনে।
বলা হয়েছে, সার্ফিং তাদের উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। কক্সবাজারের জোহানারা, আয়শা, সুমি, রিফা, সুমা, মেহরাজ, মাইশা আর নার্গিস। ওরা ৮ বন্ধু। বয়স ১০ থেকে ১৩’র মধ্যে। দরিদ্র পরিবারে তাদের জন্ম। প্রতিদিন ভোরে উঠে কাজে যেতে হয় তাদের সবাইকে। বঙ্গোপসাগরের সৈকতে তারা হালকা নাস্তা আর হাতে তৈরি অলঙ্কার বিক্রি করে। রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করে।
পরিবারকে সাহায্য করতে যতটা পারে ততটা উপার্জনের চেষ্টা করে। ৮ বন্ধুর এই দলে সুমি (১১) একমাত্র মেয়ে যে স্কুলে যায়। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে। কিন্তু তার সে সপ্ন কতদূর সত্যি হবে তা নিশ্চিত নয়। বাস্তবতার অবস্থান তার বিরুদ্ধে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী ও মেয়েদের অবস্থানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করলেও দেশটির সমাজ বহুলাংশে পুরুষশাসিত। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ২৯ শতাংশ বাংলাদেশী মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগে। ১৮ হতে বিয়ে হয়েছে ৬৫ শতাংশের।
বড় হতে হতে সুমি ও তার বন্ধুরাও একইরম চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পিতা-মাতা তাদের গৃহকর্মীর কাজ নিতে বলে। মার্কিন ফটোগ্রাফার অ্যালিসন জয়েস বলেন, কক্সবাজারের এ মেয়েদের অনেক কিছুর বিরুদ্ধে লড়তে হয়। টাইমের প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত ছবিগুলো অ্যালিসনের তোলা।
অ্যালিসন প্রথম কক্সবাজার সফর করেছিলেন ২০১৩ সালে। সেবারই প্রথম সুমি ও তার বন্ধুদের বিষয়ে জেনেছিলেন অ্যালিসন। তিনি জানতে পারেন কিভাবে এই মেয়েরা তাদের দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তাদের আত্মবিশ্বাস। তাদের ওপর থাকা নানা সামাজিক আর পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও শিক্ষা গ্রহণে তাদের আগ্রহের কমতি নেই।
২৫ বছর বয়সী লাইফগার্ড রাশেদ আলমের কাছ থেকে গত বছর থেকে সার্ফিং শেখা শুরু করে মেয়েরা। রাশেদের একটি সার্ফ ক্লাব রয়েছে কক্সবাজারে। কিছুদিন পর থেকে রাশেদের মার্কিন অভিবাসী স্ত্রী ভেনেসা রুড ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেয়া শুরু করে মেয়েদের। এ বছরের শুরুর দিকে কক্সবাজারে একাধিক সফরে এসব ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন অ্যালিসন।
মেয়েদের ভবিষ্যতে লাইফগার্ড হওয়ার সুযোগ দিতে চান রাশেদ। এখন তারা প্রতি বৃহস্পতিবার জুনিয়র লাইফগার্ড প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। অ্যালিসন বলেন, রাশেদ ও সার্ফ ক্লাবের অন্যান্য ছেলেরা মেয়েদেরকে সম্মান দেখায়। এটা মেয়েদেরকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। সবথেকে বড় কথা হলো, সার্ফ ক্লাবে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সুমি ও তার বন্ধুরা ছেলেবেলায় কর্মজীবনে জড়িয়ে পড়ার চাপের মধ্যে নিজেদের জন্য নতুন একটি স্থান পেয়েছে। অ্যালিসনের ভাষায়, সার্ফবোর্ড শুধু এই মেয়েদের আনন্দের উৎস নয়। এটা তাদেরকে একটু বেশি কিছু স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
ছবিঃ LATimes
শেয়ার করুন