আপডেট :

        সমুদ্র বাণিজ্যে নতুন ফি: বন্দরে অতিরিক্ত খরচের ঘোষণা

        বাংলাদেশী শর্ট ফিল্ম 'নিশি'র EMA জয়

        মিরাজের প্রশংসা: বাংলাদেশ দলের খেলায় রয়েছে সম্ভাবনা

        পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শাহবাগ ব্লকেড: ভাতা বৃদ্ধি ও জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা অটল

        গাজায় স্থায়ী শান্তির পথে: ট্রাম্প দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেন

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট

        ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা: আহত ৫ জন হাসপাতালে

        প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রেডিয়েশন থেরাপি চলছে

        টেনেসিতে বিস্ফোরক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ: ১৬ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা, কেউ বেঁচে নেই

        মিসিসিপিতে ফুটবল খেলার পর গণগুলি: নিহত ৪, আহত ১২

        পুতিনের মন্তব্য: ট্রাম্প বঞ্চিত হওয়ায় নোবেল পুরস্কারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ

        সমুদ্রের তলায় ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক হুমকি

        ইশরাক হোসেনের জীবনের নতুন অধ্যায়: কে তিনি বিয়ে করছেন?

        জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য রাখতে হবে ১ হাজার টাকার মধ্যে

        চুয়েটের ‘টিম এসরো’ নাসার গ্লোবাল স্পেস চ্যালেঞ্জ ২০২৫-এর বিশ্বজয়ী

        নির্বাচনের ফেব্রুয়ারি তাং নিয়ে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস: মন্তব্য

        সিরিজে রশিদের স্পিনে বাঙালিরা হেরেছে

        আসল নকল মিলছে? আপনার ফোন নকল কিনা জানতে এই উপায়গুলো অনুসরণ করুন

        হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ১ থেকে ৩৮

        দারুল উলুম দেওবন্দ পরিদর্শনে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উষ্ণ অভ্যর্থনা

মোদীর সফরে শুধু মাদরাসা বন্ধ রাখার নির্দেশ কেন?

মোদীর সফরে শুধু মাদরাসা বন্ধ রাখার নির্দেশ কেন?

গতকাল বিশ্ব মিডিয়ার চোখ ছিল বাংলাদেশের দিকে নিবদ্ধ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের

দ্বিতীয় ও শেষ দিন হিসেবে দিনটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তো ছিলই, পাশাপাশি বাংলাদেশের ইসলামী

শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গনে সরকারী একটি নির্দেশ ছিল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। যখন ঢাকা ছিল

মিডিয়ার ফোকাল পয়েন্ট তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে যুক্ত একটি সংবাদ আন্তর্জাতিক

মিডিয়ায় কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে তা ভেবে সচেতন জনগণ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। এ

দিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্টেডিয়াম এলাকার

একটি মাদরাসা বন্ধে সরকারের নির্দেশ প্রদানের সংবাদ যা ছিল বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশে কোন

অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাব্য জায়গা হিসাবে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মাদরাসাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে

চিহ্নিত করার এক অনভিপ্রেত কাজ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি জেনে বুঝেই এসময়ে এ কাজটি করেছে,

না এটি কাকতালীয় তা বলা মুশকিল হলেও কাজটি যে তারা খুব খারাপ করেছে এতে কোন সন্দেহ

নেই। সংবাদটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচ চলাকালে আগামী ১০ থেকে ১৬ জুন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন রওজাতুল সালেহীন আলিম

মাদরাসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে এ মর্মে একটি চিঠি

পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুস শাকুর। ফতুল্লার এ স্টেডিয়ামে

২০০৬ সালে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪

সালে এখানে এশিয়া কাপের ৫টি ওয়ানডে ম্যাচসহ মোট ১০টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

মাওলানা আবদুস শাকুর মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, গত বছরও এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ

অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তখন মাদরাসা যথারীতি খোলা ছিল। এবারই প্রথম মাদরাসা বন্ধ রাখার

নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোথাও যাওয়ার ব্যবস্থা নেই বলে ২৫ জন অসহায় এতিমকে ডরমেটরিতে

থাকার মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। শিশু শ্রেণী থেকে আলিম পর্যায় পর্যন্ত ৭০০ ছাত্র এ

মাদরাসাটিতে পড়ালেখা করে। শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলছে। ১৬

জুন পরীক্ষা শেষ হবে। এখন মাদরাসা বন্ধ রাখলে এসব পরীক্ষার্থী সমস্যায় পড়বে। এরপরই আসছে

