ক্ল্যাশের জের, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মিটফোর্ড হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা
গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গুলিতে ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই ঘটনা গত তিন দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ঘটলো, যেখানে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিরা প্রাণ হারালেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) পরিচালিত একটি বিতরণ কেন্দ্রের কাছে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি সংস্থা। GHF সম্প্রতি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পরিবর্তে গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছে। তবে এই নতুন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা উঠেছে, কারণ এটি মানবিক সহায়তা প্রদানে বিলম্ব ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, তারা "সন্দেহভাজনদের" দিকে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে যারা নির্ধারিত পথ থেকে সরে গিয়ে সেনাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ত্রাণ সংগ্রহের জন্য জড়ো হওয়া নিরস্ত্র মানুষদের ওপর হঠাৎ গুলি চালানো হয়, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (ICRC) জানিয়েছে, তাদের রাফাহ ফিল্ড হাসপাতালে ১৮৪ জন আহত ব্যক্তি নিয়ে আসা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৯ জন আগমনের সময়ই মৃত ছিলেন এবং আরও ৮ জন পরে মারা যান। নাসের হাসপাতালের পরিচালক জানান, অধিকাংশ আহত ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং তারা সবাই ত্রাণ সংগ্রহের জন্য যাচ্ছিলেন।
ঘটনার পর GHF তাদের বিতরণ কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করেছে, যাতে তারা কেন্দ্রগুলো পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে পারে। তবে এই সাময়িক বন্ধের ফলে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি আরও বিপদের মুখে পড়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্ক এই ঘটনাকে "অগ্রহণযোগ্য" বলে অভিহিত করেছেন এবং একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "মানুষের জীবন রক্ষার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।"
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। GHF-এর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ এটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ায় নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং খাদ্য ও ওষুধের সংকট চরমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরপেক্ষ মানবিক সহায়তা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন