দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নিখোঁজ ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে খুঁজছে পরিবার
এই কারণেই কমছে বিদেশি পর্যটক
পর্যটন দুই ধরনের–বিদেশি (ইন বাউন্ড) ও বিদেশগামী (আউট বাউন্ড)। এর বাইরে আরেক ধরনের পর্যটন হচ্ছে অভ্যন্তরীণ (ডোমেস্টিক বা দেশের মধ্যে ঘোরাঘুরি)। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশগামী পর্যটক বিপুল। সেই তুলনায় বিদেশি পর্যটক অপ্রতুল। অথচ, এ খাত থেকে আসে বৈদেশিক মুদ্রা।
ইন বাউন্ড পর্যটনের ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হচ্ছে–এটি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। কারণ, সরকার সাধারণত অভ্যন্তরীণ পর্যটন নিয়ে কথা বলে। বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করার দিকে মনোযোগ দেয় না। দ্বিতীয়ত, ইন বাউন্ড পর্যটনের ক্ষেত্রে আমাদের যথাযথ ব্র্যান্ডিং নেই। অ্যামেজিং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ট্রুলি এশিয়া, ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার মতো স্লোগান আমাদের নেই। যেটি আছে, সেটি কার্যকর নয়। তৃতীয়ত, বিদেশি পর্যটক টানার শর্ত হলো বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় অংশ নেওয়া। আমাদের দেশের ইন বাউন্ড ট্যুর অপারেটরদের পক্ষে সেসব মেলায় অংশ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এসব মেলায় অংশ নেবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। ফলে আমাদের পক্ষে বিদেশি পর্যটক টানা কঠিন হয়ে উঠছে। চতুর্থ, বিভিন্ন দেশে পর্যটনের রোড শোতে অংশ নিতে হয়। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।
এর বাইরে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশে গাইডের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি জানেন না, এমন অতিথি এলে আমরা গাইডের সমস্যায় পড়ি। জার্মানি, ফ্রান্স বা কোনো ইউরোপীয় দেশ থেকে কেউ এলে দোভাষী পাওয়া যায়। গাইড খুঁজে পাওয়া যায় না।
অনেকে বিদেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মনে করেন। আমি বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখি। নিরাপত্তার কথা ভেবে পর্যটকরা ঘরে বসে থাকেন না। তারা অ্যাডভেঞ্চারাস (দুঃসাহসী)। নেপালে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। সেখানে এরই মধ্যে পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কা অভ্যুত্থানের পর যে এত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল, এর পেছনে পর্যটন খাতের বড় অবদান রয়েছে।
আমার কাছে মনে হয়, এটি নির্ভর করে দেশের ভাবমূর্তির ওপর। বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের নেতিবাচক উপস্থিতি। নিজেদের যথাযথভাবে উপস্থাপনও করতে পারছি না। কীভাবে দেখতে চাই, কীভাবে দেখাতে চাই–এই উপস্থাপন কৌশলে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। রাজনৈতিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হয়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাসিখুশি মানুষ এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা বলা হয় না। এই ঢোলটা কেবল দেশের মধ্যে পেটালে হবে না, বিদেশে গিয়ে পেটাতে হবে। ইন বাউন্ড ট্যুর অপারেটরদের আয় করা বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে সরকারকে প্রণোদনা দিতে হবে। জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বা এ ধরনের স্বীকৃতি দিতে হবে।
জিডিপির দিকে তাকালে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র (২৩ শতাংশ) এবং চীনের (২২ শতাংশ) পর বিশ্ব পর্যটনের (১০.৯ শতাংশ) অবস্থান।
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের মেলার উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটন স্টেকহোল্ডারদের এক ছাতার নিচে নিয়ে বসা। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং একে অন্যের সঙ্গে নতুন পর্যটন চুক্তি সম্পন্ন করা। এ মেলার আবার দুই ধরনের চরিত্র–বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) আর বিটুসি (বিজনেস টু কনজিউমার)। বিটুবিতে স্টেকহোল্ডাররা (হোটেল, ট্যুর অপারেটর বা ট্রাভেল এজেন্ট) বিক্রেতা বা ক্রেতা হয়ে একে অন্যের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা ও চুক্তি করেন। এ মেলায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। বিটুসি মেলায় স্টেকহোল্ডারদের পাশাপাশি পর্যটকদের প্রবেশাধিকার থাকে। সাধারণত পৃথিবীর প্রায় সব পর্যটন মেলায় প্রথম দেড় বা দু’দিন বিটুবি এবং শেষের দেড় বা একদিন বিটুসি পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। বিশ্বের প্রায় সব পর্যটন মেলা সাধারণত তিন দিনের হয়ে থাকে।
সাধারণত জাতীয় পর্যটন সংস্থা, ইন বাউন্ড ট্যুর অপারেটর এবং হোটেলগুলো বিক্রেতার ভূমিকায় থাকে। তারা উচ্চমূল্যে অর্থের বিনিময়ে ইভেন্ট আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্টল ভাড়া নেয়। তারা তাদের দেশের পর্যটকদের অন্য দেশে বা স্থানে পাঠাতে বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করতে আসে। সম্যক ধারণা পেতে অনেক স্টেকহোল্ডার আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় ঢুঁ মারেন।
অন্যদিকে বিটুসি পর্যটন মেলায় আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি এবং পর্যটকরা আগ্রহের স্থান ও সেবা সম্পর্কে তথ্য জানতে আসেন। এর পাশাপাশি বিক্রেতারা তাদের দেশের সংস্কৃতি (সাধারণত নাচ ও গান) এবং আকর্ষণীয় খাদ্য ও পানীয় প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশে ২০০২ সাল থেকে পর্যটন মেলা হচ্ছে। এটি বিভিন্ন দেশে করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। না হলে, পর্যটনের বিশ্ব মানচিত্র থেকে বাংলাদেশ উধাও হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতে দেশের ইন বাউন্ড ট্যুর অপারেটর এবং আন্তর্জাতিকমানের হোটেলগুলো বেকায়দায় পড়েছে। আন্তর্জাতিকমানের হোটেলের অধিকাংশ গ্রহীতা বিদেশি। সার্বিকভাবে দেশের ইন বাউন্ড পর্যটন হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি খাত হুমকির মুখে পড়েছে। এই শূন্যতা পূরণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পেরও একটা সম্ভাবনা আছে। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো আমাদের পর্যটনশিল্পের জন্য শুভ নয়।
দেশের ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটররা মৃতপ্রায়। সরকার কি দেশের বিকাশমান পর্যটনশিল্প নিয়ে আরেকবার ভাববে? বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে? বিশ্ব পর্যটন দিবসে এই প্রশ্নটাই রেখে গেলাম।
লেখক: প্রধান নির্বাহী, জার্নিপ্লাস
ই-মেইল: taufiq@journeyplus.com
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
নিউজ ডেক্স
শেয়ার করুন