ভুলভাবে বিতাড়িত অভিবাসীর মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনকে আদালতের সতর্কবার্তা
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেছেন যে, তারা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে আদালতের আদেশ অমান্যের অভিযোগে পড়তে হতে পারে। এই মন্তব্য করা হয়েছে মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা ও স্যালভাডরের নাগরিক কিলমার আব্রেগো গার্সিয়াকে নিয়ে চলমান একটি বিতর্কিত মামলায়, যাকে গত মাসে ভুলভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বিচারক পলা জিনিস (Paula Xinis) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, "রেকর্ডে যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো এখনো পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি। কিছুই না।"
তিনি আরও বলেন, "ছুটি বাতিল করুন, অন্যান্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করুন। আমি চাই সবাই পুরোপুরি এই কাজে মনোনিবেশ করুক।"
বিচারক জানিয়েছেন, ২৩ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ইমিগ্রেশন বিভাগের চার কর্মকর্তাকে শপথের অধীনে আদালতে জবাবদিহি করতে হবে।
কী ঘটেছে?
২৯ বছর বয়সী কিলমার আব্রেগো গার্সিয়াকে গত ১৫ মার্চ স্যালভাডরের একটি ‘মেগা-প্রিজনে’ পাঠানো হয়। অথচ ২০১৯ সালের একটি আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, গার্সিয়াকে স্যালভাডরে ফেরত পাঠানো যাবে না, কারণ তিনি সেখানে গ্যাংদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতে পারেন।
এই মাসের শুরুতে মার্কিন সরকার স্বীকার করে নেয়, তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে "প্রশাসনিক ত্রুটির" কারণে। তবে হোয়াইট হাউজের উপপ্রধান স্টিফেন মিলার এই দাবি নাকচ করে বলেন,
"কেউ ভুল করে কোথাও বিতাড়িত হয়নি। শুধু একটি আইনি নথিতে ভুলভাবে একটি লাইন লেখা হয়েছিল, এবং সেটি সংশোধন করা হয়েছে।"
গার্সিয়ার স্ত্রীর আবেগঘন আবেদন
গার্সিয়ার স্ত্রী জেনিফার ভাসকেজ সুরা মঙ্গলবার এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, "আমি ট্রাম্প প্রশাসন এবং বুকেল প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, কিলমারের জীবন নিয়ে আর রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করুন।"
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও দ্বন্দ্ব
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানায়, সরকারের স্বীকৃতি অনুযায়ী গার্সিয়ার বিতাড়ন "অবৈধ" ছিল এবং প্রশাসনকে তার ফিরে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে স্যালভাডরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেল হোয়াইট হাউজ সফরে এসে বলেন, "আমি ব্যক্তিগতভাবে গার্সিয়াকে ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা রাখি না।"
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, গার্সিয়া যদি নিজে থেকে কোনো বন্দরে এসে আত্মসমর্পণ করেন, তবে তার ফিরে আসার প্রক্রিয়া ‘সহজতর’ হবে। কিন্তু অন্যদিকে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানায়, গার্সিয়া ফিরে এলে তাকে আটক করা হবে এবং হয় তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো হবে অথবা তার পূর্বের আইনি সুরক্ষা তুলে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েন
গার্সিয়া ছিলেন ২০০ জন ভেনেজুয়েলান ও স্যালভাডরের মধ্যে একজন, যাদের ট্রাম্প প্রশাসন গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে স্যালভাডরে বিতাড়িত করেছে।
গার্সিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেছেন, তিনি কখনো কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হননি এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্যাং সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই।
মেরিল্যান্ডের সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন জানিয়েছেন, তিনি গার্সিয়ার খোঁজ নিতে বুধবার স্যালভাডর যাচ্ছেন এবং তাঁর মুক্তির আহ্বান জানাবেন।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন