আপডেট :

        ব্যাংকের ভেতরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, করছিলেন বমি

        কোচ হতে চান মাহমুদ উল্লাহ-মুশফিক, জানান আমিনুল

        রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে সোমবার

        লস এঞ্জেলেসে গোপন নাইটক্লাবে অভিযান, ৩৬ জন চীনা ও তাইওয়ানি নাগরিক আটক

        ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ফাইনালে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটের জয়

        বাবা-মা হলেন তারকাজুটি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পিয়া চক্রবর্তী

        চার বছর ধরে মায়ের ভুল কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, পরিবারের মামলা

        নর্থ হলিউড মেট্রো স্টেশনের বাইরে ছুরিকাঘাত ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ৩ জন হাসপাতালে

        ব্যাল্ডউইন পার্কে বন্দুকধারীর গুলিতে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত, অপরজন হাসপাতালে

        মমতা বাংলাদেশিদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত খুলে রেখেছেন: অমিত শাহ

        ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতিতে হতাশা বাড়ছে

        যুক্তরাজ্যের নাগরিকের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি রপ্তানির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

        শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৮০০০ পাতার অভিযোগ

        ইরানকে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র

        বিসিআই-এর আয়োজনে রিভারসাইড কাউন্টির পেরিস শহরে বাৎসরিক বৈশাখী মেলা ২০২৫

        পিএসজির ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে প্যারিসে আনন্দের বন্যা

        প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নজরুল রক কনসার্ট’

        আজ নয় আগামীকাল নতুন টাকা পাবেন গ্রাহকরা

        সিলেটে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি

        ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব

আমেরিকায় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধি

আমেরিকায় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সাফল্যে অটোমোবাইল শিল্পের বড় অবদান ছিল, যা লক্ষ লক্ষ ট্যাঙ্ক, ট্রাক ও জিপ তৈরি করেছিল। দীর্ঘ দিনের অসঙ্গতিপূর্ণ বাণিজ্যের কারণে এই শিল্প দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন আমেরিকা সম্পূর্ণ গাড়ি তৈরি করে না, বরং বিদেশে তৈরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এনে এখানে জোড়া লাগায়। অটোমোবাইল শিল্পকে শক্তিশালী করতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন বিদেশে তৈরি গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর। এই নতুন শুল্ক নীতির ফলে গাড়ি নির্মাতারা ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আমেরিকায় তৈরি করতে আগ্রহী হবে।  

প্রতি বছর আমেরিকানরা প্রায় ১৬ মিলিয়ন যাত্রীবাহী গাড়ি, এসইউভি ও ট্রাক কেনে। এর মধ্যে প্রায় ৮ মিলিয়ন গাড়ি আমদানি করা হয়, মূলত জার্মানি, জাপান, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। বাকি ৮ মিলিয়ন গাড়ি আমেরিকায় সংযোজন করা হলেও, তাদের মাত্র ৫০ শতাংশ দেশেই তৈরি হয়। এর অর্থ হল আমেরিকানরা যে গাড়ি কেনে, তার মোট মূল্যর মাত্র ২৫ শতাংশ আসলে দেশীয় উৎপাদনকে সমর্থন করে। বাকি অর্থ বিদেশি যন্ত্রাংশ ও শ্রমের জন্য ব্যয় হয়।

আমেরিকার এক সময়ের শক্তিশালী অটোমোবাইল শিল্প কেন দুর্বল হয়ে পড়লো? এর কারণ- অন্য দেশগুলো অন্যায্য বাণিজ্য নীতি ও লুণ্ঠনমূলক শিল্পনীতি ব্যবহার করে। তারা সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে সস্তায় গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমেরিকার বাজারে পাঠায়, অথচ নিজেদের বাজারে আমেরিকান গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ- জার্মানি আমদানিকৃত গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে, যা আমেরিকার ২ দশমিক ৫ শতাংশের শুল্কের চার গুণ। তারা রপ্তানির জন্য বড় ভর্তুকি দেয়, কর ছাড় দেয় এবং নানা ধরনের কারিগরি বাধা সৃষ্টি করে। উদ্ভট নিরাপত্তা মানদণ্ড তৈরি করে এমনভাবে শর্ত বসায়, যাতে আমেরিকান গাড়িগুলো বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে, জার্মানি আমেরিকায় যে পরিমাণ গাড়ি রপ্তানি করে, আমেরিকা তার ছয় ভাগের এক ভাগও জার্মানিতে পাঠাতে পারে না।