রমজান। বিশেষ করে ১০ থেকে ১৪ জুনের পরীক্ষাগুলো নিয়েই শিক্ষার্থীরা মহাবিপদে পড়বে। আজ

সোমবার মাদরাসা গভর্নিং বডির মিটিংয়ে সব বিষয়ে কথাবার্তা ও সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) হোসেন ইমাম সংবাদসংস্থা

এএফপিকে জানিয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা হিসাবেই

মাদরাসাটি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচের বিতর্ককে মাথায় রেখেই এ সিদ্ধান্ত

নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। খেলা চলাকালীন মাঠে কাউকে ভারতবিরোধী ব্যানার বা ফেস্টুন নিয়ে

ঢুকতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।একটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলতে ৮ জুন ঢাকায়

আসছে ভারতীয় টিম। প্রথম টেস্ট শুরু হবে ১০ জুন ফতুল্লায়, চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। যদি কর্তৃপক্ষ

মনে করে যে, বিভিন্ন কারণে ভারতীয় টিমের নিরাপত্তা বিষয়ে এবার অধিক যতœ নিতে হবে তাহলে

তারা গোটা স্টেডিয়াম এলাকায়ই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে পারত। বিশেষ কারণে কোন কোন

এলাকায় জনগণের চলাচল সীমিত করার নিয়ম তো রয়েছেই। প্রয়োজনে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা

কর্তৃপক্ষ স্টেডিয়াম এলাকার বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ইত্যাদি

সবক্ষেত্রেই বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। কিন্তু বিশেষভাবে একটি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা

মাদরাসাকে কোন কারণ ছাড়াই চিহ্নিত করে ৭০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিঘিœত করে, প্রতিষ্ঠান

বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান কি যথেষ্ট একদেশদর্শী নয়? যেখানে দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষা

প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বদনাম করা এবং ধর্মীয় কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের সমাজে

হেয়প্রতিপন্ন করার একটা সূক্ষ্ম প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেখানে ঢাকার প্রতি বিশ্ব মিডিয়ার সজাগ

দৃষ্টির এ সময়ে মাদরাসা বন্ধ রাখার এ নির্দেশ ও মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা যে বাংলাদেশের

ইমেজকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সাধারণ শান্তি-নিরাপত্তার জন্য সারাবিশ্বে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। এ দেশে

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যে মুহূর্তে তার ধর্মীয় পরিচয় ও প্র্যাকটিস নিয়ে চোখে পড়ার মত বৈশিষ্ট্যম-িত

সফর করে গেলেন সেখানে অতীতের কোন বিতর্কিত খেলা কিংবা অন্য যে কোন কারণকে সামনে

এনে ভারতীয় টিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মাদরাসা বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার,

প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি বিশ্ববাসীকে এ বার্তাটিই দিয়ে দিচ্ছে না যে মাদরাসাই হচ্ছে

বাংলাদেশের সন্দেহভাজন জায়গা যেখান থেকে কারো নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে? এর আগে

মাদরাসাকে জঙ্গী প্রজননকেন্দ্র বলে একজন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিরস্কৃত হয়ে পরবর্তীতে মন্ত্রিসভা

থেকে বাদ পড়ে। প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে ধর্মপ্রাণ

নাগরিক সমাজে প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একাধিকবার বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে কোন

মাদরাসাকে জঙ্গী বা সন্ত্রাসী কাজের সাথে যেন সম্পর্কিত করা না হয়। কোন ছাত্র, শিক্ষক, আলেম

ও ইমাম যেন অন্যায় হয়রানির শিকার না হন। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন, পুলিশ ও ক্রিকেট বোর্ডের 

কর্তাদের এ সিদ্ধান্ত ও প্রপাগা-া কি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে খাপ খায়? সারাবিশ্বে বাংলাদেশের

যে শান্তিপ্রিয় ও সম্প্রীতিশীল ভাবমর্যাদা গোটা জাতি ব্যাপক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কঠোর সাধনার

মাধ্যমে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে, সর্বশেষ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর এবং বেশকিছু যুগান্তকারী

সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশকে বিশ্ব দেখছে মাদরাসা বন্ধের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত তার মধ্যে

একদলা কাদা ছিটিয়ে দেয়ার মত ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি দেশ ও জনগণের ইমেজ ধূলোয়

মিশিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা এবং নিরীহ মাদরাসা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অনাথ, এতিম ও ধর্মীয় শিক্ষারত

শিশু-কিশোরদের প্রতি এক চরম মানহানিকর আর অমানবিক আচরণও বটে। আমরা এ তৎপরতার

তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি, সরকার অবিলম্বে মাদরাসা বন্ধের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেবে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত