দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নিখোঁজ ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে খুঁজছে পরিবার
মোগল স্থাপত্যের অনন্য ধ্রুপদী নিদর্শন: প্রবাজপুর শাহি মসজিদ
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মোগল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক ‘প্রবাজপুর শাহি মসজিদ’। এটি মুসলিম স্থাপত্যের একটি অনুপম নিদর্শন। মসজিদটি দেখা ও নামাজ আদায়ের জন্য দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটক এখনো সেখানে ভিড় করেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মোগল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহি জামে মসজিদ একটি প্রাচীন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা যা ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ১১০৪ হিজরি সনের ১৯ রমজান মোতাবেক ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে তৎকালীন ধুলিহর পরগনায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রবাজপুর শাহি জামে মসজিদ। এটি মূলত: সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে নির্মিত হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ তার সেনাবাহিনীর নামাজের জন্য যমুনা নদীর তীরে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বিধায় সুবেদার পারভেজ খাঁর নামানুসারে ঐ গ্রামের নাম হয়েছে প্রবাজপুর এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয় প্রবাজপুর শাহি মসজিদ। মোগল সুলতানী আমল শেষে দীর্ঘদিন যথাযথ পরিচর্যা না থাকায় মসজিদটি অনেকটা পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে স্থানীয় মুকুন্দপুর গ্রামের আলহাজ সোহরাব আলী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে মসিজদটি নামাজের জন্য উপযোগী করেন।
দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির বহির্বিভাগের দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৯ ফুট ৮ ইঞ্চি। মসজিদটির অভ্যন্তরে ২১ ফুট ৬ ইঞ্চির বর্গাকৃতির একটি নামাজের জায়গা রয়েছে। মসজিদের দেওয়ালগুলো ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট পুরু। আর মসজিদের প্রধান দরজাটি ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি প্রশস্ত। মসজিদটিতে ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি বারান্দা ছিল যা এখন আর নেই।
মসজিদটিতে মোট ১০টি দরজা থাকলেও বর্তমানে দরজার নিচের অংশে পাতলা প্রাচীর নির্মাণ করে জানালার আকৃতি করা হয়েছে। তিনটি অলংকৃত মেহরাবও রয়েছে। চার গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী হিসেবে এখনো সবার নজর কাড়ে।
ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে মসজিদটি ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদটি সম্প্রতি কিছু সংস্কার হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আরও সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে ঐতিহাসিক শাহি মসজিদটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহল।
স্থানীয় কয়েকজন মুসল্লি জানান, দীর্ঘ ৫০০ বছর পূর্বে মোগল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহি মসজিদে স্থানীয় মুসল্লিবৃন্দ ছাড়াও বহু দূরদূরান্ত থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীবৃন্দ এখানে নিয়মিত ওয়াক্তিয় নামাজ এবং জুমার নামাজ আদায় করেন। প্রাচীন এই মসজিদের অবকাঠামো দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় মুসল্লিবৃন্দ আক্ষেপ করে বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি নিজেদের দায়িত্ব নেওয়ার ফলে মসজিদের ভগ্নদশার চিত্র দেখতে পেলেও সরকারি বিধি বিধানের কারণে আমরা কোনো সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করতে পারি না।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, প্রবাজপুর শাহি মসজিদটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। সেটি সংস্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তহবিল পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওখানে এবং সাতক্ষীরার বিভিন্ন প্রত্ন নিদর্শনগুলো সংস্কার করা হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
নিউজ ডেক্স
শেয়ার করুন