আবার জাপানে গাড়ির শুল্ক কম হলেও সমস্যা তা নয়। তাদের বাজার বিদেশি গাড়ির জন্য কঠিন নিয়মের মাধ্যমে প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছে। যেমন- আমেরিকান গাড়িগুলোকে হুড ইমপ্যাক্ট টেস্ট পাস করতে হয়- একটি বিশেষ নিরাপত্তা পরীক্ষা যেখানে হুডের এমনভাবে বিকৃত হতে হবে, যাতে এটি মানুষের মাথার আঘাত শোষণ করতে পারে। এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে গাড়ি জাপানে বিক্রি করা যায় না। ফলে, জাপানে বিক্রি হওয়া ৯৫ শতাংশ গাড়িই দেশীয়ভাবে তৈরি।

জার্মানি ও জাপান শুধু গাড়ি তৈরি করেই ক্ষান্ত নয়, তারা গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন ও ড্রাইভট্রেন তৈরি করে। এই অংশগুলো সবচেয়ে লাভজনক ও সেগুলোতে সবচেয়ে ভালো বেতন পাওয়া যায় এমন কারখানার কাজও পাওয়া যায়। পাওয়ার ট্রেন তৈরি করতে বিশেষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দরকার, তাই এর জন্য কাজের মজুরি সাধারণত গাড়ি সংযোজন কারখানার তুলনায় ১০-২০ শতাংশ বেশি এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমেরিকা তার বিক্রি করা গাড়ির জন্য ২০ শতাংশেরও কম ইঞ্জিন তৈরি করে, কিন্তু জার্মানি ও জাপান মিলেই আমেরিকার রাস্তায় চলা গাড়ির বেশিরভাগ ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশন তৈরি করে। যেমন- সাউথ ক্যারোলিনার বিএমডব্লিউ প্ল্যান্টে গ্লোবাল রপ্তানির জন্য এসইউভি গাড়ি তৈরি হলেও তাদের ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন জার্মানি ও অস্ট্রিয়া থেকে আসে। মার্সিডিজ-বেঞ্জও আলাবামায় একইভাবে কাজ করে। এগুলো আসলে আমেরিকান-মেড গাড়ি নয়, বরং জার্মান-ডিজাইন করা গাড়ি যা কম মজুরির আমেরিকান শ্রমিকদের দ্বারা সংযোজিত হয়। ইন্ডিয়ানায়, সুবারু আউটব্যাক ও অ্যাসেন্ট গাড়ি সংযোজন করলেও তাদের ইঞ্জিনগুলি জাপান থেকে আমদানি করা হয়।

টয়োটা ও হোন্ডা বেশি মার্কিন উপকরণ ব্যবহার করলেও তারা এখনও জাপানি পাওয়ারট্রেনের উপর অনেক নির্ভরশীল। ডেট্রয়টের বড় গাড়ি প্রস্তুতকারকরা তাদের গাড়ির মূল অংশ বিদেশে তৈরি করছে। ফর্ডের যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ির অর্ধেকেরও বেশি মেক্সিকান ইঞ্জিন ব্যবহার করে। স্টেলান্টিস বেশ কিছু ইঞ্জিন ইতালি ও মেক্সিকো থেকে সংগ্রহ করে এবং জার্মান ভিত্তিক জেডএফ ফ্রিডরিখশাফেন এজি থেকে ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে। জেনারেল মোটরস, যদিও কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ, তবুও মেক্সিকো, অস্ট্রিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি নির্ভর।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি এই পরিস্থিতি বদলানোর কথা ছিল। কিন্তু, বাইডেন প্রশাসনের শিথিল কার্যকরী নীতির কারণে মেক্সিকো নতুন মিশিগানে পরিণত হয়েছে। এখন মেক্সিকোর বিভিন্ন শহরে মোটর সিটি ডায়াসপোরা গড়ে উঠেছে - পুয়েবলায় ফোক্সওয়াগেন ও অডি, রামোস অরিজপে-এ জেনারেল মোটরস ও স্টেলান্টিস, হারমোসিলো-এ ফরড, আগুয়াসকালিয়েন্টেসে নিসান ও মের্সিডিজ-বেঞ্জ।

গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে শুল্ক বাড়িয়ে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই হুমকিকে মোকাবেলা করছেন। তিনি জানেন, পাওয়ারট্রেন ডিজাইন ও  উৎপাদন শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ নয় - এটি একটি কৌশলগত সক্ষমতা। যদি আমেরিকা এটি হারিয়ে ফেলে, তবে শুধু ভাল কাজ হারাবে না, বরং সেই শিল্প শক্তিও হারাবে যা জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন।

অনেকেই মনে করছেন, এটি সুরক্ষাবাদী নীতি নয়। এটি পুনঃস্থাপন, বোল্ট থেকে বডি পর্যন্ত পূর্ণ-প্যাটার্ন উৎপাদনের পুনঃস্থাপন। এটি উচ্চ মজুরি ও উচ্চ দক্ষতার কাজের পুনঃস্থাপন এবং আমেরিকার 'আর্সেনাল অফ ডেমোক্রেসির পুনঃস্থাপন।

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত